1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিরাশিয়া

ইউক্রেনের জন্য পদক বিক্রি নোবেলজয়ী রুশ সাংবাদিকের

১৯ জুন ২০২২

নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাটভ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য তার নোবেল পদক নিলাম করছেন৷ তার মতে, মস্কোর সামরিক অভিযানকে রাশিয়ার নাগরিকদের অধিকাংশই সমর্থন করেন না৷

https://p.dw.com/p/4CuOv
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাটভ
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাটভছবি: Sergey Satanowsky/DW

ক্রেমলিনের সমালোচক বলে পরিচিত সংবাদপত্র‘নোভায়া গাজেটা'-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা  এবং মুখ্য সম্পাদক মুরাটভ৷ ১৯৯৩ সালে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থ দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল৷

বছরের পর বছর ধরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ চালিয়ে গিয়েছে নোভায়া৷ কিন্তু মার্চ মাসে এটি শেষ পর্যন্ত তার অনলাইন এবং মুদ্রণ কার্যক্রম বন্ধ করে৷ রাশিয়ায় ভুয়া খবর প্রচারের শাস্তি ১৫ বছরের কারাদণ্ড৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন স্বাক্ষর করায় এমন একটি বিল আইনের মর্যাদা পেয়েছে চলতি বছরের শুরুর দিকে৷ এরপর রাশিয়ায় ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া' গণমাধ্যমের তালিকায় যোগ হয়  ‘নোভায়া গাজেটা'-র নাম৷

‘‘আমার দেশ অন্য একটি দেশ ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে৷  সেখানে এখন এক কোটি ৫৫ লাখ শরণার্থী রয়েছে৷ আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভেবেছি৷ তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রত্যেকেরই প্রিয় কিছু দেয়া উচিত,'' রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন মুরাটভ৷

স্বর্ণপদক নিলাম করার মানে হল শরণার্থীদের ভাগ্যের শরিক হলেন মুরাটভ নিজেও৷ কারণ শরণার্থীরা তো তাদের ‘অতীতের স্মৃতি' হারিয়ে ফেলেছেন৷

মুরাটভের মত, ‘‘এখন তাদের ভবিষ্যত কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে৷ আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রয়েছে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি আমরা বলতে চাই এবং দেখাতে চাই তা হল মানব সংহতি৷''

পুরস্কার কমিটির সহায়তায় বিশ্ব শরণার্থী দিবসে (২০শে জুন) হেরিটেজ অকশনে  মুরাটভের পদক বিক্রি করা হচ্ছে৷ ফিলিপাইন্সের মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাটভকে ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়ে গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করায়' ২০২১ সালের শান্তি পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছিল নোবেল কমিটি৷ বিশ্বের যে সাংবাদিকরা প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও নৈতিক সাংবাদিকতার চর্চা করছেন, তাদের প্রতিনিধি হিসাবে রেসা ও মুরাটভের এই স্বীকৃতি বলে জানাচ্ছে নোবেল কমিটি৷

মুরাটভ তার সম্মান উৎসর্গ করেছেন নোভায়া গাজেটার ছয় জন সাংবাদিককে৷ সেই সাংবাদিকদের তাদের কাজের জন্য হত্যা করা হয়েছে৷ হত সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সর্বোচ্চ সমালোচকরাও৷

তিনি মুক্ত গণমাধ্যমের অভাব রয়েছে রাশিয়ায়৷ প্রতিবাদের ফলে  রাষ্ট্রের তরফে নেমে আসা তীব্র আঘাতের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতা নেই, মতামতের প্রকৃত বিনিময় নেই, মতপ্রকাশের প্রকৃত স্বাধীনতা নেই, এতেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের কাছে কোনো বিকল্প নেই৷ রাষ্ট্রের প্রচারকারীরা যা বলছে, জনগণকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে৷কোনো মুক্ত গণমাধ্যম নেই৷ যে কোনও বিবৃতির জন্য, একটি প্রশাসনিক বা ফৌজদারি মামলা শুরু করা হচ্ছে৷''

মুরাটভের কথায়, ‘‘আধুনিক রাশিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা অসম্ভব৷ তবে কন্টেন্ট দেয়া সম্ভব–যেমন, ইউটিউব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে৷ এছাড়া ভিপিএন পরিষেবার মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব৷ কিন্তু প্রতিদিন আরো কঠিন হচ্ছে এগুলি৷''

যুদ্ধের মাঝেই দেশে ফিরছেন যে শরণার্থীরা

বেশিরভাগ রুশ নাগরিক মামলাকে সমর্থন করে–তিনি সরকারের এ গবেষণায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন৷

মুরাটভের বক্তব্য, ‘‘যখন তারা ফোন করে জিজ্ঞাসা করে,  ‘আপনি কি প্রেসিডেন্ট পুটিনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন?' অথবা ‘আপনি কি রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন করেন?' অথবা আপনি কি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেন?'-ব্যক্তিটি কী বলবে বলে আপনার মনে হয়?''

মুরাটভ বিশ্বাস করেন যে বাস্তবে, যুদ্ধের প্রতি সমর্থন, প্রায়শই ল্যাটিন বর্ণমালা থেকে ‘জেড'-এর প্রদর্শন দ্বারা প্রদর্শিত হয়৷ তার মতে, ‘‘আপনি যদি এখন মস্কোর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, আপনি দেখতে পাবেন যে রাস্তায় কার্যত কোন ‘জেড' অবশিষ্ট নেই৷''

মস্কোর দাবি, তারা সামরিক হুমকি প্রশমিত করতে এবং রুশভাষীদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়েছে৷ কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধের জন্য একটি ভিত্তিহীন অজুহাত হিসেবে এটি দেখায়৷তিনি বলেন, এমনকি ক্রেমলিন স্বীকার করেছে যে জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অভিযানকে সমর্থন করে না৷

ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব

মুরাটভ বলেন, যারা বিশ্বাস করেন যে অভিজাতদের মধ্যে বিভক্তির ফলে রাশিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে তারা ভুল করেছেন৷ তার কথায়, শক্তিগুলো কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না৷ ক্ষমতায় থাকা লোকদের কোথাও যাওয়ার নেই৷ ইউরোপ নয়, আমেরিকা নয়, অন্য কোথাও তাদের অনুমতি নেই৷ সাবমেরিনের ক্রু-দের মতো অবস্থা,  পালানোর পথ নেই৷ তারা প্রেসিডেন্টকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ৷''

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে যদি জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে রুশ নাগরিকেরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেতে পারে এমন পরামর্শ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন৷ মুরাটভ জানান, রাশিয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুটিন যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, যতক্ষণ তিনি নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন৷ তিনি মনে করেন, এটি রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য৷ তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন নাকি কোনো রাজা হবেন, আমি জানি না৷ কিন্তু স্বৈরাচারী হওয়ার দিকে তার ঝোঁক একেবারে স্পষ্ট৷''

পদক নিলাম করে কী পরিমাণ অর্থ আশা করছেন জানতে চাইলে, মুরাটভ বলেন, ২০ লাখ ডলার বা তার বেশি দাম উঠতে পারে বলে তিনি শুনেছেন৷

আরকেসি/জেডএ (রয়টার্স)