1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্জেন্টিনায় জলজ প্রাণী সমস্যা

১৭ মার্চ ২০১৭

বিভার নামের তীক্ষ্ণদন্তী, ইঁদুর গোত্রীয় প্রাণীটির কাজ হল দাঁত দিয়ে কুরে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা৷ অবাধ বংশবৃদ্ধির ফলে এই বিভাররা আর্জেন্টিনার তিয়েরা দেল ফুয়েগো এলাকায় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2ZMLK
Westatlantischer Trompetenfisch
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville

ইংরেজি নাম হলো ‘বিভার' – আংশিক জলে বাস করে, এই ধরনের একটি ধেড়ে ইঁদুর বা ছুঁচো বলতে পারেন৷ সামনে বড় বড় দু'টি হলদে হয়ে যাওয়া কোদালে দাঁত৷ এই দাঁত দিয়ে কাঠ কুরে কুরে বড় বড় গাছ ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা আছে এই প্রাণীটির৷ জলের মধ্যে কাঠের দুর্গ বানিয়ে তাতে বাস করে৷

আর্জেন্টিনায় বিভারদের বংশবৃদ্ধি একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ চামড়ার লোভে ৭০ বছর আগে আর্জেন্টিনার তিয়েরা দেল ফুয়েগো অঞ্চলে ২৫টি বিভার দম্পতিকে ছেড়ে দেওয়া হয় – তাদের আনা হয়েছিল ক্যানাডা থেকে৷ দেখা যায় যে, বিভারের চামড়া বেশি উচ্চ মানের নয় – ওদিকে তিয়েরা দেল ফুয়েগোতে ভাল্লুক বা নেকড়ের মতো শিকারি প্রাণী না থাকায় বিভাররা যথেচ্ছ বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷ আজ তিয়েরা দেল ফুয়েগোয় প্রায় এক লাখ বিভার আছে, যার ফলে এ অঞ্চলের আদিম অরণ্যানী বিপন্ন৷

গাছের গুঁড়িতে দাঁত ফুটিয়ে কাঠ কুরে কুরে আস্ত আস্ত গাছ ফেলে দেবার ক্ষমতা রাখে এই জীবগুলি৷ তারপর সেই গাছের ডাল টেনে নিয়ে গিয়ে তারা তাদের বাঁধ দেয়; সেই বাঁধের ফলে জলের গভীরতা বাড়ে; তার ফলে বিভাররা জলের নীচে তাদের শুকনো ‘দুর্গে' আরামে বাস করতে পারে৷

বিভার ধরার ফাঁদ

এই জলাভূমি অঞ্চলের বহু স্থানীয় পশুপাখি ও গাছপালা ইতিমধ্যেই বিপন্ন৷ এ পর্যন্ত সাড়ে ৩১ হাজার হেক্টার জঙ্গল নষ্ট করেছে এই বিভাররা৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে আর্জেন্টিনা সরকার বিভার সমস্যার অন্ত ঘটানোর জন্য একটি পথিকৃৎ প্রকল্প শুরু করেন৷ প্রকল্পের অর্থায়ন করে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি জিইএফ৷

তিয়েরা দেল ফুয়েগো প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকার পরিচালক এরিও কুর্তো বলেন, ‘‘আমরা এমন ফাঁদ পাতি, যাতে বিভাররা ধরা পড়ে ও প্রাণ হারায়৷ ক্যানাডা থেকে আমদানি করা এই ফাঁদগুলি আন্তর্জাতিক মানের, অর্থাৎ জীবগুলি অতি শীঘ্র মারা পড়ে৷''

এরিও কুর্তো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত একটি এলাকা পরিদর্শন করছেন৷ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে খানিকটা যাবার পর তিনি শিকারিরা যেখানে কাজ করছে, সেখানে পৌঁছালেন৷ কুর্তো সেখানে বিভারের হদিশ খুঁজে পেলেন – অর্থাৎ অন্তত একটি প্রাণী এখনও বেঁচে আছে৷

মার্কিন জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার অ্যান্ডারসন গত চার বছর ধরে আর্জেন্টিনার তিয়েরা দেল ফুয়েগো প্রদেশের রাজধানী উশুয়াইয়া-তে বাস করছেন৷ তিনি এই দ্বীপটির বিভার ও অপরাপর বাইরে থেকে আনা প্রাণীদের জীবনধারা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ অ্যান্ডারসন বিভার নিধন প্রকল্প সমর্থন করেন৷

বিভাররাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি

জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার অ্যান্ডারসন বললেন, ‘‘বিভারদের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল ওরা প্রকৃতির যে ক্ষতি করে৷ পাটাগোনিয়ার এই উপ-সুমেরু অঞ্চলের বনানী দেখলে বোঝা যায় যে, দশ হাজার বছর আগের তুষারযুগ যাবৎ এই বিভাররাই এই এলাকার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি৷''

ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর মতো পরিবেশ সংগঠনও বিভার হত্যার সপক্ষে মত দিয়েছে, কেননা বিভারদের অন্ত ঘটানোর আর কোনো কার্যকরি পন্থা নেই৷ তিয়েরা দেল ফুয়েগোর প্রাণীজগতের বান্ধব সমিতির প্রেসিডেন্ট রোসানা ভেলেজ-এর মত তার সম্পূর্ণ বিপরীত৷

তিয়েরা দেল ফুয়েগোর প্রাণীজগতের বান্ধব সমিতির প্রেসিডেন্ট রোসানা ভেলেজ জানালেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি, যেমন পুরুষ বিভারদের খাসি করা৷ আমরা এ বিষয়ে পশুচিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি৷ ওটা একটা খুব সহজ কাজ৷ এছাড়া এই বিভারদের সীমান্তের উভয় পারে বিশেষ বিশেষ সংরক্ষিত এলাকায় পুনর্বাসন করানো যায় ও সকলে মিলে তাদের উপর নজর রাখা যায়৷''

বিভাররা কাঠের ব্রিজ থেকে শুরু করে স্কি খেলার ঢাল বা ট্রাউট মাছের খামার অবধি সব কিছু ধ্বংস করে থাকে৷ কাজেই এখানে যে পর্যটকদের জন্য বিভার দেখার টুর পাওয়া যায় এবং সেটা ইকোটুরিজম বলে পাচার করা হয়, সেটাই আশ্চর্য৷

আপাতত অপেক্ষা করে দেখতে হবে, এই পাইলট প্রোজেক্ট থেকে আগামী দু'বছরে কী ধরনের ফল পাওয়া যায় – তারপর দেখা যাবে, তা চালিয়ে যাওয়া হবে কিনা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য