1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশ্বিনেই এলো নবান্নের সুঘ্রাণ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা১৪ অক্টোবর ২০১৩

ঐতিহাসিক মহাকরণ ভবন নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতার কেন্দ্র আপাতত হুগলির অন্য পাড়ে বহুতল নবান্ন ভবন৷

https://p.dw.com/p/19yYm
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যে সমৃদ্ধ কলকাতা শহরের যে ডালহৌসি এলাকা হেরিটেজ অঞ্চল বলে পরিচিত, সেখানকার ঐতিহ্যের প্রধানতম স্মারক, রাইটার্স বিল্ডিং অর্থাৎ মহাকরণ ভবন৷ তার সঙ্গে আকৃতিতে বা চেহারায় কোনো মিল নেই হাওড়ার মন্দিরতলা এলাকায় হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স, সংক্ষেপে এইচআরবিসি সংস্থার তৈরি করা আধুনিক ১৫ তলা বাড়িটির৷ এই বাড়িতেই সপার্ষদ উঠে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গত ৫ অক্টোবর৷

Verkehrsknoten vor Nabanna Gebäude in Kalkutta
‘নবান্ন’ থেকে দেখা কলকাতা শহরছবি: DW/S. Bandopadhyay

মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ঘর থাকছে এই বহুতল বাড়ির একেবারে উপরের তলায়৷ সেই ঘরের জানলা দিয়ে চোখে পড়বে হুগলি নদীর বিস্তার৷ আর লাগোয়া ঘরটি বৈঠকখানা ঘরের কায়দায় সোফা দিয়ে সাজানো, যেখানে বিশিষ্ট অভ্যাগতদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপচারিতা করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এই ঘরটি গিয়ে খুলছে চমৎকার সাজানো একটি বাগানে৷ সেই শূন্য উদ্যানের আকাশছোঁয়া উচ্চতা থেকে পাখির চোখে দেখা যাবে কলকাতা শহরকে৷ দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা অনেক দূরের হাওড়া ব্রিজও চোখে পড়বে আকাশ পরিষ্কার থাকলে৷

১৫ তলাতেই আছে কনফারেন্স রুম, যেখানে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বা প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের একটা অংশ থাকছে ১৪ তলায়৷ এক তলায় থাকছে আধুনিক সাজে সাজানো এবং নিখুঁত নিরাপত্তাবিধি মেনে তৈরি রিসেপশন৷ কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা না থাকলে সেই রিসেপশনেরও চৌকাঠ পার হওয়া যাবে না৷ নিরাপত্তা এবং বাড়ির সার্বিক দেখভাল ও তদারকির জন্য তিনটি বেসরকারি সিকিউরিটি ও ফেসিলিটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এরা কলকাতা ও বেঙ্গল পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে৷

Nabanna neues Geschäftsgebäude in Kalkutta
নবান্নর ভেতরছবি: DW/S. Bandopadhyay

নবান্ন বাড়িটির অন্যতম আকর্ষণ, পুরনো দিনের বাড়ির কায়দায় এর মাঝখানে আগাগোড়া খোলা গোল উঠোন, এবং তাকে ঘিরে বারান্দা৷ সরকারি অফিসের মলীন চেহারার বদলে সারা বাড়িতেই একটা ঝকঝকে কর্পোরেট সংস্কৃতির ছাপ৷ বাড়িটিতে ভিআইপি এবং মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের জন্য দুটি আলাদা লিফট ছাড়াও আছে সাধারণ কর্মীদের জন্য আরও তিনটি লিফট৷

স্বাধীন ভারতে রাজধানী এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্র কলকাতা থেকে দিল্লি চলে গেলেও কলকাতার ঐতিহাসিক মহাকরণ ভবনের গুরুত্ব তাতে কিছুমাত্র কমেনি৷ ক্ষমতার কেন্দ্র বলতেই জনমানসে ভেসে উঠত কালো ছাদ এবং লাল ইঁটের তৈরি ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতির রাজকীয় এই বাড়িটি৷ পশ্চিমবঙ্গে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বামপন্থীদের শাসনের সমার্থক হয়ে উঠেছিল মহাকরণের ওই লাল বাড়ি৷

সেই মহাকরণ থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার কেন্দ্র সরিয়ে নিয়ে হুগলি নদীর অপর পাড়ে, হাওড়ার মন্দিরতলায় এক বহুতল বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক মানুষকেই অবাক করেছিল৷ রাজনৈতিক বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা শুরু করেছিলেন বাদশা মহম্মদ বিন তুঘলকের খামখেয়ালিপনার, যিনি রাজধানী অন্যত্র সরানোর হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কুখ্যাত৷ সিপিএম-এর নেতারা ব্যাঙ্গচ্ছলে নবান্ন-র নাম দিয়েছেন ‘জলসাঘর'৷ প্রশ্ন তুলেছেন, রাজ্য সরকার যখন দরকারি খরচ সামলে উঠতে পারছে না, তখন সরকারি তহবিল থেকে কত কোটি টাকা নষ্ট হলো এই বাসাবদলে?

Indien Das Writers Building Kalkutta
ঐতিহ্যের স্মারক রাইটার্স বিল্ডিং অর্থাৎ মহাকরণ ভবনছবি: Gemeinfrei

অথচ যাঁরা একটু তলিয়ে ভেবেছেন, তাঁরাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার তারিফ করেছেন৷ কারণ অপরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারিত হওয়া, স্থাপত্যরীতির তোয়াক্কা না করে কুৎসিত দর্শন আধুনিক অ্যানেক্স বিল্ডিং সংযোজিত হওয়া মহাকরণের উপর মানুষের চাপ যেভাবে বাড়ছিল, প্রশাসনিক কেন্দ্রটি না সরিয়ে এই ভবনের সংস্কার সম্ভব ছিল না৷ অথচ প্রায়শই মহাকরণের ঘরের সিলিং থেকে খসে পড়ছিল চাঙড়৷ তার উপর পরিকল্পনাবিহীন এবং বিপজ্জনক বিদ্যুতের সংযোগ যে কোনো দিন আগুন লাগিয়ে দিতে পারত এই ঐতিহ্যবাহী ইমারতে৷

কাজেই অনেকের কাছেই এটা খুব যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে৷ অন্যদিকে হাওড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীসহ দপ্তর ও সচিবালয় কলকাতা থেকে হাওড়ার ঠিকানায় চলে যাওয়ায়৷ অনেকে মনে করছেন, এই সুবাদে অবহেলিত হাওড়ার পরিকাঠামোর অন্তত কিছুটা উন্নতি হবে৷ আবার অনেকেই আশঙ্কিত, মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য ভিভিআইপিদের যাতায়াতের ঠ্যালায় এবং নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য