1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইলেক্ট্রিক বা বিদ্যুৎশক্তিচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ

২০ ডিসেম্বর ২০১০

ভবিষ্যতে বিদ্যুৎশক্তিচালিত গাড়িই হবে চলাচলের প্রধান মাধ্যম৷ এমনটাই আশা৷ কিন্তু এখনও বেশ কিছু ফাঁকফোকর আছে এই সব গাড়ির ক্ষেত্রে৷ গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করতে অনেকটা সময় লেগে যায়৷ বেশি দূর পর্যন্ত যেতেও পারেনা গাড়িগুলো৷

https://p.dw.com/p/QgFL
বিদ্যুৎচালিত একটি গাড়িতে চার্জ দেয়া হচ্ছেছবি: AP

স্কটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট ডেভিডসন ১৮৩৭ সালে প্রথম বিদ্যুৎচালিত যান নির্মাণ করলেও সে কৃতিত্ব তাঁর ভাগ্যে মেলেনি৷ ইংরেজ বিজ্ঞানী জে, কে, স্ট্যানলি এবং বস্টনের ফ্রেড এম কিম্বল ১৮৮৮ সালে প্রথম কার্যকর ইলেক্ট্রিক কার নির্মাণ করেন৷ ১৮৯১ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী মরিসন কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরি করেন৷ তাঁর তৈরি গাড়িতে ২৪ স্টোরেজ ব্যাটারির প্রয়োজন হত৷ চার্জ দিতে সময় লাগতো ১০ ঘন্টা৷ ঘন্টায় ১৪ মাইল পর্যন্ত যেতে পারতো গাড়িটি৷ অ্যামেরিকাতেই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরি শুরু হয়৷

কারো কারো মতে তেলের পয়সা বাঁচাতে অনেকে ব্যাটারি বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন৷ পরিবেশ সচেতনতাও মানুষকে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে৷ ইলেক্ট্রিক কার বায়ু দূষিত করেনা৷ নিঃশব্দের এই গাড়িগুলি শব্দদূষণও রোধ করে৷

জার্মানির বিখ্যাত গাড়িকোম্পানি বিএমডাব্লিউ তার লাইপৎসিশের কারখানায় প্রায় ৪০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছে ২০১৩ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে ইলেক্ট্রিক গাড়ি প্রস্তুত করার জন্য৷ মার্সেডিস বেঞ্জ, আউডি, ফোল্কসভাগেন এই গাড়িকোম্পানিগুলিও নিয়েছে এই ধরনের উদ্যোগ৷

China Auto Show 2010 in Peking Geely GPEC EC8
চীনের একটি মেলাতে ইলেকট্রিক গাড়ি দেখা যাচ্ছেছবি: AP

গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী অন্যান্য কোম্পানিগুলিও বিরাট অঙ্কের অর্থ ঢালছে ইলেক্ট্রিক গাড়ির উন্নয়নকল্পে৷ এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে অসংখ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানও৷ বিশ্বব্যাপী এসব গাড়ির বিশাল এক বাজার পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস জার্মান সরকারের৷ জার্মান অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রাইনার ব্র্যুডারলে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে৷ ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা শীর্ষস্থানে থাকতে চাই৷ ২০২০ সালের মধ্যে ১০ লাখ ইলেক্ট্রিক গাড়ি আমরা জার্মানির রাস্তায় চালাতে চাই৷ বিশেষ করে জার্মান শিল্পকে আমরা গাড়ির বাজারে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলতে চাই৷'' ব্র্যুডারলে আরো বলেন, ১২৫ বছর আগে আমরাই মোটর গাড়ি আবিষ্কার করেছিলাম৷ প্রযুক্তির দিক দিয়ে এখনও আমরা প্রথম দিকে থাকতে চাই৷ তবে যত সহজে এটা বলা যায়, কাজটা তত সহজ নয়৷ প্রতিযোগিতার চাপটা কিন্তু প্রবল৷

জার্মানির অবস্থান এ ক্ষেত্রে প্রথম দিকে এটা বলা যায়না৷ অ্যামেরিকা, জাপান, চীন, কোরিয়া কিংবা ফ্রান্সও ইলেক্ট্রিক গাড়ির উন্নয়নের পেছনে অর্থ ঢালছে৷ অ্যামেরিকা চলতি বছর ও সামনের বছরের জন্য শুধুমাত্র গাড়ির ব্যাটারির কারখানার জন্যই ৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ করছে৷ জার্মান অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী অবশ্য ইলেক্ট্রিক গাড়ির গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী নন৷ তিনি বলেন, ‘‘বছরে ৫০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করি আমরা এই খাতে৷ আগামী বছরও এই অঙ্কটাই ব্যয় করা হবে৷ আমরা গবেষণা ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেব৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার জন্য ভর্তুকি দেয়ার পক্ষপাতী নই আমরা৷''

জার্মানির ইলেক্ট্রিক গাড়িকে অন্যান্য দেশের সমপর্যায়ে আনতে হলে শিল্প ও কলকারখানা এবং গবেষণাখাতে আরো অনেক অর্থের প্রয়োজন৷ বিদ্যুৎশক্তিচালিত গাড়ির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাটারি শিল্পের ক্ষেত্রেও ব্যয়সংকোচ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ জাপান এদিক দিয়ে দুই বছর এগিয়ে আছে৷ ২০১৩ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কমপক্ষে চার বিলিয়ন ইউরোর প্রয়োজন৷ বলা হয়েছে, ন্যাশনাল প্লাটফর্ম ইলেক্ট্রমোবিলিটি বা এনপিই-এর এক রিপোর্টে৷ জার্মান সরকারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্ল্যাটফর্মে গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি, বিদ্যুৎসরবরাহ প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞানী ও শ্রমিকসমিতিগুলো একত্রিত হয়েছে৷ এনপিই-এর প্রধান হেনিং কাগেরমান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে থাকার ব্যাপারটা এখনও নির্ধারিত হয়ে যায়নি৷ তবে আমাদের দ্রুত নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে৷ নষ্ট করার মত সময় আমাদের নেই৷ এসব করতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যে প্রযুক্তির দিক দিয়ে শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে পারব আমরা৷ শুধু গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে মাথা ঘামালেই চলবেনা৷ উৎপাদনের প্রযুক্তির দিকেও নজর রাখতে হবে৷ খরচ কমানোর জন্য আমাদের বেশি করে উৎপাদন করতে হবে৷''

অন্যকথায়, বিদ্যুৎশক্তিচালিত গাড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, দৈনন্দিন জীবনের বাহক করে তুলতে হবে৷ তাহলেই ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে থাকতে পারবে জার্মানি৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক