1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক ভারতীয় হত্যা

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৬ মার্চ ২০১৭

কানসাস, সাউথ ক্যারোলাইনার পর ওয়াশিংটনের কেন্ট৷ প্রতিটি হত্যার পেছনে ঘৃণ্য বর্ণবিদ্বেষ৷ ‘‌গ্লোবাল ভিলেজ'‌ গড়ার কথা যারা বলে, সেই দেশের নাগরিকদের মাঝে বর্ণবিদ্বেষের বিষ উঁকি দিচ্ছে৷ এতেই আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ভারত৷

https://p.dw.com/p/2Yh3i
Indien - Bestattung Srinivas Kuchibhotla Opfer der Kansas Schießerei
ছবি: picture- alliance/AP Photo/Mahesh Kumar A.

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যামেরিকায় ভারতীয়দের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ মাত্র ন'দিনের ব্যবধানে পরপর তিন ভারতীয়ের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে দেশটিতে৷

শুক্রবার ওয়াশিংটনের কেন্ট শহরে বাড়ির বাইরেই ভারতীয় দীপ রাইয়ের ওপর গুলি চালায় এক আততায়ী৷ এর আগে সেদেশে আততায়ীদের গুলিতে শ্রীনিবাস কুচিভোটলা এবং হার্নিশ পটেলের মৃত্যু হয়েছে৷ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন এই তৃতীয় ব্যক্তি৷ আততায়ীর ছোঁড়া গুলি তাঁর বাঁ-‌হাতে লেগেছেয৷ গুলি চালানোর আগে আততায়ী বারবার চিৎকার করে তাঁকে নিজের দেশে ফিরে যেতে বলছিল, ঠিক যেমনটা শ্রীনিবাসের সঙ্গেও হয়েছিল৷ তাই প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, ওই শিখ ব্যক্তিও বর্ণবিদ্বেষের শিকার৷ ৩৯ বছরের ওই ব্যক্তি বাড়ির বাইরে নিজের গাড়িতে কিছু কাজ করছিলেন৷ ঠিক সে সময়ই তাঁর সামনে আততায়ী চলে আসে৷ তার মুখের নীচের অংশ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল৷ আততায়ীর কিছু কটূক্তিতে শিখ ব্যক্তির সঙ্গে বচস বেধে যায়৷ তার পরই পকেট থেকে বন্দুক বের করে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়৷ গুলিটা তাঁর বাঁ হাতে লাগে৷ তিনি পুলিশকে জানান, আততায়ী তাঁর অপরিচিত৷ এর আগে কখনও এই এলাকায় তাকে দেখেননি৷ উচ্চতা ৬ ফুট৷ গুলি চালানোর সময় আততায়ী চিৎকার করে বলছিল, ‘‘নিজের দেশে ফিরে যাও৷''

যদিও বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন্ট পুলিশ৷ পুলিশ প্রধান কেন থমাস তদন্তের প্রয়োজনে এফবিআই এবং অন্যান্য ল'‌ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন৷ কেন্টের শিখ কমিউনিটির এক নেতা জসমিত সিংহ জানিয়েছেন, ‘‌‘‌এই ঘটনায় জখম ব্যক্তির পরিবার ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে৷ যথেষ্ট আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছেন তাঁরা৷'‌'‌ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের টুইটারে উঠে এসেছে গোটা ঘটনা৷

এই ঘটনার ঠিক একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার ৪৩ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী হার্নিশকে সাউথ ক্যারোলাইনার ল্যাঙ্কাস্টার কাউন্টিতে তাঁর বাড়ির কাছেই গুলি করে খুন করা হয়৷

তারও কয়েক দিন আগে কানসাসের একটি বারের মধ্যেই গুলি চালানো হয় ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাসের ওপর৷ অ্যামেরিকার সাম্প্রতিক এই নিন্দনীয় ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ভারত সরকার৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অ্যামেরিকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ বর্ণবিদ্বেষের কোনো ঘটনার খবর পেলেই দূতাবাসকে সজাগ করছেন৷ একইসঙ্গে মার্কিন সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি৷

