1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমিরাতের আট নারীর বিরুদ্ধে বিচার শুরু

নিনা নিবারগাল/এসিবি১২ মে ২০১৭

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক ধনাঢ্য পরিবারের আটজন নারীর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে বেলজিয়ামের আদালতে৷ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ – কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া গৃহপরিচারিকাদের ইউরোপে এনে অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য করেছেন৷

https://p.dw.com/p/2cqge
Scheich-Zayed-Moschee Abu Dhabi
ছবি: picture alliance/dpa/M.Gambarini

ধনাঢ্য পরিবারটি অঢেল সম্পদ ও অর্থের জন্য সারা বিশ্বেই পরিচিত৷ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব কিনে পরিবারটি প্রথম আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে আসে৷

সেই পরিবারের শেখা আল নেহায়ান ২০০৮ সালে তাঁর সাত কন্যাকে নিয়ে এসেছিলেন বেলজিয়ামে৷ রাজধানী ব্রাসেলসের কনরাড হোটেলে লাক্সারি স্যুটে ছিলেন তাঁরা৷ ছিলেন কয়েক মাস৷ অভিজাত পরিবারের সদস্যদের বিলাসবহুল কক্ষে অবস্থান কোনো সংবাদ শিরোনামে আসতো না সঙ্গে এক দল গৃহপরিচারিকাকেও নিয়ে না এলে৷ শেখা আল-নেহায়ান এবং তাঁর মেয়েদের সেবা-যত্নের জন্য আনা হয়েছিল ২০ জন গৃহপরিচারিকা৷ ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী, ‘ওয়ার্ক পারমিট', অর্থাৎ কাজের অনুমতি নিয়েই শুধু গৃহপরিচারিকা বা অন্য কোনো কর্মীকে সঙ্গে আনা যায়৷ অথচ ওই ২০ জন গৃহকর্মীকে আনা হয়েছিল কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া৷ অবৈধভাবে এনে তাদের সঙ্গে ন্যূনতম মানবিক আচরণও করা হয়নি৷ ধনাঢ্য পরিবারের নারীরা লাক্সারি স্যুটে থাকলেও সেবা-যত্নকারীদের শুতে হতো মাটিতে৷ পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হতো না৷ কিন্তু খাটানো হতো প্রায় ২৪ ঘণ্টা৷ দিন-রাতের যে কোনো সময় ডাক পড়তো৷ পান থেকে চুন খসলেই শুরু হতো চিৎকার-চেঁচামেচি এবং নানা ধরনের হুমকি-ধামকি৷ এক গৃহকর্মী পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ না জানালে  ইউরোপের বুকে,  অভিজাত হোটেলে ২০ নারীর এমন মানবেতর জীবনযাপনের খবর কোনোদিন হয়ত জানাই যেত না৷ 

অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্তে নেমে পড়ে পুলিশ৷ জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিজাত পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই সত্য৷ অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর মামলাও হয় বেলজিয়ামের আদালতে৷ কিন্তু শুনানি শুরু হতে হতে পার হয়ে যায় নয়টি বছর৷

বেলজিয়ামের মানবাধিকার সংস্থা মিরিয়া-র মুখপাত্র পাট্রিসিয়া লেকক মনে করেন, অধিকার বঞ্চিত এবং নির্যাতিত ২০ গৃহকর্মীর জন্য সুবিচার নিশ্চিত করার পথে প্রতিবন্ধকতা অনেক৷ এমন অভিযোগের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের অভিযুক্তরা সব সময়ই তাদের দেশের আইনের প্রসঙ্গ তুলে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেন৷ প্রসঙ্গত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের আইনেই গৃহকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেই৷ গৃহকর্মীরা যে বাড়িতে কাজ করেন, সেই বাড়ির কর্তাই আইনত তাঁদের স্থানীয় অভিবাবক৷ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে অনেক নারীকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ভালো বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে সব রকমের অধিকার বঞ্চিত করা হলেও প্রতিকারের কোনো সুযোগ কেউ পান না৷ বিনা বেতনে কাজ করিয়ে কারণে-অকারণে অমানুষিক নির্যাতন চালালেও গৃহকর্মীরা কর্মস্থল পরিবর্তনের কথাও ভাবতে পারেন না৷ গৃহকর্তার অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও চাকরি করার সুযোগও নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আইনে৷

বেলজিয়ামের চলমান মামলায় ২০ গৃহকর্মী কাঙ্খিত রায় পেলেও অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা দৃশ্যত প্রায় অসম্ভব, কেননা, অভিযুক্তরা ঘটনার পরই দেশে ফিরে গেছেন৷ দু'দেশের মধ্যে এমন কোনো চুক্তি নেই যার সুবাদে অভিযুক্তদের বেলজিয়ামে ফিরে বিচারের সম্মুখীন হতে বাধ্য করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার৷ তবুও মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে, মামলায় শেখা আল নেহায়ান ও তার মেয়েদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হলেও মধ্যপ্রাচ্যে যুগ যুগ ধরে নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহকর্মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন এবং ভবিষ্যতেও হয়ত অনেকে অভিযোগ দায়ের করতে উদ্বুদ্ধ হবেন৷