1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আতঙ্কের নাম নাগরিকপঞ্জি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নাগরিকপঞ্জি নিয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা হওয়ার আগেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ সাধারণ মানুষ পরিচয়পত্র তৈরির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে৷ আতঙ্কের জেরে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ৷ এর সঙ্গে তীব্র হচ্ছে রাজনৈতিক তরজা৷

https://p.dw.com/p/3QOqn
‘পশ্চিমবঙ্গেও আসছে নাগরিকপঞ্জি’ এমন গুজব রাজ্যে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করেছেছবি: DW/P. Samanta

প্রতিবেশী রাজ্য আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি হয়েছে৷ ১৯ লক্ষ মানুষকে নাগরিকের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি৷ পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জি তৈরির কোনো সরকারি ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকার করেনি৷ তাই পশ্চিমবঙ্গেও তা হবে কিনা স্পষ্ট নয়৷ অথচ শুধু এই সংক্রান্ত গুজব ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করছে৷ শুধু সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যেই নয়, কেবল সীমান্তবর্তী জেলাতেই নয়, গোটা রাজ্যে নাগরিকপঞ্জির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে৷ দুটি সরকারি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এই আতঙ্কের ছবিটা আরো স্পষ্ট হয়েছে৷

পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের খাদ্য দপ্তর ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রদান ও সংশোধনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ শুক্রবার পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলার কথা ছিল৷ বিপুল ভিড়ের চাপ সামলাতে ৩০ নভেমন্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে৷ কলকাতা থেকে জেলায় পুরসভা কিংবা ব্লক অফিসে গত কয়েকদিন ধরে লম্বা লাইন চোখে পড়ছে৷ প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শহুরে মধ্যবিত্ত, সকলেই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন৷ সকলেই চাইছেন দ্রুত ডিজিটাল রেশনকার্ড সংগ্রহ করতে এবং পুরনো কার্ডের তথ্য সংশোধন করিয়ে নিতে৷ এর ফলে দীর্ঘ লাইন পড়ছে সরকারি দপ্তরে৷ পঞ্জীর নিয়ম অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের আগে ভারতে বসবাস করেছেন পূর্বপুরুষেরা, বর্তমান নাগরিকদের তার স্বপক্ষে প্রমাণ দাখিল করতে হবে৷ যাদের কাছে পুরনো নথি নেই, তারাই বেশি আতঙ্কে পড়েছেন৷ তাই সরকারি ঘোষণা না হলেও নাগরিকরা নিজেদের পরিচয়পত্র ‘আপডেট' রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছেন৷

সৌগত রায়

এরই সঙ্গে নির্বাচন দপ্তরের ‘ভোটার ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম' আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়েছে৷ ভোটার কার্ড সংক্রান্ত নথি পেশ করতে হচ্ছে ভোটারকে৷ বহু মানুষ দপ্তরে গিয়ে নিজেদের ভোটার কার্ড সংশোধনের আবেদন করছেন৷ অনলাইনেও নথি পেশ করা যাচ্ছে৷ এতে গরমিল হলে ভোটার কার্ড বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এর ফলে রেশন কার্ডের মতো ভোটার কার্ড সংশোধনের কর্মসূচিকেও মানুষ নাগরিকপঞ্জির সঙ্গে যুক্ত করে দেখছে৷ আতঙ্ক কাটাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বার্তা দিয়েছেন, এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জির সঙ্গে সরকারি কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই৷ তবু আতঙ্ক কাটছে না৷ এরপরও পঞ্জীর দরুণ মৃত্যুর খবর আসছে৷

রাজনৈতিক দলগুলি এ নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছে৷ মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর এই বিতর্ক আরো গতি পেয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাতের পর বলেছেন, এনআরসি অসমের বিষয়, এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক নেই৷ এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি৷ বামপন্থিদের প্রশ্ন, কেন মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি তুললেন না? সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "এনআরসি যদি পশ্চিমবঙ্গের বিষয় না-ই হয়, তাহলে কলকাতায় তিনি ৬ ঘণ্টা রাস্তা আটকে প্রতিবাদ মিছিল করলেন কেন? আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এনআরসির দাবি তুলেছিলেন৷ তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর তিনি বাংলাদেশি ভোটারদের তালিকা নিয়ে সংসদে বক্তৃতা করতে চেয়েছিলেন৷  তাঁর দেখানো পথেই বিজেপি এসেছে৷”

তন্ময় ভট্টাচার্য

যদিও পঞ্জীর জন্য বিজেপিকেই দায়ী করছে তৃণমূল৷ দলীয় সাংসদ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায় বলেন, "জনমানসে এই আতঙ্ক বিজেপি তৈরি করেছে৷ ওদের রাজ্য সভাপতি বলেছেন, দু কোটি মানুষকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়াতে হবে৷ সেই কারণে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷” সিপিএমের বক্তব্যে তাঁর প্রতিক্রিয়া, "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সেটা বিরোধীদের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই বলবেন না৷ পঞ্জীর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ করছেন৷ তাই দুজনের বৈঠকে কী কথা হয়েছে, সেটা শুধু প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীই জানেন৷”

বিজেপি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করেছে৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসিকে বাংলায় ইস্যু করেছেন৷ আমরা করিনি৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি হয়েছে৷ আমরা করিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী মিছিল করছেন, তৃণমূল লিফলেট বিলি করছে৷ উনিই আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন, প্ররোচনা দিচ্ছেন৷ কেউ যদি এনআরসির আতঙ্কে মারা যায়, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর নামে এফআইআর করা উচিত৷ এখন তো ডেঙ্গু হলেও এনআরসির জন্য মারা গেছে বলে দাবি করছে৷”

কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসকদলের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলছে বামেরা৷ তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূল ও বিজেপি সেটিং করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সেই বোঝাপড়াই চূড়ান্ত হয়েছে৷ নাগরিকপঞ্জির কথা বলে সংখ্যালঘুদের ভোট টানবে তৃণমূল, পাল্টা মেরুকরণ তীব্র করবে বিজেপি৷”