1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ধর্মপ্রাণ হন, ধর্মান্ধ নয়'

২৯ এপ্রিল ২০১৪

আজ থাকছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রসঙ্গে ব্লগারদের পোস্ট৷ বাংলাদেশে শিশু আদালত গঠন এবং সাম্প্রদায়িকতা৷ ভারতে নির্বাচনকে ঘিরে ভেদভাবনার রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়ানোর এ সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও যে প্রাসঙ্গিক৷

https://p.dw.com/p/1BqjN
ছবি: DW

শিশু অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি তো বিশ্বের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ৷ এক্ষেত্রে সম্প্রতি একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ গত ১৩ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে শিশু আদালত হিসেবে নির্ধারণ করার ঘোষণা দেয়া হয়৷ আইন মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্রমশ বেড়ে চলা শিশু নির্যাতন, শিশু শ্রমে লাগাম টানার অত্যাবশ্যক এ উদ্যোগের কথা জানায়৷ আমার ব্লগে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শাহানুর ইসলাম সৈকত৷ তাঁর লেখার শিরোনাম: ‘জেলায় জেলায় শিশু-আদালত গঠন: জনগণ সুফল পাবে তো!'

এ লেখায় দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন সৈকত৷ লিখেছেন, ‘‘চারিদিকে যখন প্রতিনিয়ত একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা ঘটেই চলেছে, আর সরকারের প্রতি দেশ-বিদেশের প্রতিনিয়ত অনুরোধেও সরকারের টনক নড়ছে না, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের প্রতিটি জেলায় শিশু আদালত গঠনের মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত বাস্তবয়ন করায় সরকারকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতেই হয়৷ এ থেকে প্রতিয়মান হয় সরকার চাইলেই দেশের নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে, শুধু প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা৷''

শাহানুর ইসলাম সৈকত অবশ্য মনে করেন, ‘‘জেলায় জেলায় শিশু আদালত গঠনই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সুষ্ঠুভাবে আদালতগুলো যেন চলতে পারে, তার সঠিক ব্যবস্থাপনা৷ শিশু আদালত যেন দালাল, টাউট-বাটপার আর দুর্নীতিবাজদের পদাচারণায় মুখরিত না হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে৷ তাছাড়া, পুলিশ কর্মকর্তা, যারা অপরাধের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে থাকে তারা যেন শিশুদের প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে মিলিয়ে না ফেলে সে ব্যপারে তাদের যথেষ্ট পরিমাণ কেয়ারফুল (সতর্ক) হতে হবে৷ অন্যথায় যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিশু আদালত গঠন করা হয়েছে, তা অলীক স্বপ্নই হয়ে থাকবে....৷''

উদার মানবতার বাণী ছড়ানোর চেষ্টা দিকে দিকে অব্যাহত থাকলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা বলতে গেলে সব দেশেই এখনো অলীক কল্পনা৷ সারা বিশ্বকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পমুক্ত করাও তেমনই এক স্বপ্ন৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ, যে দেশের সংবিধানে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার উদারতা, সে দেশেও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান আশঙ্কাজনকভাবে দৃশ্যমান৷ নির্বাচনকে ঘিরে বিজেপি এবং সমমনা দলগুলোর সাম্প্রতিক প্রচারণায় বিষয়টি আবার সুস্পষ্ট হয়েছে৷

সাম্প্রদায়িকতা এমন এক বাস্তবতা যার ফায়দা তুলতে সাম্প্রদায়িক শক্তি যদিও সব সময় ওঁত পেতে থাকে, প্রকাশ্যে কিন্তু তাদের কোনো কর্মকাণ্ডকেই ‘সাম্প্রদায়িকতা' হিসেবে স্বীকার করে না৷ সবই করা হয় রাজনীতির নামে, ধর্মকে সামনে রেখে৷ বাংলাদেশেও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যে চলছে, তা অস্বীকার করার জো নেই৷ ক্ষমতার লোভে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে চোরা দ্বন্দ্ব থাকলেও ‘অসাম্প্রদায়িক' বলে পরিচিত দলগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নীরব, নিষ্ক্রিয় থেকে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও রাখতে দেখা গেছে বহুবার৷

