1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আল সালাম গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযান

২৩ মে ২০১৯

জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া (এনআরডাব্লিউ) রাজ্যের ১১ শহরের ৪৩ স্থানে বুধবার ভোরে একযোগে অভিযান চালায় পুলিশ৷ ‘আল-সালাম-৩১৩' নামে একটি সংগঠিত বাইকার দলের বিরুদ্ধে ছিল ওই অভিযান৷

https://p.dw.com/p/3IwnS
ছবি: picture-alliance/dpa/KDF-TV & Picture 2019/S. Witte

অভিযানে পুলিশ আল-সালাম গ্রুপের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে৷ গ্রুপটির বেশিরভাগ সদস্যই ইরাকি ও সিরিয়ান বংশোদ্ভুত শিয়া মুসলিম৷ তাঁরা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চোরাচালান এবং পাসপোর্ট জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

একইসঙ্গে তাঁরা ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়িত বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে৷ ‘‘বুধবারের বড় এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আল-সালাম-৩১৩ বাইকার দল সম্পর্কে প্রমাণ সংগ্রহ ও প্রস্তুত করা৷ অভিযানের প্রস্তুতি চলেছে বিগত কয়েক মাস ধরে,’’ বলেছেন এনআরডাব্লিউ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হ্যারবার্ট রয়েল৷

এই পর্যন্ত আল-সালাম গ্রুপের ৩৪ সদস্যকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ, যাদের সবাই ইরাকি ও সিরীয় বংশোদ্ভুত৷ ‘সংগঠিত অপরাধকে সমূলে' উৎপাটনের উদ্দেশ্যে অভিযান চালানোর কথা বলেছেন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী৷

পুলিশি অভিযান চালানোর আগে থেকেই এই গ্রুপের সদস্যদের অপরাধ ও হুমকি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিল ডয়চে ভেলের একটি টিম৷ ইরাকি বংশোদ্ভুত একজন নারী তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, আল-সালাম গ্রুপের সদস্যরা তাঁদেরকে পশ্চিমা পোশাক পরা নিয়ে হুমকি দিয়েছিল৷

গত ১০ মে এমন হুমকির বিষয়টি রাজ্যের প্রধান তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হলেও ‘গোপনীয় বিষয়’ হিসাবে অভিহিত করে এক্ষেত্রে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি তারা৷

‘আলসালাম-জার্মানি’ নামে একটি ফেসবুক পাতা রয়েছে ‘আল-সালাম-৩১৩’ গ্রুপের, যেখানে ২০১৭ সালের মে মাসের পর থেকে আর কোনো পোস্ট দেওয়া হয়নি৷ সেখানে বাইক চালানোর বেশ কিছু ভিডিও রয়েছে৷

ইউটিউবে গ্রুপটির সাত মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও রয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট পোশাক ও সানগ্লাস পরা অবস্থায় দেখা যায় এর সদস্যদের৷ তাতে বিলাসবহুল গাড়ি, মোটরবাইকও প্রদর্শন করেছে আল-সালাম গ্রুপের সদস্যরা৷

ভিডিওতে গ্রুপটির নেতা নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক৷ আমি সালাম ক্রু ৩১৩-এর আবু মেহদি৷’’

সেখানে আল-সালাম গ্রুপের নেতা নিজের নাম আবু মেহদি হিসেবে উল্লেখ করলেও তার নাম মোহাম্মদ বুনিয়া বলে পরবর্তী অনুসন্ধানে উঠে আসে৷

Screenshot - Salam 313 von FRBI
ইউটিউব ভিডিওর একটি স্ক্রিনশটছবি: YouTube/FRBI

ভিডিওতেই তিনি জানান, ২০১৬ সালে গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে কার্যক্রম থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি৷

‘‘কোনো মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই,’’ বলেন গ্রুপের নেতা৷ এরপর ইউরোপে আসা ইরাকিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘যারা ইউরোপে এসেছে, তাঁদের অবশ্যই কাজ করতে হবে৷’’

এরপর আবু মেহদি বলেন, এই গ্রুপ ‘মানুষকে সাহায্যের জন্য, সমস্যা তৈরির জন্য নয়৷’ একইসঙ্গে হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের কাউকে কাউকে ব্যাপক পিটুনি দেওয়া দরকার, আরব স্টাইলে৷ এবং তোমরা জানো, আমি এর মাধ্যমে কী বুঝাতে চেয়েছি৷’’ কিছুটা সময় নিয়ে আবু মেহদি বলেন, এই গ্রুপ কোনো মাফিয়া দল নয়৷

গ্রুপের নেতার আবু মেহেদি ডাকনামের বিশেষ ধর্মীয় অর্থ রয়েছে৷ শিয়া ধর্মমতে: ইমান ‘মাহদি’ বা ‘মেহেদি’ শেষ বিচারের দিনের আগে পৃথিবীতে আসবেন এবং অশুভকে দূর করবেন৷

আর এই গ্রুপের নামে ৩১৩ সংখ্যার সঙ্গেও ধর্ম বিশ্বাসের মিল রয়েছে৷ শিয়ারা বিশ্বাস করেন, ৩১৩ জন অনুসারী নিয়ে পৃথিবীতে পুনরুত্থান হবে ইমাম মেহেদির৷

এরা কি ইরাকি ‘মাহদি আর্মির’ অনুগামী?

এনআরডাব্লিউ'র অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় বলছে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আল-সালাম-৩১৩ গ্রুপ কেবল সাধারণ অপরাধীদের দল নয়৷ এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্ম-প্রভাবিত অপরাধের সংশ্লেষ থাকতে পারে৷ এরা ইরাকের ধর্মীয় জঙ্গিদের সাহায্য করছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে৷

আল-সালাম গ্রুপটি ইরাকের শিয়া ধর্মীয় নেতা মুকতাদা আল-সদরের অনুগত ‘মাহদি আর্মির’ সঙ্গে সম্পর্কিত বলেও গুজব রয়েছে৷ এর সদস্যরা এক ধরনের সাদা পরিচয়চিহ্ন পরে থাকেন, যার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় মাহদি আর্মির৷

Irak Muqtada as-Sadr
মুকতাদা আল-সদরছবি: AFP/H. Madani

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, ২০০৩ সালে অ্যামেরিকা ইরাক আক্রমণের পর মাহদি আর্মি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এই সংগঠনের রয়েছে কয়েক হাজার সদস্য৷ ওই হামলায় ইরাকের পুলিশ ও আর্মি ভেঙে যাওয়ার পর শূণ্যস্থান পূরণ করা হয় মাহদি আর্মির সদস্যদের দিয়ে৷ ইরাকে মাহদি আর্মির পাশাপাশি বেশ কিছু মিলিশিয়া বাহিনী এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এখনো৷

এসথার ফেলডেন, মাটিয়াস ফন হাইম/এমবি