1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইমাম মেইড ইন জার্মানি

৬ ডিসেম্বর ২০১০

জার্মানিতে মসজিদের ইমামদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে৷ প্রশিক্ষণের বেশির ভাগটাই জার্মানির সমাজে ইমামদের একাত্ম করা নিয়ে৷ এর পাশাপাশি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলাম ধর্ম পাঠ্য বিষয় হিসেবে যোগ করেছে৷

https://p.dw.com/p/QQRT
জার্মানির এক ইমামছবি: picture alliance/dpa

মরক্কোর ছেলে আহমেদ সামি জানাল – তার বিশ্বাস, ঈমান হচ্ছে তার নিজের ঘরে, নিজের গণ্ডিতে, নিজস্ব পরিবেশে৷ চার দেয়ালের মাঝেই সে তার বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে রেখেছে৷ অথচ তার বাড়ি কিন্তু এই মুহূর্তে মরক্কোতে নয়৷ জার্মানির উত্তরের শহর বখুমে৷ সে যখন জার্মানিতে আসে তখন সে এক অক্ষর জার্মান ভাষা জানতো না৷ আহমেদ সামি জানান, ‘‘জার্মান ভাষা শেখা আমার জন্য ভীষণ জরুরি ছিল৷ কারণ, আমার আশে-পাশে কি হচ্ছে তার কিছুই আমি বুঝছিলাম না৷ আমি শুধু জর্মান ভাষার বিভিন্ন ধ্বনি শুনতাম৷ এখানকার নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি সব কিছুই আমার কাছে ছিল ভীষণভাবে অচেনা অজানা, একেবারে নতুন৷''

শুধু আহমেদ নয় জার্মানির অন্যান্য ইমামদের অভিজ্ঞতাও একই রকম৷ তারা সবাই নতুন একটি দেশে এসেছে৷ দেশটির ভাষা, চাল-চলন কোন কিছু না বুঝেই৷ বেশ কয়েকজন ইমাম মাত্র কয়েক বছর থেকেই ফিরে গেছে নিজের দেশে৷ এরা কখনোই জর্মানিতে বেশিদিন থাকতে চায় নি৷ জার্মান সমাজে নিজেদের একাত্ম করতে চায় নি৷

গোটা জার্মানিতে ইমামদের প্রশিক্ষণ এবং পড়াশোনাকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ অসনাব্রুকে ইমামদের জন্য বেশ কিছু বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে৷ এই কোর্স ইমামদের জন্য বিশেষ একটি পাইলট প্রকল্প বলে জানানো হয়েছে৷ কোর্সটির মেয়াদ দুই সেমেস্টার অর্থাৎ এক বছর৷ দুই সেমেস্টারে জার্মান ভাষা, দেশটির সম্পর্কে নানা তথ্য এবং শিক্ষকতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে৷

Imamausbildung in Deutschland
ইমামদের জন্য পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে অসনাব্রুকেছবি: DW

এই কোর্সটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইগুন ওজকান৷ তিনি লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী৷ তিনি নিজে তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ ইমামদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘‘ইসলাম ধর্ম বা মুসলমানদের নিয়ে যে সব ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তা ভাঙার সুযোগ দেবে এই প্রশিক্ষণ৷ যদি মসজিদগুলো আরো স্বচ্ছভাবে তাদের কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরে তাহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে৷ সাধারণ মানুষদের আরো কাছে যদি ইমামরা যেতে পারে,তাদের সঙ্গে মিশতে পারে তাহলে ইমামদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে৷ জার্মান সমাজে আরো দৃঢ়ভাবে তারা একাত্ম হতে পারবে৷''

ইমামদের প্রশিক্ষণের এই পাইলট প্রকল্প সারা জার্মানিতে চালু করার কথা বলা হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন, অত্যন্ত রক্ষণশীল ইমামরা এগিয়ে আসবেন কি ? যদি তারা কোন ধরণের আগ্রহ না দেখান তাহলে এসব পাইলট প্রকল্প একেবারেই বৃথা৷ অসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যলয়ের ব্লুয়েন্ট উকার বলেন, ‘‘বেশ কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদীদের এই পাইলট প্রকল্প টানতে পারবে না – তারা আগ্রহী হবে না৷ শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, অন্য যে কোন ধর্মই হোক না কেন – ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বা প্রটেসটান্ট কিংবা ইহুদি ধর্ম, যাই হোক না কেন৷ উগ্রহবাদীরা কখনোই আমাদের এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবে না৷''

যদিও খুব অল্প সংখ্যক ইমাম দিয়ে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে তারপরেও আহমেদ সামীর জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংকেত৷ কারণ জার্মানির মত একটি দেশ এ ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে৷ আহমেদ সামী বললেন, ‘‘জার্মানির ইতিহাসে এটি একটি নতুন অধ্যায়৷ জার্মানরা এবং জার্মান সমাজবিজ্ঞানীরা তৎপর হয়েছেন ইমামদের বিষযটি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করতে৷ শুধু তাই নয় এটা একই সঙ্গে মুসলমানদের জন্যও একটি সুখবর৷ এটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ – আমাকে মেনে নেওয়া, আমার ধর্মকে মেনে নেওয়া৷ এ জন্যই আমি আজকে এখানে৷''

আসল কথা হল, ইমামদের এই প্রশিক্ষণ প্রথম এক পদক্ষেপ৷ এই শীতকলীন সেমেস্টার থেকে ইমামরা জার্মানির তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন৷ অসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যালয় তার মধ্যে একটি৷ মূল লক্ষ্য হল – ইমাম তৈরি করা হবে আর তা হবে ‘ইমাম মেইড ইন জার্মানি'৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক