1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউনিসাইকেল চালিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন ইয়ানা

২১ এপ্রিল ২০২২

দুই চাকার সাইকেল সামলানো সব সময়ে সহজ হয় না৷ অথচ জার্মানির এক তরুণী এক চাকার সাইকেল চালানোর কায়দা রপ্ত করে বিশ্ব রেকর্ডও ভেঙেছেন৷  এখন আরো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে চান তিনি৷

https://p.dw.com/p/4AAez
Euromaxx Jana Tenambergen
ছবি: DW

ইয়ানা টেনামবার্গেন বিশ্বের দ্রুততম ইউনিসাইকেল চালক৷ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে এগিয়ে যেতে পারেন তিনি৷ তাঁর মতে, ‘‘গতিবেগ, ভারসাম্য ও চরম ঝুঁকির মধ্যে মেলবন্ধনই আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর৷''

ভালো করে সিটে বসে থাকতে হলে ইয়ানাকে চূড়ান্ত মনোযোগসহ পথের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়৷ কারণ পথের কোনো অংশ অমসৃণ হলেই বাধা আসতে পারে৷ সে বিষয়ে ইয়ানা বলেন, ‘‘এখানে আমার একটা হ্যান্ডেল থাকলেও সেটি দিয়ে শুধু বাতাস কমানো যায়, পড়ে যাওয়া থামানো যায় না৷ বাইসাইকেলে স্টিয়ারিং রড চেপে ধরে সেটা করা সম্ভব৷ ইউনিসাইকেলের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার সেই সুযোগ নেই৷ তাই সবার আগে ব্যালেন্স বজায় রেখে গতি ও নিরাপত্তা বাড়ানোর কায়দা শিখতে হয়৷''

দ্রুত অথচ নিরাপদভাবে চালাতে হলে অনেক বছরের অনুশীলনের প্রয়োজন৷ শিশু বয়সেই ইয়ানা ইউনিসাইকেলের প্রতি জাদুময় আকর্ষণ অনুভব করতেন৷ তখন থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আসছেন৷ সে সময়ে কিন্তু তাঁর ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতিভা চোখে পড়েনি, বরং এর বিপরীত ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইয়ানা টেনামবার্গেন বলেন, ‘‘শিশু হিসেবে আমি কিন্ডারগার্টেনে সব সময়ে খাবার সময় চেয়ারের একটি পায়ের উপর ভর দিতাম ও কাত হয়ে যেতাম বলে সেটা সবার চোখে পড়তো৷ তখন আমার বাবা-মাকে বলা হয়েছিলো, যে আমার হয়তো কোনো ‘মোটর ডিসঅর্ডার' রয়েছে৷ আমার বাবা কিন্তু দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন, যে সেটা মোটেই সত্য নয়৷ তিনি আমাকে এই খেলায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, যা ছিল সেরা সিদ্ধান্ত৷ আমি বাবার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ৷''

ইউনিসাইকেল চালিয়ে তারকা

ইতোমধ্যে ২১ বছর বয়সি ইয়ানা গোটা বিশ্বে অসংখ্য মেডেল ও পুরস্কার জয় করেছেন৷ ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউনিসাইকেল বিশ্বকাপে একাধিক ডিসিপ্লিনে তিনি পাঁচটি পদক জয় করেছেন৷

২০২০ সালে তিনি অবশেষে ঘণ্টায় সবচেয়ে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেন৷ ইউনিসাইকেল চালিয়ে ৩৩ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এমনকি পুরুষদের রেকর্ডও ভেঙে দেন৷ ইতোমধ্যে অবশ্য পুরুষদের রেকর্ড অন্য একজনের ঝুলিতে চলে গেলেও নারীদের রেকর্ড এখনো তিনি ধরে রেখেছেন৷ ইয়ানা বলেন, ‘‘অনেক ফিজিক্যাল স্পোর্টসে সেটা সত্যি কল্পনাই করা যায় না৷ সেটা ছিল এক বিশাল পার্থক্য, যা আমার জন্য সত্যি অসাধারণ অনুভূতি৷''

জার্মানির ফ্রাইবুর্গ শহরের কাছে ইয়ানা টেনামবার্গেনের জন্ম৷ উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি বার্লিনে বাস করছেন৷ এক কমিউনে নিজের ঘরে ছোট একটা ওয়ার্কশপ তৈরি করেছেন৷ তাঁর কাছে ১৫টি ইউনিসাইকেল রয়েছে, যেগুলির ব্যবহার ভিন্ন৷ যেমন কঠিন সারফেসের জন্য স্টাডেড টায়ারযুক্ত যান৷

সময়-সুযোগ পেলেই ইয়ানা ক্রস-কান্ট্রি যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন৷ সেই ক্রীড়ার ক্ষেত্রেও তিনি বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী৷ সেটা করতে গিয়েই তিনি একবার বেশ গুরুতর চোট পেয়েছিলেন৷ ইয়ানা টেনামবার্গেন জানান, ‘‘এক মাউন্টেন বাইক চালক পেছন থেকে ধাক্কা মেরে কাদাভরা গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন৷ আমার পা তাঁর সাইকেলের ক্র্যাংক ও চাকার মধ্যে আটকে গিয়েছিল৷ শিন একেবারে দুমড়ে গিয়েছিল৷ আমি সেই অবস্থায়ও রেস শেষ করতে পেরেছিলাম৷ কিন্তু তারপর আমাকে ফিল্ড হাসপাতালে যেতে হয়েছিল৷ হাড়ের উপরের ত্বক প্রচণ্ড ফুলে গিয়েছিল৷ জঙ্গলে আমার এর থেকে খারাপ অভিজ্ঞতা আর হয় নি৷''

সেই তুলনায় বার্লিনের ট্রাফিক সামলে বাসায় ফেরার কেরামতি অনেক কঠিন৷ শহরে ইউনিসাইকেল বিরল দৃশ্য হলেও বেআইনি নয়৷ ইয়ানা নিজেকে এভাবে ফিট রাখতে পারেন৷ কারণ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো তার জন্য অপেক্ষা করছে৷ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইয়ানা বলেন, ‘‘আমার এক ঘণ্টার বিশ্ব রেকর্ড ছাড়াও আরও অনেক কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি৷ একটানা ২৪ ঘণ্টা ইউনিসাইকেল চালানোর বিশ্বরেকর্ডও রয়েছে, যা আমি ভাঙার চেষ্টা করবো৷ ২৪ ঘণ্টা দীর্ঘ সময় হলেও আমি অনুশীলনের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাই৷''

আজ ইয়ানা যথেষ্ট অনুশীলন করেছেন৷ সূর্যাস্তের সময় পথের শেষ অংশও অতিক্রম করে ফেলবেন তিনি৷

ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি