1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যামেরিকায়ও বাকস্বাধীনতা নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ মে ২০২০

বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পুরোপুরি বহাল আছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন৷

https://p.dw.com/p/3bwTD
AK Abdul Momen, Außenminister von Bangladesch
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিদেশিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাক স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে৷’’

করোনার সময়ে বাকস্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে সাত দেশের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপ্যিাল ডেপুটি অ্যাসিস্যান্ট সেক্রেটারি ও বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে তিনি ডয়চে ভেলেকে এসব কথা বলেন৷

শুক্রবার তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেন তাদের দেশে কি এসব আছে? অ্যামেরিকায়ও তো বাকস্বাধীনতা নাই৷ তাদের দেশ নিয়ে সেই দেশে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলতে পারবে?’’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘ওইসব দেশের উচিত কোভিড ১৯ নিয়ে আগামী ছয় মাসে তারা যে সহায়তা করতে পারেন, তা নিয়ে কথা বলা৷ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের যারা আছেন, তাদের কিভাবে সহায়তা করবেন এগুলো নিয়ে তারা প্রোগ্রাম করলে আমরা কথা বলতে পারি৷ ওই লোকগুলো যাতে না খেয়ে না মরে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অ্যামেরিকার কথা বলছেন, ওইসব দেশেও তো বাকস্বাধীনতা নাই৷ আপনি প্রশ্ন করলে ওরা তো আপনাকে কাট করে দেবে৷ ওরা হয়ত টিভি স্টেশন বন্ধ করবে না৷ কিন্তু যা চার্জ করবে, তাতে আপনি টিকে থাকতে পারবেন না৷’’

তার মতে, ‘‘বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়নি৷ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ বাংলাদেশ মুক্তভাবে কথা বলার একটি দেশ৷ এখানে যা খুশি লেখা যায়৷ এখানে মিথ্যা কথা বললেও কোনো শাস্তি হয় না৷ যারা বিবৃতি দিচ্ছেন. তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে৷’’

মিথ্যা বললে এখন শাস্তি কিছু হওয়া উচিত: পররাষ্ট্র মন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘বিদেশি রাষ্ট্রগুলো যদি আমাদের প্রবাসীদের নিয়ে এবং পোশাক খাত নিয়ে কোনো সহযোগিতা করতে চান তাহলে, তাদের সাথে আলোচনা করতে রাজি আছি৷ আর বাংলাদেশ নিয়ে কোনো উদ্বেগের বিষয় থাকলে তারা ডিপ্লোম্যাটিক প্রটোকলের মাধ্যমে জানাতে পারেন৷ এভাবে জটলা করে পাবলিক স্টেটমেন্ট দেয়া কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না৷ তারা কেন এটা করছেন তা অনুসন্ধান করে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘গ্রামের মহিলা গরিব হলে সবাই তার স্বামী৷ আমাদের হয়েছে সেই অবস্থা৷ অ্যামেরিকার রাষ্ট্রদূত বলতে পারবে অ্যামেরিকায় বাকস্বাধীনতা নেই? তাকে তো দেশ থেকে বের করে দেবে৷ আপনারা (সাংবাদিকরা) তাদের কথা প্রচার করেন বলেই তারা বলে৷ প্রচার বন্ধ করে দেন, দেখবেন আর বলবে না৷ ‘নন ইস্যু’কে ইস্যু করা হচ্ছে৷ এটা করবেন না৷’’
 

রাষ্ট্রদূতরা যা বলেছেন
অ্যামেরিকা ও ইউরোপের সাত দেশের রাষ্ট্রদূতরা টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে রাখার প্রয়াস নিলে তার ফল ভালো হবে না৷ এই সমস্যাসংকুল সময়ে বাকস্বাধীনতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ ফেক নিউজ বড় ধরনের সমস্যা হলেও সাংবাদিকদের স্বাধীন ও মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে৷ জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নির্ভরযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রয়োজন৷’’

