1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমি বর্ণবাদী, আপনিও কিন্তু তাই!

৫ জুন ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর আমরা ফেসবুকবাসীরা বর্ণবাদ নিয়ে আলোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছি৷

https://p.dw.com/p/3dJIB
USA Proteste zum Tod von George Floyd
ছবি: DW/C. Bleiker

শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবাদী আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছি৷ ফ্লয়েডকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার ভিডিও দেখার পর অবশ্য এমন আচরণই স্বাভাবিক৷ তবে স্ট্যাটাস দেয়ার সময় আবেগের সবটুকু দয়া করে এখনই শেষ করে ফেলবেন না৷ কারণ, সহসাই কিন্তু এমন নির্মমতা শেষ হবে না৷ 

যতদিন পর্যন্ত না আমরা একজন মানুষকে শুধুই মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে পারবো, ততদিন এমন বর্ণবাদী আচরণ ও নির্যাতন চলতেই থাকবে৷ আজ একজন কৃষ্ণাঙ্গ নির্মমতার শিকার হয়েছেন৷ এর জন্য দায়ী একজন শ্বেতাঙ্গ৷ কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায়, শ্বেতাঙ্গরাও একসময় দাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন৷ আর দাসদের সঙ্গেতো মানুষের মতো আচরণের কোনো বাধ্যবাধকতাই ছিল না৷

দয়া করে কেউ ভেবে বসবেন না, শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গেও এমন আচরণ হওয়ার কথা উল্লেখ করে আমি জর্জ ফ্লয়েডের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি জায়েজ করতে চাইছি৷ এর ব্যাখ্যায় পরে আসছি৷ আগে কিছু তথ্য জেনে নেই৷ 

  • যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের শুরু ষোড়শ শতকে৷ সেই সময় কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের দাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য অ্যামেরিকায় নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল৷ এরপর প্রায় এক কোটি ২০ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানকে দাস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়৷
  • ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের সাবেক অধ্যাপক রবার্ট ডেভিসের মতে, ১৫শ' থেকে ১৮শ' শতকের মধ্যে দশ লাখের বেশি মুসলমানকে ইউরোপে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ একই সময়ে উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্ক, মিশর ও পশ্চিম এশিয়ায় প্রায় ২০ লাখ খ্রিস্টানকে দাস করা হয়েছিল৷ অধ্যাপক ডেভিস বলছেন, ঐ সময়টাতে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিতদের দাস করা হতো৷ 
  • অষ্টম শতকে উত্তর আফ্রিকার মুররা স্পেন ও পর্তুগালের একটি অংশ দখল করার পর শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টানদের দাস হিসেবে ব্য়বহার শুরু করে৷ ১৫শ’ শতকে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই রীতি চালু ছিল৷

প্রিয় পাঠক, খেয়াল করে দেখুন একটা অংশের মানুষ সবসময়ই নিপীড়নের শিকার হয়ে এসেছে৷ কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে মোটা দাগে বলা যায়, ধর্ম ও বর্ণ দিয়েই মানুষকে আলাদা করা হয়েছে৷ আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাবানরা দুর্বলের উপর অত্যাচার চালিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে এখনকার বর্ণবাদেও এই বিষয়টি দেখা যাচ্ছে৷ দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক অবস্থান শ্বেতাঙ্গদের ধারেকাছেও নেই৷ তাই শ্বেতাঙ্গ পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুটি শুরু থেকেই কৃষ্ণাঙ্গদের কম সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে দেখছে৷ কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের আচরণও দেখছে৷ এবং সেটাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে৷ ফলে সে-ও বড় হয়ে একই আচরণ করছে৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই চলছে৷

DW Bengali Mohammad Zahidul Haque
ছবি: DW/Matthias Müller

এদিকে, দিনের পর দিন নির্যাতন-অবহেলার শিকার হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষ্ণাঙ্গের মনে ক্ষোভ থেকে এক ধরনের হিংস্রতা তৈরি হয়, যা তাদের আচরণে ফুটে ওঠে৷ এমন আচরণ দেখলে তৎক্ষণাৎ আমার-আপনার মনে হয়, তারা এমন কেন? এর পেছনে যে দীর্ঘদিনের নিপীড়ন লুকিয়ে আছে, তখন তা মনে করতে পারি না৷

এছাড়া টিভিতে, পত্রপত্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের যেভাবে দেখানো হয় সেটাও আমাদের মনে প্রভাব ফেলে৷ একইভাবে অন্য ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ সম্পর্কেও আমরা ধারণা পেয়ে থাকি৷ পরবর্তীতে বাস্তব জগতে তাদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা সেসব ধারণার ভিত্তিতেই আচরণ করে থাকি৷ 

এটাই কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক আচরণ৷ আর এ কারণেই আমার মনে হয় পৃথিবী থেকে কখনো বর্ণবাদ যাবে না৷ তবে বর্ণবাদের ক্ষতিটা যেন কম হয় সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ কারণ, বিষয়টা এমন যে, পরিস্থিতি অনুযায়ী একসময় যেমন আপনি নিজে বর্ণবাদী হয়ে উঠতে পারেন, তেমনি অন্য সময় আপনি নিজেও বর্ণবাদের শিকার হতে পারেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান