1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অল্প বৃষ্টিতেও কেন ডুবে যায় ঢাকা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ জুলাই ২০১৯

এবছর জুন-জুলাই মাসে ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতই হয়েছে৷ বরং চলতি বছরের জুন মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল গত বছরের তুলনায় কম৷

https://p.dw.com/p/3MpiO
Bangladesch water logging at Dhaka, Chittagong
ছবি: bdnews24.com

সাধারণভাবে ৪০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি না হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু এখন সাধারণ বৃষ্টিতেই ডুবে যায় দেড় কোটির বেশি মানুষের ঢাকা শহর৷ সৃষ্টি হয় ভোগান্তির৷ কী এর কারণ?

গত ১২ জুলাই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় ঢাকার অধিকাংশ এলাকা৷ নিচু এলাকাতো বটেই  বঙ্গবভন, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট এলাকাও চলে যায় পানির নিচে৷ আবাহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ওইদিন ঢাকায় ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৮১ মিলিমিটার৷ বৃষ্টিপাতের ফলে তৈরি হওয়া এ জলাবদ্ধতা ছয়-সাত ঘন্টা স্থায়ী হয়ছিল৷ তবে ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় নগরবাসী পানিবন্দি হয়ে ঘরে কাটিয়েছেন৷ কিন্তু নগরবাসী ঘরে থাকলেও পানিতো তার স্বভাব-ধর্মে ঢুকে পড়ে বাড়ি ঘরেও৷ বাংলামটর, শান্তিনগর,  ইস্কাটন, মগবাজার, কারওয়ান বাজারের মত এলাকায় অনেক বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে গিয়েছিল বলে জানা গেছে৷ আর মিরপুরেতো কথাই নেই৷ মোহাম্মদপুর এলাকেতেও একই অবস্থা৷ ঢাকা শহরের নিচু এলাকাগুলো যেমন, রামপুরা, বাড্ডার মত এলাকাতো বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার শিকার হয়৷ জুলাই মাসের ওই দিনই হয়েছিলো সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত৷ তার পরের দিন অর্থাৎ ১৩ জুলাই ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ ফলে জলজটে নগরবাসী দুর্ভোগে ছিলেন টানা দুই দিন৷ 

অতীতের পর্যবেক্ষণ বলছে, সাধারণত ৪০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়না৷ ১২ জুলাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল তার দ্বিগুণ৷ আর পর পর দুই দিনে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪৭ মিলিমিটার৷

এবছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে: মো. ওমর ফারুক

তবে অতীতের এ পর্যবেক্ষণ আর মিলছে না৷অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকায় এখন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়৷ আর চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী৷  

যদি শুক্রবারের (২৬ জুলাই) কথা ধরি তাহলে তার প্রমাণ মেলে৷ সোমবার ২৪ ঘন্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৩১ মিলিমিটার৷ এদিনও ছিল শুক্রবার৷ যে কারণে, দুর্ভোগ এড়িয়ে যেতে পেরেছেন নগরবাসীর অনেকেই৷ কিন্তু সাধারণ দুর্ভোগতো ছিলই৷  একইভাবে ৮ জুলাই, ১১ জুলাই ও ১৪ জুলাই ২০ থেকে ৩৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ এই বৃষ্টিতেও পানি জমে গিয়েছিল ঢাকার রাস্তায়৷

ফলে একদিকে যেমন বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যায় অন্যদিকে রাস্তায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে৷ যে কারণে ঘরে-বাইরে দু'দিকেই নগরবাসীকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ৷

ঢাকায় এবার জুন মাসে মোট ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় কম৷ গতবছর জুন মাসে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০৮ মিলিমিটার৷ আর গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৫৭ মিলিমিটার৷ চলতি জুলাইয়ের ২৬ দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার৷

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক ডয়চে ভলেকে বলেন, ‘‘জুন-জুলাই মাসে এরমকই বৃষ্টিপাত হয়৷ আমাদের কাছে যে গড় রেকর্ড রয়েছে তাতে এটা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত৷ তবে আমরা  ঢাকায় বৃষ্টিপাতের হিসাব করি আগারগাঁও এলাকার হিসেবে৷ হয়তো ঢাকার অন্য এলাকায় এর চেয়ে কিছুটা কম-বেশি হতে পারে৷''

ঢাকা শহরের ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে: মোবাশ্বের হোসেন

তাহলে প্রশ্ন হলো একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকায় কেন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়? আর এর জবাবে যা জানা গেল তার মূল কথা হলো, ঢাকার বৃষ্টির পানি সহজে সরতে পারেনা৷ 

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামনে আরো বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে৷ ঘরে ঘরে পানি ঢুকবে৷কারণ উন্নয়নের নামে বিশেষ করে মেট্রোরেলের জন্য ঢাকা শহরের ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ পানি সরতে পারছেনা৷ আবার ড্রেন যা আছে তাও কার্যকর  নয়৷ বক্স কালভার্টের গভীরতা ছিলো নয় ফুট থেকে ১১ ফুট৷ এখন আছে দেড় ফুট থেকে দুই ফুট৷''

তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে ২৫ হাজার কি.মি. খোলা এবং চার হাজার কি.মি. ভূগর্ভস্থ ড্রেন আছে৷ ঢাকা ওয়াসার ৬৫ কিলোমিটার খোলা খাল ও বক্সকালভার্ট আছে৷ কিন্তু এসবের কিছুই তেমন কাজে আসেনা৷ এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাজধানীবাসীর বর্জ্য৷ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ছয় হাজার ১১০ টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য