1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছট পূজা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ নভেম্বর ২০১৯

পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে রবীন্দ্র সরোবরে পালিত হল ছট পুজোর আচার৷ সরোবরের গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকল পুণ্যার্থীদের দল৷ রাজনৈতিক কারণেই প্রশাসন পুণ্যার্থীদের আটকায়নি৷ এমনই অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের৷

https://p.dw.com/p/3SkeZ
ছবি: DW/P. Samanta

প্রতিমা নিরঞ্জন, ছট পুজো ইত্যাদি জলাশয়কেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠানের ফলে যে দূষণ ছড়ায়, তা নিয়ে বহুদিনই সরব পরিবেশকর্মীরা৷ সেই প্রতিবাদকে মান্যতা দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে জলদূষণ রুখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত৷ দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জনের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে৷

হিন্দিভাষীদের উৎসব ছট উপলক্ষেও রবীন্দ্র সরোবরের সীমানায় বিশেষ সতর্কতা টাঙানো হয়েছিল৷ পুলিশ মোতায়েন থাকারও কথা ছিল৷ কিন্তু ছট পুজোর দিন পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিবারের মতো সাড়ম্বরে উৎসব পালিত হল৷ জলে নেমে এবং জলাশয়ের পাড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষের পুজো-অর্চনা চলল দিনভর৷

পুলিশের সামনেই সরোবরের সাতটি গেটের তালা ভাঙা হল৷ ১৮টি গেটে কোনো পুলিশের দেখা মেলেনি৷ এমনকি ছটপুজোর জন্য রবীন্দ্র সরোবরের বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থা করতে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-এর তরফে ৩৯ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলে আদালতে হলফনামাও দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এত টাকা খরচ করেও ‘দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস' বলে পরিচিত  রবীন্দ্র সরোবর দূষণের কবলে পড়ে৷

নব দত্ত

চোখের সামনে কার্যত বিনা বাধায় সরোবরকে দূ্যিত হতে দেখে ক্ষিপ্ত পরিবেশ কর্মীরা৷ তাঁদের বক্তব্য, ধর্মীয় ভাবাবেগের দোহাই দিয়ে নিজেদের অকর্মণ্যতা ঢাকতে চাইছে প্রশাসন৷ পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী নাগরিকমঞ্চের নেতা নব দত্তের বক্তব্য, ‘‘ধর্মীয় ভাবাবেগের দোহাই দিয়ে কতদিন চলবে! সেই ২০১৫ সাল থেকে আলোচনা চলছে৷ কেএমডিএ দূষণ রোখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু আদালতের নির্দেশ মানা হয়নি৷ জলদূষণ একদিন করলেও তার খেসারত অনেকদিন ধরে দিতে হবে৷ দক্ষিণ কলকাতার একমাত্র মুক্ত এলাকা এই সরোবর৷ তাকে রক্ষা করতে আন্তরিক নয় প্রশাসন৷”

অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন গঙ্গা-যমুনার মতো রবীন্দ্র সরোবর পুণ্যতোয়া নয়৷ এর সঙ্গে ধর্ম বা সংস্কৃতির যোগ থাকার কথা নয়৷ এই সরোবরেই পুজো করতে হবে, এমন দাবি অসঙ্গত৷ দিল্লিতে জলদূষণ রুখতে ইতিমধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যমুনার জলে ৫৯টি কৃত্রিম পুকুর তৈরি হয়েছে৷ পুজো ও বিসর্জনের জন্য সেই জলাশয় ব্যবহার করা হয়৷ কলকাতায় ভাগীরথী সংলগ্ন এলাকায় এমন জলাশয় গড়ে তোলা দরকার বলে মনে করেন নব দত্ত৷ 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছটপুজোর আগেই বলেছিলেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কেউ ঘাটে চলে গেলে তিনি পুলিশকে লাঠি গুলি চালাতে বলবেন না৷ তাই নব দত্তের মতো অনেকের অভিযোগ, প্রশাসনের এই বার্তাই উৎসাহিত করেছে পুণ্যার্থীদের৷ শুধু রবীন্দ্র সরোবরেই যেখানে ২০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, সেখানে অন্যান্য জলাশয়গুলিতে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে৷

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

অতীতে বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ প্রশাসন আদালতের রায়ে জরিমানার মুখে পড়েছিল৷ এবারেও যে বড় জরিমানার মুখে পড়বে রাজ্য, তাতে সন্দেহ নেই৷ তবে আইনজীবী ও বামনেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "সরকারের প্রশ্রয়েই সরোবরে এই কাণ্ড ঘটেছে৷ জরিমানা কোনো সমাধান নয়৷ বরং আদালত অবমাননার দায়ে প্রশাসনের কর্তাদের শাস্তি হওয়া উচিত৷ আদালতের উচিত রাজ্যের মুখ্যসচিব, কেএমডিএর প্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও চেয়ারম্যানকে জেলে পাঠানো৷ একমাত্র হাজতবাস করলে ওদের শিক্ষা হবে৷”

হিন্দিভাষী মানুষদের ধর্মপালন নিয়ে প্রথমদিকে সোচ্চার হলেও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম পরে ক্ষমা চেয়েছেন৷ ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে তিনি বলেছেন, "শত চেষ্টা করেও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর আয়োজন থেকে মানুষকে বিরত করতে আমরা ব্যর্থ৷ সরোবরে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ও আলাদা জলাশয়ের ব্যবস্থাও হয়েছিল৷ তবু ধর্মপ্রাণ মানুষ রবীন্দ্র সরোবরেই ছটপুজো করেছে৷ এ জন্য আমরা দুঃখিত৷”

এই প্রসঙ্গে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "প্রশাসন চূড়ান্ত অপরাধ করেছে৷ পুজোর নামে রাস্তা বন্ধ, দূষণ আইন করে বন্ধ করা উচিত৷ কিন্তু আইন করলেও প্রশাসনকেই তা বলবৎ করতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারই লোকজন দিয়ে সরোবরে ছটপুজো করিয়েছে৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যারা করে, তাদের কাছে বিজ্ঞান ও পরিবেশের কোনো মূল্য নেই৷”