অথচ অ্যামেরিকা ছিল শ্রীনির ভালোবাসার দেশ৷ ভালোবাসার দেশটাকে ছেড়ে আসতে চাননি তিনি৷ সে দেশে গিয়েই নিজের ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পেয়েছিলেন শ্রীনি৷ ‘‌‘‌ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখছিলেন শ্রীনি৷ প্রথমে মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ তারপর বিয়ে, পরিবার পরিকল্পনা৷ স্বপ্নের মতোই এগোচ্ছিল সবকিছু৷ আচমকা কয়েকটা বুলেট কেড়ে নিল তাঁর সব স্বপ্ন৷'‌'‌— টেক ফার্মে কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল সুনয়না দুমালার৷ তিনি কানসাসে নিহত ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্ত্রী৷ প্রায় এক দশক আগে হায়দরাবাদ থেকে অ্যামেরিকা গিয়েছিলেন কুচিভোটলা৷ স্বপ্ন একটাই, অ্যামেরিকান ইঞ্জিনিয়ার হবেন৷ টেক্সাসে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে গিয়ে সুনয়নার সঙ্গে আলাপ৷ ছ'বছর প্রেমের পর ভারতীয় প্রথা মেনেই বিয়ে৷ আর তার পর আর পাঁচজন মার্কিন দম্পতির মতোই সংসার গুছোনোর অধ্যায়৷ কানসাসেই পাকাপাকিভাবে থাকতে চেয়েছিলেন তাঁরা৷ তাই একটা বাড়িও কিনেছিলেন৷ আর সেই সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনাও চলছিল৷ তার মধ্যেই আচমকা এই ঘটনা৷ কানসাসের অস্টিনস বার অ্যান্ড গ্রিলে আচমকাই শ্রীনিবাস ও তাঁর বন্ধু অলোক মাদাসানির উপর হামলা চালায় অ্যাডাম পিউরিনটন৷ ৫২ বছরের এই মার্কিনি গুলি চালানোর আগে ‘‌‘আমাদের দেশ থেকে পালাও'‌' বলে শ্রীনিবাসদের হুমকি দিয়েছিল৷ পিউরিনটনকে বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে আহত হন আয়ান গ্রিলট নামে এক মার্কিন যুবকও৷ অস্ত্রোপচারের পর গ্রিলট এখন অনেকটাই সুস্থ৷ তাঁকে ‘হিরো' বলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকেই৷

Md Selim - MP3-Stereo

‌ভারত, বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তান – যে কোনো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের প্রতি মার্কিন সাধারণ নাগরিকদের মনে যে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছে, তার পেছনে আমেরিকায় চরম দক্ষিণপন্থার উত্থানকেই দায়ী করছেন সিপিআই (‌এম) সাংসদ মহম্মদ সেলিম৷ তিনি মনে করেন, দক্ষিনপন্থা ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রধান কাজই হলো, মানুষকে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া৷ সেলিমের কথায়, ‘‌‘‌অ্যামেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার গঠিত হওয়ার পর ‌মানুষের মনে ঘৃণার বীজ বপনের কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ ভারতেও বিজেপি এবং আরএসএস একই কাজ করে চলেছে৷ মুখ বুজে এসব সহ্য করলে এই ঘৃণার রাজনীতি একদিন পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে যাবে৷ কিন্তু, এই শক্তি কখনও সফল হতে পারবে না৷ কারণ, এমনটা চলতে থাকলে এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি বাধ্য হয়েই একজোট হতে শুরু করবে৷ মার্কিন দেশেও প্রগতিশীল মানুষজন ট্রাম্পের মদতে এই বর্ণবিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেবে না৷ এরপর ভারতের মেধা যদি অ্যামেরিকাকে প্রত্যাখ্যান করে তবে, সবচেয়ে ক্ষতি হবে অ্যামেরিকার৷'‌'‌

Sukhendusekhar Roy - MP3-Stereo

‌মার্কিন দেশে এই ভাবে ভারতীয় হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ ফেসবুক ও টুইটারে তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন৷ এই হত্যালীলা বন্ধ করতে ভারত সরকারের অবিলম্বে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷

‌তৃণমূল নেত্রী প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন৷ চুপ করে নেই তাঁর দলের সাংসদরাও৷ সংসদে তৃণমূলের রাজ্যসভার উপনেতা সুখেন্দুশেখর রায় পুরো ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, এই ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকলে উভয় দেশেরই ক্ষতি হবে৷ জাত, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ ভারত কখনোই মেনে নেয়নি৷ ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না৷ অ্যামেরিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‌‘‌যারা গোটা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়ে ‘‌গ্লোবাল ভিলেজ'‌ গড়ার কথা বলে আসছে, সেই অ্যামেরিকায় এমন ঘটনা আগে কখনও দেখা যায়নি৷ এ ধরনের অপরাধের সমূলে বিনাশ প্রয়োজন৷ এর জন্য কূটনৈতিক স্তরে ভারত-অ্যামেরিকার আলোচনাও জরুরি৷ আর তার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়োজন হতে পারে৷ ৯ মার্চ ভারতে সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে৷ সংসদে এই বিষয়টি তোলা হতে পারে৷ তৃণমূলের অন্দরে এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷'‌'‌‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য