1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বহিঃশক্তির ইন্ধন

উলরিকে শ্লাইখার / আরবি১ জুলাই ২০১৩

‘‘ইসরায়েল একটি ক্যানসারের টিউমার, যেটিকে কেটে ফেলা উচিত৷’’ একথা বলেছিলেন একসময় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামেনি৷ তিনি বলেন, ‘‘এই জিওনিস্ট শাসকের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করবে, তারা আমাদের সহায়তা পাওয়ার আশা করতে পারে৷’’

https://p.dw.com/p/18yZg
Titel: Iran Manöver Rakete Beschreibung: die iranische Rakette, Qiam 1 (Ghiam 1) bei einem militärischen Manöver im Jahr 2010. Lizenz: Fars zugeliefert von: Pedram Habibi
Iran Manöver Rakete Qiam 1ছবি: Fars

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি অব্যাহত রেখেছেন৷ ইরানকে আণবিক বোমা তৈরি করা থেকে বিরত করতে হবে৷ কেননা ইরানের হাতে পরমাণু বোমা থাকলে ইসরায়েলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে৷ এই দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি অনবরত৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি আমার দেশবাসীকে বিলীন হয়ে যেতে দিতে পারি না৷'' প্রয়োজন হলে আত্মরক্ষামূলক হামলাও করা যেতে পারে, বলেন নেতানিয়াহু৷

কেন এই বৈরিতা?

এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন এই দুটি দেশ পরস্পরের প্রতি এত বৈরিভাবাপন্ন? ৭০ দশক পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক তো বেশ ভালোই ছিল৷ অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও তারা একসঙ্গে কাজকর্ম করেছে৷

Gad Jair
সমাজবিজ্ঞানী জাইরছবি: Privat

সমাজবিজ্ঞানী গ্যাড জাইর বিষয়টি নিয়ে এক ইরানি সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করছেন৷ ইউরোপের এক সেমিনারে তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় হয়৷ সেখানেই তাঁদের মাথায় এই বিষয়টিকে নিয়ে লেখার আইডিয়া আসে৷ থিসিসটা এখনও প্রকাশিত হয়নি, যার শিরোনাম ‘‘সাংস্কৃতিক ট্রমা থেকে আণবিক যুদ্ধ – ইরান ও ইসরায়েল সংকটের ব্যাখ্যা৷'' এই থিসিসটা অবশ্য ইরানি সমাজবিজ্ঞানীর নাম ছাড়াই প্রকাশিত হবে৷ তা না হলে তিনি হুমকির মুখে পড়তে পারেন৷

এই দুই সমাজবিজ্ঞানী বিষয়টি খতিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, দুটি দেশই সাংস্কৃতিক এক ট্রমাতে ভুগছে৷ তাদের ইতিহাস থেকেই উঠে এসেছে এটি৷ ‘‘ইরান বিদেশি কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করছে৷ আর ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কায় ভীত৷'' এইভাবেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন জাইর৷

বিশাল সার্বভৌম রাজ্য ছিল ইরান

ইরান ছিল এককালে এক বিশাল সার্বভৌম রাজ্য৷ কয়েক শতক ধরে বিদেশি কর্তৃত্ব সহ্য করতে হয়েছে দেশটিকে৷ মঙ্গোলিয়ান, ওসমান, ব্রিটিশ, রুশ ও মার্কিনিরা দেশটির ইতিহাসে বারবার হস্তক্ষেপ করেছে, বলেন জাইর৷ এভাবে ইরানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা মোহাম্মাদ মোসাদেগকে ১৯৫৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং পশ্চিমা শক্তির হাত ধরে ক্ষমতাসীন হন স্বৈরশাহী শাহ৷

এখন তো ইরানের ওপর আরোপ করা হয়েছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা৷ ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলি এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷

ইসরায়েলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দোসর হিসাবে শত্রু বলে গণ্য করা হয়৷ এছাড়া প্যালেস্টাইনের ভূমি দখল করার জন্যও ইসরায়েলের প্রতি বৈরিভাব বেড়ে গিয়েছে ইরানে৷ অন্যদিকে অস্তিত্ব হারানোর একটা ভীতি ঘিরে রয়েছে ইসরায়েলকে, বলেন জাইর৷ ধর্ম থেকেও কোনো সান্ত্বনা পাওয়া যাচ্ছে না৷ মানুষের স্মৃতিতে এখনও ইহুদিদের ওপর চালানো গণহত্যা ও হলোকাস্টের ভয়াবহতা জাগ্রত৷ আর ইরান মৌখিক ভয় দেখিয়ে ও পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে রেখে ঠিক এই ক্ষতেই আঘাত দিচ্ছে৷

অতীতের প্রেতাত্মাই এখানে শক্তিশালী

‘‘সত্যিকারের আশঙ্কার চেয়ে অতীতের প্রেতাত্মাই এখানে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে'', বলেন সমাজবিজ্ঞানী জাইর৷ তাঁর কথায়, ‘‘এই টানাপোড়েন থেকে বের হয়ে আসার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়কে ইরানের সার্বোভৌমত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে৷ আর ইসরায়েলের জন্য প্রয়োজন ইরানের নেতৃত্বের কাছ থেকে  সুস্পষ্ট একটি বার্তা আসা, যাতে তার অস্তিত্ব ও ভবিষ্যতকে স্বীকার করে নেওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে৷

Ronnie Adri und Kampagne Israel liebt Iran
রনি এড্রিছবি: picture-alliance/dpa

প্রশংসনীয় উদ্যোগ

তবে ইরান ও ইসরায়েলের রাজনীতির বাইরেও কিছু বিষয় আছে, যা তাদের একত্রিত করতে পারে৷ ফেসবুকের এক ক্যাম্পেনের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়৷ তেল আভিবের গ্রাফিক ডিজাইনার রনি এড্রি ২০১২ সালে এই উদ্যোগটি শুরু করেন৷ ‘‘রাজনীতির খেলার বল হতে হতে একেবারে বিরক্তি ধরে গেছে'', বলেন এড্রি৷ দুই তরফই মানুষের ভীতিকে কাজে লাগাচ্ছে৷ তাঁর আইডিয়াটা খুবই সহজ ও কার্যকরী৷ নিজের একটি ছবি ওয়েব সাইটে দিয়ে, তার সাথে কয়েকটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন তিনি: ‘‘ইরানিরা আমরা তোমাদের দেশে বোমা ফেলবো না৷ আমরা তোমাদের ভালবাসি৷''

এড্রি আরো লেখেন, ‘‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আমাদের পরস্পর পরস্পরকে ভয় পেতে হবে, ঘৃণা করতে হবে৷ কিন্তু আমরা তোমাদের ভয় পাই না৷ ঘৃণাও করি না৷ তোমাদের তো চিনিই না আমরা৷''

অভিভূত করার মতো

এই ক্যাম্পেনের সাফল্য অভিভূত করার মতো৷ ‘‘দুই দেশের মানুষের মধ্যে এখন একটা সংলাপ গড়ে উঠেছে'', জানান ৪১ বছর বয়স্ক রনি এড্রি৷

অনেকে সমালোচনা করে বলেন, ব্যাপারটা এত সহজ সরল নয়৷ কিন্তু এড্রি হাল ছাড়ার পাত্র নন৷ যথারীতি তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর তৎপরতা৷ রনি এড্রির ভাষায়, ‘‘মানুষরা পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখান, পরস্পরকে মূল্য দেন৷ এতে করে অন্যের সম্পর্কে মস্তিষ্কে যে ছবিটা রয়েছে, তাও বদলে যায়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য