1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট পদে কমেডিয়ানের জয়

২২ এপ্রিল ২০১৯

বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকোকে বিপুল ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ভলোদিমিয়ের জিয়েলইয়েনস্কি৷ ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল' নামের টিভি শো-তে প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় কৌতুক অভিনয় করে জনপ্রিয় হন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3HDoj
Ukraine | Präsidentschaftswahlen | Reaktion Wolodymyr Selenskyj
ছবি: Reuters/V. Ogirenko

রোববারের দ্বিতীয় দফার ভোটে বেশ বড় ব্যবধানেই পোরোশেংকোকে হারিয়েছেন তিনি৷ দুটি বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭৩ শাতংশ ভোট পেয়েছেন জিয়েলইয়েনস্কি৷

পোরোশেংকো সঙ্গে সঙ্গেই পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং কৌতুক অভিনেতা থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া জিয়েলইয়েনস্কিকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন৷  পোরোশেংকো বলেন, নির্বাচনের ফল তাঁর কাছে এরই মধ্যে ‘পরিষ্কার' হয়ে গেছে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি অফিস ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু জোর দিয়ে বলতে চাই, রাজনীতি ছাড়ছি না৷''

অন্যদিকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এক ভাষণে জিয়েলইয়েনস্কি বলেছেন, ‘‘এ সাফল্য আমরা একসঙ্গে অর্জন করেছি৷ সোভিয়েত-পরবর্তী দেশগুলোর নাগরিকদের বলতে চাই, আমাদের দেখুন! সবকিছুই সম্ভব৷''

কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশিওলজি অ্যান্ড দ্য রাজুমকভ সেন্টার এই বুথফেরত জরিপ পরিচালনা করেছে৷ ৩০০ কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ভোটারের মত নেয়া হয়েছে এতে৷ এ জরিপ ৩ শতাংশের বেশি কখনো হেরফের হয় না বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি৷

রুশ-ইউক্রেন সম্পর্ক

পূর্ব ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ইউরোপ-সমর্থিত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জিয়েলইয়েনস্কি৷

রাশিয়ায় আটক ইউক্রেনের সৈনিকদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি৷ জিয়েলইয়েনস্কি বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমি সবকিছু করবো৷''

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

জিয়েলইয়েনস্কির বিজয়ে ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থানের ঘটনার পর রাশিয়া-ইইউ দ্বন্দ্বের মধ্যে নতুন এক চরিত্র পাওয়া গেল৷

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ‘‘বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনের জনগণ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছে৷ এখন নতুন নেতৃত্বকে ভোটারদের আশার কথা বুঝতে হবে৷ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক, দুই ক্ষেত্রেই এ কথা সত্য৷''

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক জিয়েলইয়েনস্কির বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ এক টুইটে তিনি বলেন, ‘‘ইইউ তার সমর্থন চালিয়ে যাবে৷''

ন্যাটোর প্রধান ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গও টুইটে জিয়েলইয়েনস্কিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন ন্যাটোর এক সম্মানিত অংশীদার, এবং ন্যাটো তার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে৷''

গল্প থেকে বাস্তব

 ইউক্রেনের জনপ্রিয়  টিভিশো ‘সার্ভেন্ট অব দি পিপল'৷ এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ভাসিলি হলোবরোদকো ইতিহাসের একজন শিক্ষক৷ তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বক্তৃতা একসময় বেশ ভাইরাল হয়ে ওঠে, যার পথ ধরে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট বনে যান৷

কৌতুকধর্মী চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ভলোদিমিয়ের জিয়েলইয়েনস্কি৷ এর আগে রাজনীতির সাথে তাঁর কোনো পরিচয়ই ছিল না৷ ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় তাঁর অভিনীত টিভি শো-টি, জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ভলোদিমিয়েরও৷ সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল নামে তিনি একটি রাজনৈতিক দলই গঠন করে ফেলেন৷ অংশ নেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে৷

জিয়েলইয়েনস্কির নির্বাচনি প্রচারের ওয়েবসাইটে ব্রিফকেস হাতে তাঁর যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়, সেটিও সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল-এর হলোবরোদকো চরিত্রটির একটি মুহূর্ত থেকে নেয়া৷ একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে প্রার্থীর ফেসবুক পেজেও৷

নির্বাচনি প্রচারণায় ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল' কথাটি প্রচুর ব্যবহার করা হয়েছে৷ নির্বাচনের আগে টিভি চ্যানেলে শো-টি পুনঃপ্রচারিতও হয়৷ আর এর সবশেষ তৃতীয় সিজনটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় মার্চে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আগেই৷

শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিয়েলইয়েনস্কির অংশ নেয়ার ঘোষণা অনেকেই তাঁর আরেকটি কৌতুক হিসেবেই নিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে দেশে নানা ধরনের সংস্কার নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি এবং সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁর হুঙ্কার মন গলাতে পেরেছে সাড়ে চার কোটি ভোটারের৷

পোরোশেংকো অবশ্য নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তেও ফেসবুকে ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, ‘‘পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়া কোনো কমেডি নয়, মজা না লাগলে ইচ্ছে করলেই তা বন্ধ করে দেয়া যাবে না৷''

তবে তাতে যে কোনো কাজ হয়নি, রোববারের নির্বাচনের ফলেই তা পরিষ্কার হয়ে গেল৷

এডিকে/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স, ডিপিএ)