1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেপরোয়া ট্রাক, হাসপাতালে অভিনেত্রী অহনা

ফাতেমা আবেদীন
১১ জানুয়ারি ২০১৯

ট্রাক চালক তাঁর গাড়িকে ধাক্কা দেয়ায়, চালকের আসনে থাকা নারী প্রতিবাদ করেছিলেন৷ বেপরোয়া চালক আবার চালিয়ে দেন ট্রাক৷ প্রতিবাদী নারী ঝুলতে থাকেন ট্রাকে৷ কিছু দূরে গিয়ে ট্রাকটি কাঁত হয়ে যায়, সেই নারী ছিটকে পড়েন মাটিতে৷

https://p.dw.com/p/3BOP1
প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাসপাতালে অভিনেত্রী অহনাছবি: privat

ট্রাকটি বাম দিকে কাঁত না হয়ে ডান দিকেও কাঁত হতে পারতো৷ আর পিষে যেতে পারতেন সেই নারী৷ এমন একটি দৃশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ ঘটনাটি ঘটেছে৷ প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা নারীটি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অহনা৷ এই মুহূর্তে তিনি কোমরে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে আছেন৷ পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে৷ মামলা চলছে৷ তবে চালক ও হেল্পার পলাতক৷

এরকম গাড়ি, হোন্ডা, রিকশাকে ট্রাক বাস চাপা দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে৷ আর এর মধ্যে কেউ যদি হঠাৎ প্রতিবাদ করেন, তবে পিষে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়৷ কেউ ভাগ্যক্রমে অহনার মতো বেঁচে ফেরেন, আর কেউবা চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গিয়ে সংবাদ হন৷

অহনা বলেছে, তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল: মিতু

বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগে এটিই এখন সবচাইতে পরিচিত দৃশ্য৷ কোনো এক বিচিত্র কারণে আমরা এই আচরণ ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহত হওয়ার বিষয়টি খুব স্বাভাবিকভাবে মেনেই নিয়েছি৷

গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটে (এআরআই) যৌথ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে তিন বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৫ হাজার ১২০ জন৷ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২০ জন৷ এই সময়ে আহত হয়েছেন ৬২ হাজার ৪৮২ জন৷ এসব দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশ ঘটেছে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতির কারণে৷ এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও ৫৪ শতাংশ অতিরিক্ত গতি৷ বাকি মাত্র ৯ শতাংশ ব্রেকফেল, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বা অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনা৷ এবং নগরে দুর্ঘটনায় নিহত পথচারীদের ৭৪ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বেপরোয়া চালক ও গাড়ির দ্রুত গতি

প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এসব সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশির ভাগই শিশু, তরুণ ও কর্মক্ষম ব্যক্তি৷ এবং সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা৷

অহনার সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন লিজা ইয়াসমিন মিতু৷ তিনি কথা বলেন ডয়েচে ভেলের সঙ্গে৷ তাঁর কথায় উঠে এসেছে সেই রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা৷ মিতু  জানান, বামে ইন্ডিকেটর দেওয়ার পরও তাঁদের ধাক্কা দেওয়া হয় এবং পাল্টা জিজ্ঞাসা করে তারা কেন বাম দিকে যাচ্ছিলেন৷ সেই সময় ট্রাক ড্রাইভারের হাতে সিগারেট ছিল, তা থেকে গাঁজার গন্ধ পান মিতু ও অহনা৷

মিতু জানান, অহনার শরীরের বিভিন্নস্থান থেতলে গেছে৷ মৃ্ত্যু আর অহনার দূরত্ব ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ডের৷ ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছেন তিনি৷ ট্রাকের দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকা অহনাকে প্রায় দেড় কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় সেই চালক৷

গুরুতর আহত অহনা এখন হাসপাতালে৷ তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা এখন সম্ভব নয়৷ তবে মিতু জানিয়েছেন, অহনা মনে করেন ওই চালক তাঁকে হত্যার পরিকল্পনাই করেছিলেন৷ কয়েকবার ফেলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন৷ সেই সময় হেল্পারকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেন বেপরোয়া চালক৷

মিতুর বর্ণনায় ৩৭ শতাংশ বেপরোয়া চালকের একজনকে খুঁজে পেলাম আমরা৷ বাস্তবতা এমনটাই রোমহর্ষক৷

বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয় আমাদের নিজস্ব করণীয়৷ আসলে আমাদের করণীয় কী? অনেকেই বেশ নড়েচড়ে বসবেন, বলবেন সদ্যই দেশের শিশু-কিশোররা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করেছে৷ এখন আর কী দরকার?

Fatema Abedin, Intern, DW Bangla section.
ফাতেমা আবেদীন নাজলা, ডয়চে ভেলেছবি: privat

আমরা যখন ভেবেই নেই সমাধানের দায়িত্ব একা প্রশাসনের৷ ‌ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব নেই, তখনই মোটামুটি সব ভাবনা শেষ হয়ে যায় এবং অহনাদের ঘটনা পড়ে আমরা হা-হুতাশ করি কিংবা বাহবা দেই৷

সার্বিকভাবে মহাসড়কে বা রাজপথে ট্রাক-বাস ও অটো চালকদের দৌরাত্ম্য বা আমাদের অসাবধানতা কমিয়ে আনা কি খুব কঠিন কাজ? আমরা তো উন্নয়নের মাইলফলকে পৌঁছে যাচ্ছি৷ শহস্রাব্দ গোলের প্রায় সব মানদণ্ডই উৎরাতে পারছি৷ কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মতো সংকটের সমাধান কোথায়? 

রাজপথ আটকে রেখে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ  করার উপায় নেই৷ প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং চরম শাস্তি৷ শাস্তিই পারে আইন অমান্যকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে৷ দুটো বিষয়েই আমাদের প্রশাসনের সঙ্গে এক হয়েই কাজ করতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷ সামনে শুধু একটাই বিকল্প– সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করতে হবে৷

Fatema Abedin, Intern, DW Bangla section.
ফাতেমা আবেদীন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক