1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসামের সামনে কঠিন ভবিষ্যৎ

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতের সংসদে পাশ হয়ে আইন হতে যাবার পথে৷ এর ফলে, নির্মম অতীতের পুনরাবৃত্তি হতে পারে আসামে৷

https://p.dw.com/p/3UkLk
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

ভারতীয় সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই ধাপেই পাশ হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল৷ এরপর থেকেই উত্তরপূর্ব ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ৷ কিন্তু প্রতিবাদের জেরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে আসাম৷

প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি সদ্য পাশ হওয়া বিলের অন্তর্নিহিত সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেই এই প্রতিবাদ? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ? সম্প্রতি পাশ হওয়া বিলটি আসলেই বা কি?

আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি ও খ্রিষ্টানধর্মীদের থেকে অবৈধ তকমা তুলে তাদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভের পথ সহজ করে তোলে৷ এই বিল পাশ হবার পর থেকেই উত্তাল উত্তরপূর্ব ভারত, বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু আসাম৷

প্রতিবাদীদের ধারনা, এই বিল আইনে পরিণত হলে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ থেকে বাড়বে এই অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ৷ ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় জানান, এই বিলের আওতায় থাকবে না মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড সহ আরো বেশ কয়েকটি আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল৷ কিন্তু আসামের একটি জেলা বাদ দিয়ে সর্বত্রই কার্যকরী হতে চলেছে এই বিল৷

কেন জ্বলছে আসাম?

নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদ প্রক্রিয়া শেষ হলে দেখা যায় সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ মানুষ৷ পরিসংখ্যান বলছে, এই সংখ্যার মোট ১২ লাখই হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ ১৯ লাখের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই বাংলাভাষী৷ সব মিলিয়ে, নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদ প্রক্রিয়াকে নিয়ে মোটের ওপর খুশিই ছিল আসামের উগ্রজাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীরা৷ গোল বাধল যখন এই সমস্যায় এসে জোটে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, যার মূলে নেই ভাষিক পরিচিতি৷ বরং এই বিলের হাত ধরে প্রথমবার ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব লাভের জন্য আইন নিয়ে এলো সরকার৷

এদিকে, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীরা কড়া বার্তায় জানাচ্ছেন যে এই রাজ্যগুলিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চালু করবেন না তারা৷ ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক, এমনটা তারা চান না বলেই জানিয়েছেন তারা৷ অন্যদিকে আসামে সংগঠিত প্রতিবাদের কেন্দ্রে নেই এই বিলের সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য৷

বরং, আসামের প্রতিবাদ নতুন করে মনে করাচ্ছে ১৯৭৯-১৯৮৫ সালের দিনগুলির কথা, যখন গোটা আসামে উত্তাল হয়েছিল ‘বঙাল খেদা' (বাঙালি তাড়াও) আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে, অসমীয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাভাষীরা৷ প্রতিবাদের রোষ থেমে নেই সাধারন জনগণের ওপর৷ প্রতিবাদী জনতা চড়াও হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে রাজ্যপালের অফিসেও৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাশ্মীর থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে আনা হয়েছে আসামে৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণও হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷

Shabnam Surita Dana
শবনম সুরিতাছবি: Melissa Bach Yildirim/AU Foto

সরকারী তথ্য জানাচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে আসা এই ছয় ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজারের কিছু বেশি৷ অন্যদিকে, অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠন আসু (অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) বারবার বলে এসেছে যে শুধু আসামেই বাস করছে অন্তত ৩০ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি৷ কিন্তু এই তথ্যের সত্যতা কখনোই কেউ যাচাই করে উঠতে পারেনি৷

পরিস্থিতি দমনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও প্রতিবাদীদের আশ্বাস দিয়েছেন যে আসামের জনগণের জন্য বহাল থাকবে আসাম চুক্তির ষষ্ঠ দফা, যার মাধ্যমে এই পরিস্থিতিতে অগ্রগণ্য হবে অসমীয়া মানুষের রাজনৈতিক, ভাষিক, সাংস্কৃতিক ও জমির ওপর অধিকার৷ কিন্তু আসামে বসবাসকারী অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীদের অধিকার, যারা বিশেষ করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তাদের নিয়ে কেউ কিছু বলছে না৷

সত্তরের দশকের শেষ ও আশির দশকের গোড়ায় আসামে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তারই এক অন্য সংস্করণ বর্তমান আসাম৷ প্রথমে বিদেশি বিতারণের জুজু দেখিয়ে অসমীয়া-বাঙালি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরূপ মনোভাবের জন্ম দেওয়া ও পরে সেই আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সুযোগের সদ্ব্যবহার- সবই যেন অতীতের পুনরাবৃত্তি৷

ফলে, এই চলমান প্রতিবাদের ছোঁয়া এসে পড়তে পারে আসামে বসবাসকারী বাঙালি ও অসমীয়াদের সম্পর্কে৷ শুধু তাই নয়, অমুসলিমদের ভারতে নাগরিকত্ব দানের বিষয়ে কেমন হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া, তা নির্ধারণ করবে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে আসাম বা ভারতের সম্পর্কও৷