আমার ব্লগে ‘নীরব ঘাতক জামায়াতের এবারের লক্ষ আওয়ামী লীগ' শিরোনামের লেখায় ব্লগার মো. গালিব মেহেদী খাঁন অবশ্য তুলে ধরেছেন অন্য একটি দিক৷ সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি শঙ্কিত করেছে তাঁকে৷ তাঁর মতে, ‘‘জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে রেকর্ড সংখ্যক আসন জিতে নিল, যা হতবিহ্বল করে তুলল রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বোদ্ধা-বিশ্লেষকদেরও৷ জামাতের এই সাফল্যে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এখন পুরোপুরিই বেসামাল৷ তারা এখন স্বাভাবিক পন্থা রেখে অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে৷ জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে বরং নিজ দলের সাথে একীভূত করে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷''

অশুভ শক্তিকে পাশে নিয়ে শুরু করা যুদ্ধের পরিণাম কদাচিৎ সুফল বয়ে আনে৷ তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে দিয়ে মো. গালিব মেহেদী খাঁন লিখেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ এমন কোনো কষ্টিপাথর নয় যে তার সংস্পর্শে তামা সোনা হয়ে যাবে৷ এটা পরীক্ষিত সত্য, জামায়াত যখন যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তারা জামায়াত হয়েই থাকে৷ জামাতের সদস্যরা অন্যান্য দলের সদস্যদের মতো নিজেদের বিক্রি করে না৷ তাহলে কেন আওয়ামী লীগ এই সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে? এর ফলাফল কি এবং তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা কি তারা ভেবে দেখেছেন? যখনই ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে কোনো দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ উত্থাপিত হয় তখনই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্রলীগে শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং তারাই এ জন্য দায়ী৷ তাহলে এরপরে কি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও আমাদের একই কথা শুনতে হবে?''

Bildergalerie Bangladesch Neujahr Pohela Boishakh
‘জেলায় জেলায় শিশু-আদালত গঠন: জনগণ সুফল পাবে তো!'ছবি: Getty Images

রাজনীতির এই নোংরা খেলা সমাজে কী প্রভাব ফেলতে পারে তার একটু নমুনা দেখিয়েছেন ইমতিয়াজ ইমন৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে তাঁর লেখার শিরোনাম ‘হিলিয়াম শেষ হয়ে গেলে, ধর্ম বা রাজনীতি জ্বালবে না আগুন'৷ ইমতিয়াজ ইমন খুব কাছ থেকে কাছের মানুষদের মাঝেই দেখেছেন সাম্প্রদায়িকতার সুপ্ত ‘আগুন'৷ ঘনিষ্ঠ এক সহপাঠীর সাম্প্রদায়িক মানসিকতা দেখার অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘‘আমার এক সহপাঠী জিজ্ঞেস করেছিল, হিন্দুর রক্ত মুসলমানের শরীরে দেয়া যাবে কিনা৷ আমি তার কথায় অবাক হয়েছিলাম৷ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প কতটুকু গভীরে প্রবেশ করলে, একজন মানুষ এরকম চিন্তা করতে পারে?''

ইমতিয়াজ ইমন নিজে অসাম্প্রদায়িক, তাই মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখেন৷ তাঁর কাছে তাই ‘সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন'-এর খবরের অর্থ ‘বাংলাদেশিদের উপর নির্যাতন'৷ ‘‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে যেখানে সবার বাংলাদেশি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে হয়েছে সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘুর বিভাজন' – এই বাস্তবতা মানতে খুব কষ্ট হয় তাঁর৷ সবাইকে অসাম্প্রদায়িক হবার খুব সহজ একটা পরামর্শ দিয়ে ইমন লিখেছেন, ‘‘সবার আগে নিজেকে মানুষ ভাবুন, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ধর্মপ্রাণ হন, ধর্মান্ধ নয়৷''

সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য