1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগান মেয়েদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে

৩১ ডিসেম্বর ২০০৯

জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিষয়ক দপ্তর ইউএনওডিসি - ইউনাইটেড নেশন্স অফিস অন ড্রাগস এ্যান্ড ক্রাইম-এর জরিপ অনুযায়ী, আফগানিস্তানের প্রায় ৯ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ মাদকাসক্ত - আর তার মধ্যে, সব চেয়ে বেশি সেবন করা হয় আফিম৷

https://p.dw.com/p/LHiV
ইউএনওডিসি’র আন্টোনিয় মারিয়া কোস্টাছবি: AP

মাদকাসক্ত মানুষের মধ্যে ১৩ শতাংশ হচ্ছে মহিলা এবং এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷ অবশ্য সাধারণত, আফগানিস্তানের রাস্তায় দেখা যাবে মাদকাসক্তদের - বিশেষ করে পুরুষদের৷ ঝাপসা লাল চোখ, এলোমেলো চুল, শ্লথ গতিতে পা ফেলা - এক নজরে যে কেউ-ই বুঝে ফেলবে এরা মাদকাসক্ত৷ সেই তুলনায় মহিলাদের একেবারেই চোখে পড়বে না৷ এরা থাকে স্বভাবতই বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে৷ তাদের মাদক জীবন সম্পর্কে বাইরের কেউ জানতেও পারে না৷

কারিমার বয়স ৩৫৷ ২০ বছর ধরে সে বিবাহিতা৷ এবং ২০ বছর ধরেই সে মাদকাসক্ত৷ প্রথমে গাঁজা, পরে সিগারেট এরপর আফিম এবং হেরোইন৷ প্রথম দিকে কারিমা এসব মাদক সেবন করতো ধূমপানের সাহায্যে৷ কিন্তু পরে তাকে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নিতে হতো৷ ঘন ঘন ইনজেকশন নেয়ার ফলে তার অনেকগুলো রগ শুকিয়ে গেছে৷ কারিমা জানাল কি করে এই ভয়ঙ্কর জগতে সে প্রবেশ করেছে৷

সে বলল, ‘‘শুরু হয় গাঁজা দিয়ে৷ সেটা আমার বিয়ের এক বছর পর৷ আমার স্বামী আমাকে গাঁজা দেয় খাওয়ার জন্য৷ আমি প্রথমে আস্বীকার করি কিন্তু আমার স্বামী জোর করে, আমাকে মারধোর করে৷ আমাকে জোর করে গাঁজা, মারিহুয়ানা, আফিম, সিগারেট এগুলো খাওয়ায়৷ এরপর আমি ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ি৷''

কারিমার বাড়ি উত্তর আফগানিস্তানের পাঞ্জের অঞ্চলে৷ সেখানে আবহাওয়া বেশ রুক্ষ, বেশির ভাগ মানুষই তাঁবুতে বসবাস করে৷ শীতের তীব্রতা, অসুস্থতা, দুর্বিষহ জীবন সেখানকার মানুষের নিত্য সঙ্গী৷ অসুস্থ মানুষদের জন্য ওষুধ-পত্রও যোগাড় করা সম্ভব নয়৷ বিশেষ করে মহিলা এবং শিশুদের সাহায্য করা খুবই দুরূহ৷ মহিলারা অসুস্থ হলে, বাচ্চারা ক্ষুধায় কাতর হলে আফিম দিয়ে ঠান্ডা করে দেয়া হয়৷

Afghanistan Mädchen Jahrzehnt Flash-Galerie 2002
স্কুলের মেয়েদেরও নিস্তার নেই মাদকের হাত থেকেছবি: AP

কারিমা আরো জানাল, ‘‘প্রথম যখন আমি গাঁজা টানি, আমি কোন কিছুই টের পাইনি৷ আমার সারা শরীর একেবারে অবশ হয়ে গিয়েছিল৷ আমার মনে হচ্ছিল আমার কোন সমস্যা নেই৷ আমি একেবারে চুপচাপ, শান্ত হয়ে পড়ে থাকতাম৷ আমাদের দিনে বা রাতে খাবার কিছু না থাকলেও কোন সমস্যা হত না৷ আমরা গাঁজা খেতাম৷ তাতে খিদে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেত৷ সব সমস্যার সমাধান করা গেছে - এরকমই মনে হত৷''

মহিলাদের সমস্যার আরো অনেকগুলো দিক রয়েছে৷ কারিমার মত আরো অনেকে মেয়েই স্বামীর অত্যাচারের শিকার৷ অল্প বয়সে এদের বিয়ে হয়৷ বিয়ের পর পরিবারের কাজের সব দায়িত্ব বর্তায় বাড়ির বউয়ের ওপর৷ শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কাজ করা, বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের যত্ন নেয়া কোন কিছুই বাদ থাকে না৷ বাচ্চারাতো আছেই৷ এক হাতে সবদিক সামলানো যে কোন মেয়ের পক্ষেই কঠিন৷ এইসব চাপ থেকে হালকা হওয়ার জন্যই অনেক মহিলা আশ্রয় নেন মাদকের৷

মাদক বিশেষজ্ঞ ডেভিস ম্যাকডোনাল্ড গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন আফগানিস্তানে৷ তিনি জানালেন, মায়েরা খুব ছোট-ছোট বাচ্চাদের মাদক খাওয়ায়৷ যেন বাচ্চা কান্না-কাটি না করে৷ বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে তা দেখা যায় সব চেয়ে বেশি৷ এ অঞ্চলের মহিলারা কার্পেট বোনার কাজ করে৷ প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়৷ যখন কোন মহিলা এই দীর্ঘ সময় বোনার কাজে ব্যস্ত থাকে তখন অন্য কিছুর প্রতি নজর দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না৷ বাচ্চাদের তখন মাদক দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়৷ যাতে মা নিশ্চিন্তে মনে কাজ করতে পারে৷

এভাবেই মাদক সেবন একটি প্রজন্ম থেকে আরেকটি প্রজন্মে গড়ায়৷ অনেক ছোট বেলা থেকেই বাচ্চারা হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত৷ অনেক মহিলা আছে যারা একটু ঠান্ডা বা কাশি হলেই বাচ্চাদের আফিম দেয়৷ এতে বাচ্চা সুস্থ হয় ঠিকই কিন্তু মায়েরা বুঝতে পারে না বাচ্চাদের জন্য তা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে৷ শিংকাই জানে, এসব বাচ্চা এবং মহিলাদের চিকিৎসা করানো কতটা কষ্টকর৷ তাদের কাছে যাওয়া যায় না, কথা বলা যায় না৷ এরা কোন অবস্থাতেই মুখ খোলে না৷

সিংকাই বলল, ‘‘আমরা গ্রামের একেবারে ভেতর পর্যন্ত চলে যাই৷ প্রতিটি বাড়িতে যাই৷ তাদের কিছুতেই বুঝতে দেই না যে মাদকাসক্ত মহিলা এবং শিশুদের খোঁজে আমরা এসেছি৷ বরং আমরা বলি আমরা দেখতে এসেছি বাচ্চারা ঠিকমত পড়াশোনা করছে কিনা, তারা সুস্থ কিনা৷ তাদের কি প্রয়োজন৷ যখন তারা আমাদের বিশ্বাস করে তখনই শুধু আমরা আমাদের আসল পরিচয় দেই৷ আমরা কেন এসেছি -তাও তখন জানাই৷''

প্রতিবেদক : মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক : আবদুল্লাহ আল-ফারূক