আলাদা আলাদা টুইট বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, ইইউ'র রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভেরওয়েজ, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ডিকসন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোট স্লাইটার ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসন৷ আর্ল মিলার বলেছেন, ‘‘সঠিকভাবে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মুক্ত ও স্বাধীন মিডিয়া নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য পরিবেশন করতে পারে, সেটি অত্যন্ত গুত্বপূর্ণ৷ কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখা এবং সাংবাদিকদের ঠিকমতো কাজ করতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি৷’’
 

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ
এদিকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে বাংলাদেশে নতুন গ্রেপ্তারের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস একটা টুইট করেছেন৷ বাংলাদেশের মানুষ যেন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
 

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি
বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদ সাংবাকিদকদের গ্রেপ্তার, মামলা ও ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে,‘‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দমনের অস্ত্র হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার হতে পারে এই আশঙ্কায় একদম শুরু থেকেই সম্পাদক পরিষদ এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে৷ আমাদের সেই শঙ্কা এখন গণমাধ্যমের জন্য দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক এই মামলাগুলোয় সাংবাদিকদের অভিযুক্ত ও তাদের গ্রেপ্তার করা সংবাদ মাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্য হুমকি৷ আমরা অনতিবিলম্বে সব সাংবাদিকের মুক্তি ও তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই৷’’

সাংবাদিক হেনস্তা করতে ডিজিটাল আইন ব্যবহার হচ্ছে: নঈম

সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদক পরিষদের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘‘সর্বশেষ একজন ফটো সাংবাদিককে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে যেভাবে কারাগারে নেয়া হলো তাতে আমরা উদ্বিগ্ন৷ পুলিশ প্রশাসনই তো ত্রাণ চোরদের ধরছে৷ তাহলে আমরা সেই খবর পরিবেশন কেন করতে পারবো না?  সাংবাদিকদের হেনস্তা করতে ডিজিটাল আইন ব্যবহার করা হচ্ছে৷ মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করছি৷ এটাকে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে৷’’

মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন, ‘‘এই সময়ে চাল চুরি, তেল চুরির ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ, তার বহিপ্রকাশ আমরা মাধারণ মানুষের মধ্যে দেখছি৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর প্রকাশ ঘটছে৷ সংবাদমাধ্যম তা প্রকাশ করছে৷ এটা যাতে প্রকাশ না হয় তাই মামলা দিয়ে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে৷ আর বিদেশিরাও তা লক্ষ্য করছেন৷ তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তা যথার্থ৷ এই দমন বন্ধ না হলে বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা তৈরি হবে৷’’

আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, ‘‘একজন কার্টুনিস্টকে প্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে সারা বিশ্বেই কার্টুনের ব্যবহার আছে৷ যীশু, পোপকে নিয়েও কার্টুন হয়েছে৷ তাই কোনো কার্টুন যদি সত্যিকারভাবে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে, তাহলে কার্টুনিস্টকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে৷ সমাজের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরা, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করাই তো সাংবাদিকদের কাজ৷ এটা তার সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার৷’’ কিন্তু তিনি মনে করেন, ‘‘ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন আছে৷ তবে বাক স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করে এই আইনের যেসব ধারা, সেইগুলো বাতিল করা উচিত৷’’

উদ্বেগ প্রকাশ করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের দেয়া বিবৃতিকে ঢাকার ডিপ্লোম্যাটিক কালচারেরই অংশ এবং এটাকে অপ্রত্যাশিত বলে মনে করেন না সাবেক পরাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটাল আইনের প্রয়োগ নিয়ে আমরা তো উদ্বেগ দেখছি৷ আজকাল খুবই ছোটখাটো বিষয়েও মামলা হয়ে যাচ্ছে৷ যার মানহানি হয়, সে মামলা করতে পারে৷ কিন্তু দেখছি যার মানহানি হয় সে মামলা করে না, করে অন্যরা৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘এই আইনটি নিয়ে সাংবাদিকদের আরো জোরেশোরে কথা বলা উচিত৷ তারা আন্দোলন করতে পারেন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য