1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইএস জঙ্গিদের নিয়ে অনুষ্ঠান!

৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রতি সপ্তাহে একবার আইএস জঙ্গিরা ফিরে যান সেখানে, যেখানে তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল অসংখ্য মানুষ৷ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও থাকেন সেখানে৷ ক্রন্দনরত, ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীদের কাছে মাথা নত করে ক্ষমা চান জঙ্গিরা৷

https://p.dw.com/p/2sDuI
Symbolbild Deutsche Frauen beim IS
ছবি: picture-alliance/dpa

প্রতি শুক্রবার এমনই এক অনুষ্ঠান প্রচার করে ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘আল ইরাকিয়া'৷ বিষয় নির্বাচনে সাহসিকতা এবং উপস্থাপনার অভিনবত্বে অনুষ্ঠানটি এখন তুমুল জনপ্রিয়৷ উপস্থাপক আহমাদ হাসানের নামও এখন ইরাকিদের মুখে মুখে৷

কী দেখনো হয়?

‘আইনের অধীনে' নামের অনুষ্ঠানটিতে দেখানো হয় ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ইরাকের বিভিন্ন স্থানে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর চালানো নিষ্ঠুরতা৷ নিষ্ঠুরতা যারা চালিয়েছিলেন তারা থাকেন, ভুক্তভোগীরাও থাকেন অনুষ্ঠানে৷ ঘটনাস্থলে আইএস জঙ্গিদের সামনে দাঁড়িয়েই ভুক্তভোগীরা বলেন কী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাঁদের প্রিয়জনদের৷ উপস্থিত জঙ্গিরা মাথা নীচু করে কবুল করে নেন সমস্ত অপরাধ৷

এক মা তাঁর দুই ছেলে হারিয়েছেন৷ আইএস জঙ্গিরা হত্যা করেছে তাদের৷ হত্যাকারীদের মধ্যে তিনজন এখন ইরাকি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি৷ অনুষ্ঠানের এক পর্বে দুই সন্তান হারানো সেই মা হত্যাকারীদের কাছে জানতে চান, ‘‘আমার দুই ছেলে আহমাদ আর হাবিবকে কেন  তোমরা হত্যা করলে? ওরা তো তোমাদের বন্ধু ছিল! কখনো কি ওরা কোনো অন্যায় করেছে? কেন আমাদের পরিবারটিকে ধ্বংস করে দিলে?'' তিন জঙ্গি তখন নিরুত্তর৷ অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নুয়ে বসে থাকে তারা৷

আরেক মা আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছিলেন ঠিক কোন জায়গাটায় আইএস জঙ্গিরা তাঁর সন্তানের মাথায় গুলি চালিয়েছিল৷ সেই জঙ্গিদের চারজন এখন সেনাবাহিনীর কব্জায়৷ তাদেরও হতে হলো সন্তানহারা মায়ের মুখোমুখি৷ মা জানতে চাইলেন, ‘‘যে হাত দিয়ে তোমরা আমার সন্তানকে হত্যা করেছ, সেই হাত দিয়ে খাও কীভাবে?'' নিষ্ঠুর হত্যাকারীর মাথা আবার নুয়ে পড়ে৷

কেন এমন অনুষ্ঠান?

ইরাকে আপাতদৃষ্টিতে আইএস-এর চিহ্নও নেই৷ গত ডিসেম্বরে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জয় ঘোষণা করেছে বাগদাদ৷ এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কেন নিয়মিত প্রচার করা হয় এমন অনুষ্ঠান? অনুষ্ঠান সঞ্চালক আহমাদ হাসানের কথায় উঠে এলো রাজনৈতিক এবং দার্শনিক ব্যাখ্যা৷ তাঁর মতে, ‘‘আইএস সামরিকভাবে হেরেছে, তবে আদর্শগতভাবে তাদের অস্তিত্ব এখনো আছে৷ তাদের সমর্থকদের চোখে অন্যরা হচ্ছে ‘অবিশ্বাসী' এবং তাদের আদর্শ যতদিন আছে, ততদিন তারা হত্যা চালিয়েই যাবে৷'' তাই তিনি মনে করেন, ধর্মের নামে আইএস যে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, তা দেখিয়ে মানুষকে নিষ্ঠুরতার পথ পরিহার করতে উদ্বুদ্ধ করাই সমাজের জন্য কল্যাণকর৷

মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা এবং জবাব

ইতিমধ্যে ১৫০তম পর্বে পা দিয়েছে ‘আইনের অধীনে'৷ ইরাকে জনপ্রিয় হলেও একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অনুষ্ঠানটির সমালোচনা করেছে৷ সংস্থাগুলো মনে করে, হত্যাকারীদের কখনোই সরাসরি দেখানো উচিত নয়৷ আহমাদ হাসান অবশ্য তা মনে করেন না৷ ৩৬ বছর বয়সি টিভি সঞ্চালক বললেন, ‘‘আমরা কাউকে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য বাধ্য করি না৷ তাছাড়া আমরা তো এখনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতেই রয়েছি৷ এ পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদেরঅধিকার রক্ষার চেয়ে ভুক্তভোগীদের অধিকার রক্ষার গুরুত্বই বেশি৷''

প্রায় চার বছরের যুদ্ধে কয়েক হাজার আইএস জঙ্গিকে আটক করেছে ইরাকের সেনাবাহিনী৷ বিচার হচ্ছে তাদের৷ সে দেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, অংশগ্রহণকারী, এমনকি আর্থিক বা অন্যভাবে মদতকারীদেরও শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ গত এক বছরে শতাধিক আইএস জঙ্গির কার্যকর করেছে ইরাক৷

এসিবি/ডিজি (এএফপি, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান