1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইতালির মৎস্যজীবীদের পণবন্দি করেছে পূর্ব লিবিয়া

২০ অক্টোবর ২০২০

ইতালি থেকে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে গিয়ে আটক হয়েছেন লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের হাতে। তাঁদের মুক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

https://p.dw.com/p/3kAIZ
ছবি: Andrea Musicò

পশ্চিম সিসিলির বন্দর শহর মাজারা দেল ভাল্লোর পরিস্থিতি একনজরে দেখলে উত্তেজনা টের পাওয়া যাবে না। কারণ, অন্যদিনের মতো মৎস্যজীবীরা কেউ জাল মেরামত করে নিচ্ছেন, কেউ ব্যস্ত তাঁর নৌকোর ইঞ্জিন পরীক্ষায়, কেউ বা তাঁদের নৌকোর কোল্ড স্টোরেজ রুম সারাই করে নিচ্ছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই বন্দর শহরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা এই ছবি থেকে বেরিয়ে আসছে না।

গত ১ সেপ্টেম্বর ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক সীমানায় মাছ ধরতে গেছিলেন এখানকার মৎস্যজীবীরা। কিন্তু লিবিয়ার কোস্ট গার্ড ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে আটজন ইতালির, ছয় জন তিউনিশিয়ার, দুই জন ইন্দোনেশিয়ার এবং দুই জন সেনেগালের। 

সেদিন মাছ ধরতে যাওয়ার কথা ছিল ভিনসেনজো সান্তিসের। কিন্তু যাওয়ার সময় তাঁর নৌকোর ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায়। তাই তিনি যেতে পারেননি। সান্তিস বলছিলেন, ''সেদিন গেলে আমাকেও আটক করা হতো।'' 

২০০৫ সালে  সে সময়ের শাসক মোয়াম্মার গাদ্দাফি লিবিয়ার জলসীমা ১২ নটিকাল মাইল থেকে একতরফাভাবে বাড়িয়ে ৭৪ নটিকাল মাইল করে দেন। এই পুরো এলাকায় খুব দামি লাল চিংড়ি পাওয়া যায়। তারপর ইতালির ওই বন্দর থেকে যাওয়া প্রচুর নৌকোকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। এ বারও মোট চারটি ন      নৌকো ধরার চেষ্টা করেছিল লিবিয়ার কোস্ট গার্ড। দুইটি পালিয়ে যায়। দুইটি বোট ও তাদের মৎস্যজীবীদের আটক করা হয়েছে।

বেনগাজিতে এখন আটক হয়ে আছেন ইন্দোনেশিয়ার টার্নো। তিনি জানিয়েছেন, তিনি শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার ভাষা জানেন। ফলে তাঁর দেশের আরেক আটক মৎস্যজীবী ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে পারছেন না। কেন তাঁদের আটক করা হলো, তাও তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তাঁরা আগে শুনেছিলেন, লিবিয়ার কোস্ট গার্ড এরকম আচরণ করে। এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন।

কেন আটক মৎস্যজীবীরা

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পূর্ব লিবিয়ার শাসক জেনারেল খালিফা হাফতার মৎস্যজীবীদের পণবন্দি করে রেখেছেন। যেদিন মৎস্যজীবীদের আটক করা হয়েছে, সেই দিনই ইতালির বিদেশমন্ত্রী ত্রিপোলি ছাড়েন। সেখানে তিনি জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয়ার শাসক ফায়েজ আল-সাররাজের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি সেখানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু জেনারেল হাফতার যুদ্ধবিরতিতে রাজি নন।

হাফতার এখন চাইছেন, ইতালি যদি লিবিয়ার চারজন ফুটবলারকে মুক্তি দেয়, তা হলে তিনিও মৎস্যজীবীদের ছেড়ে দেবেন। লিবিয়ার চার ফুটবলারকে ২০১৫ সালে ৩০ বছরের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের চোরাকারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একবার এরকমই মানুষদের পাচার করতে গিয়ে নৌকাডুবিতে ৪৯ জন মারা যান। তারই শাস্তি ভোগ করছেন চার ফুটবলার।

সূত্র জানাচ্ছে, লিবিয়ার সরকারএখন আটক মৎস্যজীবীদের মাদক পাচারকারী হিসাবে দেখাতে চাইছে। ফাঁস হওয়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের বোটের সামনে হলুদ প্যাকেট রয়েছে। লিবিয়ার সরকার অবশ্য এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এই মৎস্যজীবীদের লিবিয়ার জলসীমায় বেআইনিভাবে ঢোকার জন্য সামরিক আদালতে বিচার হবে।

শর্ত নাকচ

ইতালি জানিয়ে দিয়েছে, তারা হাফতারের শর্ত মানবে না। বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ''আমাদের নাগরিকদের আটক করা বেআইনি। কেউ যদি আমাদের বলে, ওদের আটক নাগরিকের বিনিময়ে মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেয়া হবে, তা হলে সেটাও বেআইনি। লিবিয়া নিজেই নিজের জলসীমা বাড়িয়ে নিয়েছে। এটাও ইতালি মানে না।''

এই অবস্থায় বন্দর শহর জানে না, কবে ফিরবেন আটক মৎস্যজীবীরা? কীভাবে মুক্তি সম্ভব হবে তাঁদের?

এই পরিস্থিতি আগে কখনো  হয়নি। আগে জরিমানা করে মৎস্যজীবীদের ছেড়ে দেয়া হতো। রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত হাফতারকে সমর্থন করে। তাদের কাছে ইতালি আবেদন জানিয়েছে মধ্যস্থতা করার জন্য।

জাকোপো লেনতিনি/জিএইচ/এসজি