1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অসচেতনতায় হারিয়ে যাচ্ছে ভারতের জীববৈচিত্র্য

২৩ এপ্রিল ২০১০

অজ্ঞতা ও অসচেতনতায় হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য৷ যদি এই প্রবণতা বন্ধ করা না যায়, তবে ২০২৫ সালের মধ্যে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে- এমনটাই আশংকা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের৷

https://p.dw.com/p/N42J
পরিবেশ বিপন্ন হওয়ায় এরকম অনেক পাখিই আজ বিপন্নছবি: AP

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে জাতিসংঘের শতাধিক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সামনে সর্বশেষ যে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয় সেখানে উল্লেখ রয়েছে, বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ দূষণের ফলে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে আগামী ২০৮০ সালের মধ্যে আফ্রিকা ও এশিয়ার ৩০০ কোটি মানুষ ভয়াবহ পানি ও খাদ্য সঙ্কটে পড়বে৷ এছাড়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছপালা ও প্রাণী রয়েছে সর্বোচ্চ হুমকির মুখে, যারা পৃথিবী হতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷ পাশাপাশি বলা হয়েছে, বিশ্বের তাপমাত্রা যদি ১ দশমিক ৫ হতে ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছপালা ও পশু পাখির জীবনের উপর ভয়াবহ ঝুঁকির আশঙ্কা বিদ্যমান৷ অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীতে গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড়ঝঞ্ঝা, খরা, বন্যা, বরফ গলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পানি সঙ্কট দেখা দিতে পারে৷ তথ্য অনুযায়ী যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ, তা হলো ২০৮০ সালের মধ্যে ১১০ থেকে ৩০০ কোটি মানুষ ভয়াবহ পানি সঙ্কটে পড়বে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হবে৷

ভারত বিশ্বের সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন অঞ্চলগুলির অন্যতম৷ দেশের রাজনৈতিক সীমানার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ ক্ষেত্র দেখা যায়; মরুভূমি, উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল, উচ্চভূমি, ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, সমভূমি, তৃণভূমি, নদী অববাহিকা ও দ্বীপপুঞ্জ৷ ভারতে তিনটি বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট দেখা যায়: পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, পূর্ব হিমালয় ও ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর প্রসারিত পার্বত্য অঞ্চল৷ এই হটস্পটগুলিতে অসংখ্য প্রজাতির দেখা মেলে৷

Andamanen und Nikobaren
ভারতের সমুদ্র উপকূলও এখন হুমকির মুখেছবি: AP

ভারতের পরিবেশ ক্ষেত্রগুলিতে বৃষ্টিপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, টোপোগ্রাফি ও অক্ষাংশের কারণে বিশেষ প্রকারের বৈচিত্র্য লক্ষিত হয়৷ ভারতের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ৷ ভারত ইন্দোমালয় জৈবভৌগোলিক ক্ষেত্রের একটি বৃহত্তর অংশ দখল করে আছে৷ তাই ভারতের বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর সঙ্গে মালয়দেশীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর একরূপতা পরিলক্ষিত হয়৷

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এখানে জীব পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা এত বেশি যে, আজ শুধু অবক্ষয়ের রাশ টেনে ধরলেই জীববিলুপ্তির গতি রোধ করা যাবে না৷ বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বশেষ কৌশলগুলো প্রয়োগ করে বিভিন্ন রকমের সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে৷

সম্প্রতি ভারতে এক গবেষণায় দেখা গেলো সেখানে প্রাণী বৈচিত্র্য মারাত্নকভাবে হুমকির শিকার৷ তাছাড়া কৃষিতে ব্যপকহারে কীটনাশক ব্যবহার, বন উজাড়, সমুদ্র ও নদী দূষণের কবলে পড়েছে উপমহাদেশের এই বড় দেশটি৷ সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর বসত ও আচরণ, পুরো বা অর্ধনিমজ্জিত উদ্ভিদের আশ্রয়, মাছের প্রজনন অভিবাসন, ঝাঁকে ঝাঁকে চলার অভ্যাস-সবকিছু বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এসেছে৷ তারা দেখতে পেয়েছেন, কিছু দূষণ জীবের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর, আর কিছু শরীরে জমে জমে, খাদ্য চেইনে গিয়ে শরীরবৃত্তকে কাবু করে ফেলছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম৷ উভয়ের একই ফল-ভয়াবহ রকমের জীববিলুপ্তি৷ খাঁড়ি ম্যানগ্রোভ আর প্রবাল গঠনগুলোয় তাই এখন চলছে জীববৈচিত্র্যের বেঁচে থাকার লড়াই৷

এখনই যদি বিশ্ব জনমত, মানুষের আচরণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্যোগের সঠিক সক্রিয়তা না ঘটে, তাহলে জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যতও নিশ্চিতভাবে বিপন্ন হবে৷

প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম