1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের শততম বার্ষিকী

৮ মার্চ ২০১০

৮ মার্চ পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শততম বার্ষিকী৷ কিন্তু রাজনীতি, কর্মসংস্থান এবং সম্পত্তিতে অধিকারের বিচারে এখনও বিশ্বের সবচেয়ে কম প্রতিনিধিত্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নারীদের৷

https://p.dw.com/p/MNRk

‘‘সমঅধিকার, সমান সুযোগ ও সবার জন্য অগ্রগতি’’ – এবারের নারী দিবসের প্রধান প্রতিপাদ্য : বান কি-মুন৷''

সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ইউএনডিপি প্রকাশিত ‘এশিয়া প্যাসিফিক হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট' প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবজ্ঞা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নারীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পুরো বিশ্বে রাজনীতি, চাকরি ও সম্পত্তির অধিকারের দিক দিয়ে বঞ্চিত হয়ে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে রয়েছেন এই অঞ্চলটির নারীরা৷ নারীর কম অংশগ্রহণ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত করছে৷

‘‘ক্ষমতা, কন্ঠ এবং অধিকার : এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের লিঙ্গীয় সমতার জন্য মোড় পরিবর্তন'' শীর্ষক এক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রধান হেলেন ক্লার্ক বলেন, সামগ্রিক উন্নয়ন, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও উন্নয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

ক্লার্ক আরও বলেন, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিমালা প্রয়োজন৷ যাতে নারী-পুরুষ উভয়ই চাকরির ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হন৷

NO FLASH Weltfrauentag Indien
ছবি: AP

প্রতিবেদনে নারীদের পিছিয়ে থাকার প্রধান তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এগুলো হল - অর্থনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক অবস্থান, আইনগত অধিকার৷ এছাড়া রাজনীতি ও সামাজিক আচরণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কিভাবে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে এতে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া বর্তমানে একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে এবং উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ করে এখানে ইতিবাচক সাফল্য অর্জন সম্ভব৷

বৈষম্য ব্যয়বহুল :

প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশ গ্রহণের কারণে এই অঞ্চলটিকে গুণতে হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় নারীর কর্মসংস্থান ৭০ শতাংশ করা গেলে মাথা পিছু দেশগুলোর ‘জিডিপি' বা গড় প্রবৃদ্ধি বছরে ২ থেকে ৪ শতাংশ বেড়ে যাবে৷ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- কম্বোডিয়া, চীন, ভিয়েতনামে চাকরিজীবী নারী ৫৩ শতাংশ আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ যেমন- ভারত, পাকিস্তানে তা মাত্র ৩৫ শতাংশ৷ অঞ্চলদুটিতে নারীর কর্মসংস্থানের এই বৈষম্যের সঙ্গে তাদের প্রবৃদ্ধির বিষয়টিকে তুলনা করা যেতে পারে৷ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় অনেক বেশি৷

আইনত নারী-পুরুষের বেতন সমান হবার কথা থাকলেও এই অঞ্চলগুলোতে দেখা যায় নারীরা অপেক্ষাকৃত কম বেতন পাচ্ছে৷ আর এই পার্থক্য ক্ষেত্রবিশেষ ৫৪ থেকে ৯০ শতাংশ৷ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নারীরা ওইসব চাকরি করছেন যেখানে পুরুষেরা কাজ করতে চাননা এবং তাদের বেতন খুবই কম৷

লিঙ্গ সূচকে এশিয়া প্যাসিফিকের অবস্থান :

বিশ্বে লিঙ্গ বৈষম্যের সূচকে আফ্রিকার ‘সাব-সাহারা' দেশগুলোর পরপরই প্রায়ই আসে দক্ষিণ এশিয়ার নাম৷ যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং চাকরিতে পূর্ব এশিয়া ভাল অবস্থানে রয়েছে৷ দক্ষিণ এশিয়ার প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের অর্ধেকই নিরক্ষর৷ কিন্তু পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নারীদের শিক্ষার হার অনেক ভাল, বৈশ্বিক গড় হারের চেয়েও তা বেশি৷

দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের গড় আয়ু ওই অঞ্চলের পুরুষদের তুলনায় প্রায় পাঁচ বছর কম৷ সন্তান জন্মের সময়ে এখানে নারীদের মৃত্যুহার প্রতি এক লাখে পাঁচশ৷ যা কিনা আফ্রিকার সাব-সাহারার দেশগুলো ছাড়া পৃথিবীর অন্য যে কোনো অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে বেশি৷

রাজনীতিতে নারীর অবস্থান :

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অবস্থান আরব অঞ্চলের পর বিশ্বে সবচেয়ে কম৷ নারী আইনজীবী নেই পৃথিবীতে এমন ছয়টি দেশের মধ্যে চারটিই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের৷

নারীরা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে :

ভ্রুণ অবস্থাতেই নারী শিশুর গর্ভপাত করে ফেলার কারণে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বর্তমানে ছেলে সন্তানের জন্ম হার বেশি৷ ফলে কমে যাচ্ছে নারীর সংখ্যা৷ পূর্ব এশিয়ায় এই জন্মহারের বৈষম্য বিশ্বে সবচেয়ে বেশি৷ এখানে ১১৯টি ছেলে শিশুর জন্মের বিপরীতে মেয়ে শিশু জন্মায় ১০০টি৷

এছাড়া স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও পুষ্টির অভাব এবং বৈষম্যমূলক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে নারীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে৷ বিশ্বে এইভাবে ‘জন্ম না নেওয়া' কিংবা ‘মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে' অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রায় ১০০ মিলিয়ন নারীর প্রায় ৮৫ মিলিয়নই হারাচ্ছে চীন এবং ভারত থেকে৷

আইন পরিস্থিতি :

এ অঞ্চলে আইন নারীদের সহায়ক নয়৷ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন- সহিংসতা থেকে নারীদের সুরক্ষা, সম্পত্তির মালিকানা প্রভৃতিই পূরণ হচ্ছে না৷ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় অর্ধেক দেশে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬০ শতাংশ দেশে পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারীকে রক্ষায় কোন আইনই নেই৷ এমনকি সম্পদের অধিকারের ক্ষেত্রে সমান অধিকারেরও কোন বিধান নেই৷

জাতিসংঘ সংস্থাটির এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং চিহ্নিত সমস্যাগুলো দূর করতে হবে৷ পাশাপাশি জোর দিতে হবে নারীর উন্নত স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে৷

প্রতিবেদক : আসফারা হক

সম্পাদনা : মুনীর উদ্দিন আহমেদ