1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগের বর্ণমালায় ফিরছে কাজাখস্তান

৬ জুলাই ২০১৯

আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মেলাতে নিজেদের বর্ণমালা পালটে ফেলছে কাজাখস্তান৷ সোভিয়েত ছায়াতল ছেড়ে আসা দেশটি ‘সিরিলিক’ ভুলে ‘লাতিন’ বর্ণমালা তৈরি করেছে৷ সাত বছরের চেষ্টায় ৩২টি বর্ণ নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বর্ণমালা৷

https://p.dw.com/p/3Lg3D
কাজাখস্তানের বর্ণমালাছবি: Grigory Kuzmishchev

লাতিনের হরফের পাশাপাশি নয়টি বর্ণ আছে, যা সম্পূর্ণ আলাদা৷ এগুলো কাজাখদের উচ্চারণের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে বর্ণমালায়৷

চেষ্টাটা সাত বছরের হলেও, বর্ণমালা রূপান্তরে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৭ সালে৷ ফরমান জারি করে সিরিলিক থেকে লাতিন বর্ণমালায় যাওয়ার কথা জানান তৎকালিন প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নজরবায়েভ৷

স্কুলের পাঠ্যবই, সাহিত্য, সরকারি নথি, সড়ক নির্দেশক- ২০২৫ সালের মধ্যে, দেশের সবকিছু লেখা হবে নতুন হরফে৷ কাজাখাস্তানের 'আধ্যাত্মিক আধুনিকায়নে' এই পরিবর্তনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশটির নতুন শাসক প্রেসিডেন্ট কাসিম-জমার্ট তোয়াকেভ৷ তাঁর মতে, বিশ্বের ৯০ ভাগ তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে লাতিন বর্ণে, সেখানে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখার সুযোগ নেই৷ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সূত্রে আরো জানা গেছে, এই রূপান্তরে বাজেট ধরা হয়েছে ৫০৫ মিলিয়ন ইউরো৷ এর মধ্যে গত এপ্রিলে নতুন বর্ণমালা খচিত কয়েন ছেড়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ ২০২১ সালের মধ্যে, এটিকে দেশটির অফিসিয়াল বর্ণমালা ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার৷ শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ৷

Schulunterricht in Kasachstan
কাজাখস্তানের একটি স্কুলছবি: Grigory Kuzmishchev

শহুরে জীবনের এই পরিবর্তন খুব একটা প্রভাব না ফেললেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জটিলতা হতে পারে- এ আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷ শহরের প্রথম সারির ২৫টি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে আয়ত্ব করছে নতুন বর্ণমালা৷ বর্ণগুলোকে লিখতে শেখা, বাঁকগুলো নিপুণভাবে আয়ত্ব করা নিয়ে বেশ মনোযোগী তারা৷ কিন্তু আলমাতি শহরের কাছের কাইনজর গ্রামের স্কুলগুলোতে বিপরীত চিত্র বিরাজ করছে৷ প্রান্তিক এলাকার শিশুরা এখনো সিরিলিক বর্ণমালা শিখছে৷ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে, আবারো নতুন করে নতুন বর্ণমালা শিখতে হবে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীকে৷

শিক্ষকদেরও নতুন বর্ণমালা নিয়ে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷ আগামী বছর থেকে শ্রেণিকক্ষে পুরোদমে এই বর্ণমালায় ক্লাশ নিতে হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷

বদলে যাওয়া বর্ণমালা নিয়ে শুরুতে কিছুটা ঝক্কি থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য ভালো মনে করছেন কাজাখরা৷ কাইনজরের গ্রামীণ স্কুলের পরিচালক তাবিজখান তাতোকানোভিচ বলেন, ''আমি মনে করি, এটি সময়ের দাবি৷ তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে এটা খুবই ইতিবাচক পরিবর্তন৷ তাঁর মতে, লাতিন বর্ণমালার কারণে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে ইংরেজি ভাষাটাও শিখে ফেলতে পারবে৷ ফলে, বিজ্ঞানের পড়াশোনা আর সাহিত্য পাঠ সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি৷

কাজাখস্তানের এই পরিবর্তনকে ‘রাশিয়া বলয়' থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা হিসেবেও দেখছেন অনেকে৷ যদিও কাজাখ কর্তৃপক্ষ মনে করে, মধ্য এশিয়ার জন্য রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ মিত্র৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আইডস স্যারাম এই রূপান্তরকে 'কাজাখ ভ্যালু' প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন৷ তাঁর মতে, সিরিলিক থেকে ফিরে আসার এই সিদ্ধান্ত দেশটির জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ৷ আইডস স্যারাম বলছেন, কয়েক বছর ধরে দেশটিতে কাজাখ ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে৷ আর তাই দেশটির সরকারও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

শত বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে তিনবার বর্ণমালা পরিবর্তন করলো দেশটি৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের সেক্যুলার শিক্ষার বলি হয়ে ১৯২৯ সালে আরবি বর্ণমালা ছেড়ে লাতিন বর্ণমালা গ্রহণ করে কাজাখরা৷ ১৯৪০ সালে এসে আরো এক দফা রূপান্তর৷ নিজ ভাষায় শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে একীভূত করার লক্ষ্য পূরণের ধোঁয়া তুলে লাতিন ছেড়ে কাজাখদের ফিরতে হলো সিরিলিক বর্ণমালায়৷ আড়ালে এই প্রক্রিয়াকে অনেকেই ‘রাশিয়াকরণের’ অংশ হিসেব দেখেছেন৷

সাম্প্রতিক বিশ্ব ইতিহাসে এমন আরো কিছু উদাহরণ আছে৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ১৯৯১ সালে সিরিলিক ছেড়ে লাতিনে ফেরে আজারবাইজান৷ আর ১৯৯৩ সালে এসে উজবেকিস্তান আর তুর্কমেনিস্তানও নিজেদের বর্ণমালা হিসেবে লাতিনকে বেছে নেয়৷

এমিলি শেরউইন/টিএম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য