1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কঙ্গো নারীর জাতিসংঘ পুরস্কার

কাটরিন মাথেই/এপিবি৬ অক্টোবর ২০১৩

কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এলআরএ বিদ্রোহীদের দ্বারা নির্যাতিত নারীদের সহায়তা করার জন্য এ বছর জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছেন অ্যাঞ্জেলিক নামাইকা৷ তিনিও যে একদিন ঐ বিদ্রোহীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/19u7v
অ্যাঞ্জেলিক নামাইকাছবি: UNHCR/B. Sokol

৪৬ বছরের নারী অ্যাঞ্জেলিকা, যাঁর হাসি, কর্মোদ্যম হাজারো নারীকে অনুপ্রাণিত করেছে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলতে৷ এক-দুই বছর নয়, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লর্ডস রেসিসটেন্স আর্মি বা এলআরএ-র নির্যাতনের শিকার উগান্ডা, গণ প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান এবং আফ্রিকান রিপাবলিকের মধ্যাঞ্চলের সীমান্তে বসবাসকারী নারীরা৷ এসব এলাকায় নারীদের ত্রাস এলআরএ৷

এই বিদ্রোহীদের জন্য ৩৫ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷ কেননা প্রায়ই গ্রাম থেকে শিশুদের অপহরণ করে নিয়ে যায়, নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করে তারা৷

এ সব নারীদেরই সহায়তা দেন ‘সিস্টার' অ্যাঞ্জেলিক৷ পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাঁরা যাতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেন সে ব্যাপারে তিনি উৎসাহিত করেন নির্যাতিত নারীদের৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের উপার্জনের বিভিন্ন পন্থাও দেখিয়ে দেন তিনি, দেন প্রশিক্ষণ৷ তরুণী বয়সে এই বিদ্রোহীদের জন্যই গ্রাম ছেড়ে একটি ঝোপের ভেতর দীর্ঘ এক বছর গা ঘাকা থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি৷ তাই এই ঘর ছাড়া এবং পালিয়ে বেড়ানোর কষ্টটা ভালোই বোঝেন অ্যাঞ্জেলিক নামাইকা৷

2013 UNHCR Nansen Refugee Award EINSCHRÄNKUNG
আর্তের সেবায় নিয়োজিত ‘সিস্টার' অ্যাঞ্জেলিকছবি: UNHCR/I. Prestetun

বেশিরভাগ নির্যাতিতা নারীই গর্ভবতী হওয়ার পর তাঁদের পরিবারে ফিরে আসেন, যেখানে পরিবার ও সমাজ তাঁকে আশ্রয় দেয় না৷ মনিক এমনই একজন নারী, ১৮ বছর বয়সে যাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং দেড় বছর পর গ্রামে ফিরে বাবা-মার কাছে আশ্রয় না পেয়ে যাঁর ঠাঁই হয়েছিল সিস্টার বা সেবিকা অ্যাঞ্জেলিকের কাছে৷ সেখানেই লেখাপড়া শিখেছেন তিনি, সেইসাথে সেলাইয়ের কাজও৷ এখন স্কুল ইউনিফর্ম বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মনিক৷

সিস্টার অ্যাঞ্জেলিক অন্তত দুই হাজার নারীকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলেছেন৷ অ্যাঞ্জেলিক জানালেন, এই নারীরা যখন তাঁর কাছে এসেছিলেন, তখন মানসিকভাবে তাঁরা প্রায় মৃত, কোনো কিছু করার ভাবনা বা শক্তি তাঁদের ছিল না৷ সে কারণেই তিনি এসব নারীদের ভেতরকার প্রতিভাগুলো বের করে আনতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন৷ যদিও এসব নারীদের সহায়তা করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না৷

2013 UNHCR Nansen Refugee Award EINSCHRÄNKUNG
জার্মানির এক ‘নান' বা সন্ন্যাসী তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেছবি: UNHCR/I. Prestetun

তিনি মনস্থির করেছিলেন লক্ষ্যপূরণে পিছপা হবেন না৷ অ্যাঞ্জেলিক হেরে যাননি৷ গত ৩০ সেপ্টেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন৷ পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, পুরস্কার পেয়ে তিনিই একইসাথে আনন্দিত এবং বিস্মিত৷

গণ প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে সহিংসতা চলছে তার অবসান চান সিস্টার অ্যাঞ্জেলিক৷ নির্যাতনের শিকার এই নারীদের বেশিরভাগই তাঁদের শিশুদের অনাকাঙ্খিত মনে করেন এবং তাঁদের ভালোবাসা ছাড়াই বেড়ে ওঠে অনেক শিশু৷ আর এ কারণে এসব শিশুদের খুব সহজেই বিদ্রোহীরা তাদের দলে টেনে নেয় এবং এভাবেই চলতে থাকে একটি চক্র৷ স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘৃণার চক্রটির অবসান চান তিনি৷ এ কারণে নারীদের পাশাপাশি এসব শিশুদের দায়িত্বও এখন সিস্টার অ্যাঞ্জেলিকের কাঁধে৷

নির্যাতিত নারীদের সহায়তার বিষয়টিতে তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন জার্মানির এক ‘নান' বা সন্ন্যাসী, যিনি কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চরের ক্যাম্বিসা গ্রামে কাজ করেন৷ তিনি সাধারণত গ্রামের অসুস্থ মানুষদের দেখভাল করে থাকেন৷ তাঁর কাজ দেখেই আর্তের সেবায় উৎসাহিত হন অ্যাঞ্জেলিক এবং নিজেও একজন সন্ন্যাসী হতে চান৷

সিস্টার অ্যাঞ্জেলিক যে পুরস্কার পেয়েছেন তার মূল্য ৭৪ হাজার ইউরো৷ এটি দিয়ে তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান, যেখানে নির্যাতিতা নারীরা তাঁদের বানানো জিনিস বিক্রি করে উপার্জন করবেন এবং স্বাবলম্বী হবেন, যা তাঁদের কষ্টকর অতীতকে ভুলতে হয়ত একটু হলেও সাহায্য করবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য