1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরাকে ইরানপন্থি মিলিশিয়াকে কে থামাবে?

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ইরাকে মার্কিন বাহিনীর উপর আক্রমণ বাড়ছে। নতুন গজিয়ে ওঠা গোষ্ঠীগুলি এই আক্রমণের পিছনে। কী করে তাদের থামানো যাবে?

https://p.dw.com/p/3pgD7
মার্কিন ড্রোন হানায় দুই কম্যান্ডার মারা যাওয়ার এক বছর পর বাগদাদে বিক্ষোভ। ছবি: AHMAD AL-RUBAYE/AFP/Getty Images

ইরাকে সেনার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ন্যাটোর সামরিক জোট। আফগানিস্তানে এখন ৫০০ জন ন্যাটোর সেনা আছে, সেই সংখ্যা বাড়িয়ে করা হচ্ছে চার হাজার। আফগানিস্তানে ন্যাটোর মিশন ছিল, সুরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারে সাহায্য করা, ইরাকি সেনাদের প্রশিক্ষিত করা এবং পরামর্শ দেয়া। কিন্তু ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জানিয়েছেন, এখনো সেখানে আইএসের যে জঙ্গিরা আছে, তাদের শেষ করাও ন্যাটোর লক্ষ্য। তিনি জানিয়েছেন, ইরাকের অনুরোধেই তারা এই কাজ করছে।

তবে উত্তর ইরাকে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে রকেট হানার কয়েকদিন পরেই তিনি এই ঘোষণা করলেন। মার্কিন ঘাঁটিতে একের পর এক ১৪টা রকেট ছোড়া হয়। একটি ইরাকি মিলিশিয়া গোষ্ঠী আউলিয়া আল-দাম এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে। এই রকেট হানায় একজন কন্ট্রাক্টর মারা গেছেন। নয় জন আহত হয়েছেন।

মার্কিন-বিরোধী সংগঠন বাড়ছে

আউলিয়া আল-দাম খুব একটা পরিচিত সংগঠন নয়। এই ধরনের প্রচুর মার্কিন-বিরোধী সংগঠন ইরাকে গজিয়ে উঠছে। কিছুদিন আগেও তাদের নাম জানা ছিল না। কিন্তু তারা এখন মার্কিন বাহিনীর জন্য যে জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়, তার উপর আক্রমণ করছে। সম্প্রতি এই ধরনের বেশ কয়েকটি আক্রমণ হয়েছে। এই সংগঠনগুলি নিজেদের মার্কিন-বিরোধী বলে পরিচয় দেয় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরাকের আধা সামরিক বাহিনী পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সের(পিএমএফ) দলছুট বাহিনী এই সব সংগঠন গড়ে তুলেছে। পিএমএফের অনেক সদস্যই ইরানের ধর্মীয় ও সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত। ইরানই তাদের আর্থিক, আধ্যাত্মিক ও অন্য ধরনের সমর্থনও দেয়।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকেই এই নতুন সংগঠনগুলি মার্কিন বাহিনীর উপর আক্রমণ শানাবার চেষ্টা করছে। ইরানের নেতা সোলেইমানি এবং পিএমএফের নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিকে হত্যার পর এই ধরনের আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে।

Irak Bagdad Trauerprozession für Wissam Alyawi der Asaib Ahl Al-Haq-Fraktion
ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া। ছবি: AHMAD AL-RUBAYE/AFP/Getty Images

কম্যান্ড ও কন্ট্রোল স্পষ্ট নয়

কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন, ইরান থেকেই এই সংগঠনগুলিকে নির্দেশ দেয়া হয়। আবার কয়েকজন পর্যবেক্ষকের ধারণা, এই সংগঠনগুলি সবসময় ইরানের কথায় চলে না। তাদের নিজেদের মধ্যেও বিরোধ আছে। আর ইরান সরকার ও সিনিয়ার পিএমএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এই ধরনের আক্রমণ ও সংগঠনগুলিকে  সাহায্য করে না, নিয়ন্ত্রণও নয়। তাই এই সংগঠনগুলিকে কে নিয়ন্ত্রণ করছে তা স্পষ্ট নয়। কীভাবে তাদের থামানো যাবে, সেটা ঠিক করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

ন্যাটোর বাহিনী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কি সে জন্যই?

ওয়াশিংটনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নিউলাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়ার অ্যানালিস্ট  ক্যারোলিন রোসের মতে, ন্যাটো সেনার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অ্যামেরিকার কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কারণ, সেনা বাড়ানো হচ্ছে, আইএসের মোকাবিলা করতে। তাছাড়া ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের মোকাবিলাও করবে তারা। তাঁর মতে, ন্যাটো মিশন হলো. ইরাকে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতাবস্থার ব্যবস্থা করা। বিশ্বজুড়ে আইএসের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে, এটা তারই অংশ।

ন্যাটোর প্রতি বিদ্বেষ কম

ইরাক ভিত্তিক গবেষক সাজাদ জিয়াদ মনে করেন, ইরাকে ন্যাটোর বাহিনীর প্রতি বিদ্বেষ তুলনায় কম। অ্যামেরিকার বিরোধী সংগঠনগুলি ন্যাটো বাহিনীর কোনো সমালোচনা করেনি। ন্যাটোর বাহিনী এতদিন সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। হতে পারে, ন্যাটোর বাহিনী আরো সক্রিয় হলে আক্রমণের সংখ্যা কিছুটা কমবে। 

তবে বাগদাদ-ভিত্তিক সূত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কোনো জাদুদণ্ড নেই, যা দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এই গোষ্ঠাগুলিকে নিষ্ক্রিয় করা যাবে।

কাজ সহজ নয়

সরকারি সুত্র জানাচ্ছে, ইরানের পক্ষেও কাজটা সহজ নয়। তারা যখন চাইবে তখনই সংগঠনগুলিকে সক্রিয় করবে, অন্য সময় তাদের নিষ্ক্রিয় করবে এটা হয় না। আর এই সংগঠনগুলিকে কোনো একজন নিয়ন্ত্রণ করে না। অনেকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যেও বিরোধ আছে।

সেনচুরি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক জিয়াদ মনে করেন, যদি ইরানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়, তা হলে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে বিরোধ মিটে গেলেও পরিস্থিতি ভালো হবে। 

ক্যাথরিন শেয়ার/জিএইচ