1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ইভ টিজিং’ প্রতিরোধে মেয়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণ

২৪ জুন ২০১০

ইভ টিজিং, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো ভারতেও এটা একটা সমস্যা৷ নানাভাবে চেষ্টা করেও যে তা খুব একটা ঠেকানো গেছে, তা বলা যায় না৷ তাই শেষ পর্যন্ত নিজেদের রক্ষার কৌশল শিখতে নেমেছেন ভারতীয় নারীরা৷

https://p.dw.com/p/O1Xk
ফাইল ফটোছবি: AP

ঋতিকা মোহন, ১৮ বছরের তরুণী৷ থাকেন দিল্লিতে৷ এক মাস আগের ঘটনা, ঋতিকা রাস্তায় হাঁটছিলেন৷ একটি মোটরবাইক হঠাৎ তার পাশে ঘেঁষে আসে৷ আরোহী লোকটি জোর-জবরদস্তি করে ঋতিকাকে তার বাইকে ওঠাতে চায়৷ কেঁদে কেটে একসারা হয়েছিলেন ঋতিকা৷ অনেক কষ্টে বেঁচেছিলেন ওই লম্পটের কবল থেকে৷ তবে এখন সে ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হলে দেখা যাবে অন্য ঋতিকাকে৷ তিনি বলেন, এখন আর আমি ছেড়ে দেওয়ার বান্দা নই৷ কেউ এমন করলে তাকে লাথি হোক, ঘুষি হোক, কিছু একটা খেয়েই যেতে হবে৷

ঋতিকার মতো অনেক তরুণীকেই এই সাহস যুগিয়েছে কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র৷ পথেঘাটে ইভ টিজিং কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সেখানে তাই শেখানো হয় নারী বিশেষ করে তরুণীদের৷ সরকারির পাশাপাশি এ ধরনের বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে ভুরি ভুরি৷ দিল্লির এমনই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন ঋতিকা৷ তার সঙ্গী মা ও ছোট দুই বোনও৷ তাদের শেখানো হয়, অভদ্র আচরণ করলে কাউকে রেহাই দেওয়া যাবে না৷

ভারতের ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য, ২০০৮ সালে নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটেছে ২ লাখ৷ তবে প্রকৃত সংখ্যা যে এর অনেক বেশি, তা সবাই মানছেন৷ কারণ বাসে-ট্রামে আর পথে ইভ টিজিংয়ের যে ঘটনাগুলো ঘটে, তা নিয়ে তো আর পারতপক্ষে কেউ থানায় যায় না৷ ফলে সেগুলো থেকে যায় অগোচরেই৷ ভুক্তভোগীরা বলছেন, অতিষ্ঠ হয়ে তারা এখন আত্মরক্ষার কৌশল শিখছেন৷

দিল্লির সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জাগরীর যাত্রা শুরু হয় ২০০২ সালে৷ প্রশিক্ষক রাধা শর্মা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানালেন, এ পর্যন্ত ৭০ হাজার নারী সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ এর মধ্যে গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুলছাত্রীরাও রয়েছে৷ প্রশিক্ষণের জন্য টাকা নেওয়া হলেও গরমের ছুটির সময় স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিনা টাকায়৷

শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ, কেউ যে পোশাক পরেই থাকুন না কেন, তাতেই কীভাবে পাল্টা আক্রমণ করা যায়, তাই শেখানো হয় কেন্দ্রগুলোতে৷ দেখানো হয়, ব্যবহারে দোপাট্টা বা ওড়নাই হয়ে উঠতে পারে আত্মরক্ষার ভালো অস্ত্র৷ বিষয়টি এমন, ওড়না দিয়ে আক্রমণকারীর গলা পেঁচিয়ে ফেলো, তারপর মারো টান নিচের দিকে৷ আক্রমণকারী তখন ধুলোয় লুটোপুটি খাবে৷ আর লাথি-গুঁতো, ঘুষি তো রয়েছেই৷ সঙ্গের কলম বা চুলের কাঁটাটি আক্রমণকারীর গায়ে বিঁধিয়ে দিয়ে আত্মরক্ষার কৌশলও শেখানো হয়৷

ইভ টিজিং কিংবা রাস্তায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে পড়লে কোনোভাবেই নীরব না থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন রাধা৷ তার ভাষায়, ‘‘জেগে ওঠো নারী৷ কথা বলো উচ্চকণ্ঠে৷ তৈরি হও যে কোনো আঘাতের জবাব দিতে৷''

মুম্বাইয়ে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছেন নন্দা দয়াল৷ তার ছাত্রী ১৫ জন৷ ছয় দিনের একটি কোর্সের জন্য তিনি ৩ হাজার রুপি করে নেন৷ একই ধরনের চিত্র দেখা গেলো কলকাতায়ও৷ সেখানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রামমোহন রায়৷ তাঁর এ কাজ শুরুর পেছনেও একটি ঘটনা আছে৷ তা হলো, তাঁর স্কুলছাত্রী মেয়েকে যৌন হয়রানি করেছিলো এক শিক্ষক৷ তারপরই তাঁর এ কাজে নামা৷

রামমোহন বলেন, ‘‘আসলে ভারতীয় নারীদের সবকিছু মেনে নেওয়ার যে সংস্কৃতি চালু আছে, সেটা আসলে খুবই খারাপ৷ দৈহিকভাবে তো তারা শক্তিহীনা নয়, অথচ এ বিষয়ে তারা অসচেতন৷''

তবে নারীর এ সমস্যা সমাধান শুধু আত্মরক্ষার কৌশল চর্চা করে হবে বলে মনে করছেন না সমাজ গবেষকরা৷ তারা বলছেন, নারীর প্রতি পুরুষদের মনোভাব বদলানোটা জরুরি৷ যেমন বলছিলেন জাগরীর গবেষক কল্পনা বিশ্বনাথ৷ তিনি বলেন, ‘‘আত্মরক্ষার কৌশল একটা টোটকা হতে পারে৷ আসলে যা প্রয়োজন, তাহলো পুরুষদের শিক্ষা নেওয়া৷ তারা নারীর সঙ্গে কেমন আচরণ করবে৷''

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক