1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরাকে শান্তি ও ঐক্যের লক্ষ্যে যুব অর্কেস্ট্রা দল

১৯ এপ্রিল ২০১১

ইরাকে তরুণ সংগীত শিল্পীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এক অর্কেস্ট্রা দল৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশের নানা জায়গার তরুণ শিল্পীরা মিলিত হয়েছেন, শিখছেন বাদ্য যন্ত্র, বিনিময় করছেন অভিজ্ঞতা৷ সহায়তা করছে গ্যোটে ইন্সটিটিউট ও ব্রিটিশ কাউন্সিল৷

https://p.dw.com/p/10vvq
ইরাকের যুব অর্কেস্ট্রা দলছবি: FYOI

শান্তির জন্য অর্কেস্ট্রা

সারা দেশের তরুণ শিল্পীদের নিয়ে একটি সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা দল গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষাটা জেগে উঠেছিল ইরাকের ১৭ বছর বয়সি পিয়ানো শিল্পী সুহাল সুলতান'এর৷ সময়টা ছিল ২০০৮ সাল৷ ইরাক থেকে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা সমগ্র বিশ্বে পৌঁছে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য৷ আর সেই সূত্র ধরে কোলনের এক সহায়তা সমিতির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে জাতীয় ইরাকি যুব অর্কেস্ট্রা দল৷ ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলের ৫৩ জন তরুণ সংগীত শিল্পী যোগ দিয়েছেন এই অর্কেস্ট্রায়৷ ইন্টারনেটের এক কাস্টিং শোর মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে এই তরুণ শিল্পীদের৷

সহায়তা সমিতির পরিচালক কার্ল-ভাল্টার কেপ্লার এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই অর্কেস্ট্রাকে বলা যায় ঐক্য ও শান্তির লক্ষ্যে এক অর্কেস্ট্রা৷ যার প্রতিফলন দেখা যায় অর্কেস্ট্রায় অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যেও৷ ২২ জন কুর্দি ও ২৩ জন আরব অংশ নিচ্ছেন এই অর্কেস্ট্রায়৷ আমাদের তিন জন দোভাষী রয়েছেন৷ তাঁরা কুর্দি, আরবি এবং ইংরেজি ভাষা জানেন৷ সংগীতের মাধ্যমেই বিকশিত হয়ে উঠছে অর্কেস্ট্রা দলটি৷''

National Youth Orchestra NYOI Zuhal Sultan Gründerin Leiterin
অর্কেস্ট্রার প্রতিষ্ঠাতা সুহাল সুলতানছবি: NYOI

ঐক্যবদ্ধ করতে পারে জাতিকে

এক সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে বিভক্ত এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান তরুণ সংগীত শিল্পীরা, ছড়িয়ে দিতে চান শান্তির বার্তা৷ কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও সহজসাধ্য নয়৷ ২০০৩ সালে এক বোমা হামলায় বাগদাদের এক মাত্র সংগীত স্কুলটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে আবার গড়ে তোলা হচ্ছে৷ অর্কেস্ট্রায় অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে সংগীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রায় কারোরই নেই৷ অনেকে সাহায্য নিচ্ছেন ইন্টারনেটের৷

কেপ্লার বলেন, ‘‘তাঁরা এমন সব পরিবার থেকে এসেছেন, যেখানে কোনো না কোন বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা এ ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়৷ এখন তারা ইন্টারনেট, ইউটিউবের মাধ্যমে নিজে নিজেই সংগীত চর্চা করেন৷ কোনো কনসার্ট হওয়ার আগে ব্রিটেন, জার্মানি বা অ্যামেরিকার শিক্ষকদের কাছে অনুশীলন করেন৷ হোটেলে থাকলে সারা রাত তারা রিহার্সাল চালিয়ে যান৷ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় সংগীতের প্রতি এক গভীর অনুরাগ৷''

অর্কেস্ট্রা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্কটিশ সংগীত নির্দেশক পল ম্যাক অ্যালিনডিন৷ ব্রিটিশ কাউন্সিলে এই অর্কেস্ট্রার কথা শুনে তরুণ শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি৷ ২০০৯ সালে কুর্দি প্রধান শহর সুলাইমানিয়াতে প্রথম বারের মত একটি গ্রীষ্মকালীন একাডেমির আয়োজন করা হয়৷ অ্যামেরিকা ও ইউরোপের ১২ জন শিক্ষকের সঙ্গে ইরাকে যান ম্যাক অ্যালিনডিন৷ শুধু সংগীত শিক্ষা নয়, এই অর্কেস্ট্রার একটা নিজস্ব অবয়ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয় একাডেমিতে৷ প্রথম কনসার্টগুলিতে পশ্চিমি ও আরব জগতের খ্যাতনামা সংগীতস্রষ্টাদের সংগীত পরিবেশন করা হয়৷ ইরাকের টিভিতেও দেখানো হয় এই অনুষ্ঠান৷

National Youth Orchestra NYOI Paul MacAlindin Dirigent
অর্কেস্ট্রাপ রিচালনা করছেন স্কটিশ সংগীত নির্দেশক পল ম্যাক অ্যালিনডিনছবি: NYOI

ম্যাক অ্যালিনডিনের ভাষায়, ‘‘দু সপ্তাহ ধরে কঠোর অনুশীলন করে একটি কনসার্ট শেষ করতে পারি আমরা৷ আমরা মনপ্রাণ ঢেলে দিই সংগীতে, যা আমাদের একাত্ম করে তোলে৷ ধ্রুপদী সংগীত একটি অত্যন্ত শৃঙ্খলায় বাঁধা শিল্প৷ সে জন্য এক সঙ্গে কাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷''

নারী শিল্পীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত

একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় এই অর্কেস্ট্রা দলে৷ আর তা হল, শিল্পীদের এক তৃতীয়াংশই নারী৷ যা থেকে পশ্চিমি অর্কেস্ট্রা গোষ্ঠী অনেকটাই দূরে৷

কেপ্লার বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই নেই৷ ইরাকের কুর্দি প্রধান অঞ্চলে নারীদের সমাজে এক বিশেষ স্থান রয়েছে৷ বোরখা দেখা যায়না৷ আমাদের অর্কেস্ট্রায় অনেক মেয়েই বেহালা, চেলো ও শিঙা বাজান৷''

পল ম্যাক অ্যালিনডিন কোলনে বসবাস করেন৷ তাঁর প্রকল্প সম্পর্কে বন্ধুবান্ধবদেরও আগ্রহী করে তুলছেন তিনি৷ ইরাক ছাড়া বিদেশও কনসার্ট পরিবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে অর্কেস্ট্রা দলটির৷ কেপ্লার বলেন, ‘‘আমরা বাগদাদে এই প্রকল্পের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলছি৷ কুর্দি প্রধান অঞ্চলেও গড়ে তোলা হবে এরকম আরেকটি৷ তবে কোলন থেকেই আমরা সমন্বয়ের কাজটা করছি৷ আমরা এমন সব সংগীত শিক্ষক খুঁজছি, যারা এবছর ইরাকে যেতে পারবেন৷''

অর্কেস্ট্রা দলটি জার্মানিতে আসবে সামনের হেমন্তে৷ অনেকের জন্য এটাই প্রথম বিদেশ যাত্রা৷ পরিবেশিত হবে মেন্ডেলসসোন এবং বেটোফেনের সংগীত৷ ইরাকি সংগীত রচয়িতা ল্যান্স কনওয়ের সংগীতও থাকবে অনুষ্ঠানে৷ সংগীতের মাধ্যমে ইরাকের নেতিবাচক ইমেজটা কিছুটা হলেও দূর করতে চান এই সব তরুণ শিল্পী৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন