1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিবাসন নিয়ে পূর্ব-পশ্চিমের কোঁদল ঘুচল না

১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির নেতৃবর্গ আগের মতোই উদ্বাস্তু পুনর্বণ্টন পরিকল্পনার বিরোধী, যদিও এই পরিকল্পনার প্রতি অধিকাংশ ইইউ দেশের সমর্থন আছে৷ ফলে ইইউ-তে বাস্তবিক সংহতি আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2pQdu
Belgien EU Gipfel in Brüssel
ছবি: picture-alliance/W. Dabkowski

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষবৈঠকে ইইউ নেতারা শুক্রবার সকালেও অভিবাসন প্রয়াসীদের বণ্টন সংক্রান্ত আলোচনায় কোনো প্রগতি অর্জন করতে পারেননি৷ এক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে যথারীতি ব্যাপক মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে৷

দু'ঘণ্টাব্যাপী উত্তেজিত বিতর্কে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের নেতারা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন: তাঁরা উদ্বাস্তু পুনর্বণ্টন কোটা মেনে নেবেন না৷ গ্রিস ও ইটালির মতো ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলি ব্যাপক উদ্বাস্তু আগমনের ফলে সমস্যায় পড়লে, ঐ দু'টি দেশ থেকে কিছু পরিমাণ উদ্বাস্তু সরিয়ে একটি নির্দিষ্ট কোটা অনুযায়ী তাদের ইইউ-এর অন্যান্য দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যা ইইউ দেশগুলির এক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দ্বারা গৃহীত হয়৷

শুক্রবার সকালের অধিবেশনের পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রিপোর্টারদের বলেন যে, আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যেই ইইউ-কে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, কেননা গ্রীষ্মে আবহাওয়া কিছুটা ভালো হলেই আবার ভূমধ্যসাগর পার হয়ে অভিবাসন প্রয়াসীদের স্রোত শুরু হবে, বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ তার মধ্যে সমাধান খোঁজা খুব সহজ হবে না, বলে ম্যার্কেলের ধারণা৷

‘‘আমাদের এখনো অনেক কিছু করার আছে,'' বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘বিভিন্ন পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি, কিন্তু আগামী জুন অবধি কাজ করে যাওয়ার একটা স্পষ্ট কর্তব্য রয়েছে৷''

ভূমি ও সাগরপথে ইইউতে অভিবাসী প্রবেশের জনপ্রিয় রুট
ভূমি ও সাগরপথে ইইউতে অভিবাসী প্রবেশের জনপ্রিয় রুট

‘অত্যন্ত বিভাজনমূলক' কোটা প্রণালী

উদ্বাস্তু কোটা নিয়ে ইইউ-এর অভ্যন্তরীণ বিতর্কে এ সপ্তাহে ইন্ধন যোগান ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক, যিনি ঐ বাধ্যতামূলক কোটা প্রণালীকে ‘‘অতিমাত্রায় বিভাজনমূলক'' ও ‘‘অকার্যকর'' বলে অভিহিত করেন৷ চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশ টুস্কের মন্তব্যকে স্বাগত জানালেও, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও অপরাপর দেশ তার সমালোচনা করেছে৷

শুক্রবার জার্মান বেতারকেন্দ্র ডয়েচলান্ডফুঙ্ক-এর একটি সাক্ষাৎকারে ইইউ-এর বাজেট কমিশনার গ্যুন্টার ওয়টিঙ্গার টুস্কের মন্ত্যব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘‘আমি ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্টকে গভীরভাবে সম্মান করি; কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি স্পষ্টতই ভুল করছেন৷'' ইউরোপ অভিমুখে ব্যাপক অভিবাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সংহতি প্রদর্শন করতে হবে, বলে ওয়টিঙ্গারের অভিমত৷

বহির্সীমান্ত শক্ত করা

কিন্তু তথাকথিত ভিসেগ্রাদ গোষ্ঠীর চারটি দেশ – অর্থাৎ চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া – ইইউ-এর অপর একটি প্রকল্পের পূর্ণ সমর্থন করে, যার উদ্দেশ্য হলো লিবিয়ায় সীমান্তরক্ষা আরো জোরদার করা৷ লিবিয়াই বর্তমানে অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের ইউরোপে আসার মূল পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

ইটালির নেতৃত্বাধীন এই প্রকল্পে ভিসেগ্রাদ দেশগুলি সাড়ে তিন কোটি ইউরো সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়৷ এই প্রস্তাবের মাধ্যমে তারা সম্ভবত দেখাতে চায় যে, ইইউ-এর অভিবাসন সমস্যা সমাধানে তারা সক্রিয় অবদান রাখছে৷

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান বলেন যে, ইইউ-এর বহির্সীমান্ত রক্ষার নীতি হল একমাত্র নীতি, যা ‘‘বাস্তবে কার্যকরি হয়েছে ও প্রত্যাশিত ফল এনে দিয়েছে৷''

রুটে: ‘লজ্জাকর' প্রস্তাব

ওলন্দাজ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে ভিসেগ্রাদ দেশগুলির প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, যে সব দেশ উদ্বাস্তু পুনর্বণ্টন কোটা গ্রহণ করেছে, এই প্রস্তাব তাদের উৎক্রোচ দেবার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়৷

‘‘অর্বান যা করছেন, তা লজ্জাকর!'' শীর্ষবৈঠক সমাপ্ত হবার পর রুটেকে বলতে শোনা যায়৷ ‘‘এটা করতে দিলে ইইউ এমন একটা জায়গা হয়ে দাঁড়াবে,যেখানে যে যার পছন্দমতো বাজার করবে'' – অর্থাৎ ইইউ-এর নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে যা ভালো লাগে, তা নেবে, কিন্তু যা অপছন্দ, তা প্রত্যাখ্যান করবে৷

উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকতে দেওয়ার বিরুদ্ধে পূর্ব ইউরোপের সদস্যদেশগুলির বিরোধিতার মুখ্য নেতা হলেন অর্বান৷ বিশেষ করে মুসলিমরা গোটা ইইউ এলাকার পক্ষে ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে, বলে তিনি অতীতে মত প্রকাশ করেছেন৷

শুক্রবার শীর্ষবৈঠকে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পাবে; এছাড়া ইউরো এলাকার সংস্কার সম্পর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ যে পরিকল্পনা দিয়েছেন, তা নিয়েও আলোচনা হবে৷

ইউ নেতৃবর্গ বৃহস্পতিবারেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলতি কড়া অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মেয়াদ আরো ছ'মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ও একটি নতুন ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী সৃষ্টির পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন৷

এসি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)