1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইইএসে দ্বিতীয় কাশ্মীরের তনভির, পড়েছেন কলকাতায়

২ আগস্ট ২০২১

কাশ্মীরের গরিব কৃষক ও রিকশচালকের ছেলে তনভির আইইএসে দ্বিতীয় হলেন। কলকাতাতে এমফিল করেছেন তিনি।

https://p.dw.com/p/3yQ6d
কাশ্মীরে তনভিরের বাড়ি কুলগামের প্রত্যন্ত গ্রামে। ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa

বাবা বছরের বেশ কয়েক মাস অমৃতসরে এসে রিক্সা ও অটো চালান। চাষের সময়ে কাশ্মীরের কুলগামের প্রত্যন্ত গ্রাম নাগিনপোরা কুণ্ডে যান। জমি বেশ নেই। চাষ করে সারাবছর সংসার চলে না। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে কাশ্মীরের যুবক তনভির আহমেদ খানের বড় হয়ে ওঠা। সরকরি স্কুল থেকে পাস করা। তারপর অনন্তনাগে সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করা। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ। এরপর আর কাশ্মীরে থাকেননি। এমফিল করতে চলে এসেছেন কলকাতায়। এহেন তনভির এবার ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিসে(আইইএস) দ্বিতীয় হয়েছেন। কাশ্মীর থেকে এরকম সাফল্য এর আগে কেউ দেখাতে পারেননি।

তনভিরের পুরো জীবনে একটাই মন্ত্র ছিল, লড়াই করতে হবে। লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং পরিবারকে নিয়ে যেতে হবে স্বচ্ছলতার দিকে। তিনি বলেছেন, ''আমি ভয়ংকর পরিশ্রম করেছি। আমার পরিবার সমানে আমাকে সাহায্য করে গেছে। আমার বাবা, মা, কাকা, শিক্ষকরা সবসময় আমার পাশে থেকেছেন।'' তিনি জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পান। সেটা তাকে প্রচুর সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন তনভির।

আইইএসে দ্বিতীয় হওয়ার খবর পেয়ে তার বাবা, মা, পুরো পরিবার এসে তাকে জড়িয়ে ধরে শুধু কেঁদেছেন। আনন্দাশ্রু। গ্রামের সব মানুষ এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন।

আর তার রিক্সাচালক বাবা বলেছেন, ''আমি খুবই খুশি, আমার ও তনভিরের কঠোর পরিশ্রম সাফল্য পেল।'' মা বলেছেন, ''তনভিরের পরিশ্রম কাজে এসেছে। সে পরিশ্রমের ফল পেয়েছে।''

কলকাতার দিনগুলি

জেআরএফ পেয়ে তনভির কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে পড়তে আসেন। তারপর কলকাতা হয়ে ওঠে তার দ্বিতীয় ঘর। তনভির বলছেন, ''এই শহরের মানুষের, বিশেষ করে বন্ধু ও শিক্ষকদের ব্যবহার এত ভালো যে বলার নয়। ৩৭০ ধারা রদের পর দিনের পর দিন বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারিনি। তখন বন্ধু ও শিক্ষকরা পাশে দাঁড়িয়েছেন।'' তনভিরের গ্রামে ইন্টারনেট প্রায় কাজই করে না। সেলফোনেও যোগযোগ করতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। 

কেন কলকাতাকে বাছলেন? তনভিরের জবাব, ''কলকাতা থেকে প্রচুর অর্থনীতিবিদ উঠে এসেছেন। অমর্ত্য সেন, অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তালিকায় অনেকে আছেন। অর্থনীতি হলো তার বিষয়। তাই কলকাতাকে বেছে নেয়া।''

তনভিরের শিক্ষক শুভ্রনীল চৌধুরী বলেছেন, ''তনভির মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্র। ও পিএইচডি করে অধ্যাপনা জগতেও প্রচুর উন্নতি করতে পারত। শেখার তীব্র ইচ্ছে ছিল ওর মধ্যে। আর অঙ্কে খুবই ভালো তনভির।''

কাশ্মীরের যুবকদের প্রতি

তনভির জানিয়েছেন, কাশ্মীরের যুবকরা খুবই মেধাবী। কিন্তু তাদের একটু আউট অফ দ্য বক্স ভাবতে হবে। কেরিয়ারের বিকল্প পথ বাছতে হবে। চিরাচরিত কেরিয়ারের বাইরে যেতে হবে। তার পরামর্শ, কেউ চাকরির পরীক্ষা দিলে পরীক্ষার বিষয়টি অনলাইনে আগে ভালো করে জেনে নিতে হবে। তারপর সেই ভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। 

আপাতত একটা লড়াই শেষ। এবার নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত তনভির। ভারতের আর্থিক নীতি নির্ধারণে নিজের প্রতিভার ছাপ রাখার লড়াই।

জিএইচ/এসজি (নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ট্রিবিউন)