1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষ

আলেক্সান্ডার কুডাশেফ/এসবি১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কোপেনহেগেন শহরের সিনাগগ, প্যারিসের ইহুদি কোশার দোকান অথবা ইহুদি কবরখানার উপর হামলা – সব ক্ষেত্রেই আমাদের দৃঢ়ভাবে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে বলে মনে করেন আলেক্সান্ডার কুডাশেফ৷

https://p.dw.com/p/1Ecpj
Hunderte Gräber in Frankreich auf dem Friedhof Sarre-Union geschändet
ছবি: Reuters/Vincent Kessler

উগ্র ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদ ইউরোপকে আতঙ্কের জালে ঢেকে রেখেছে৷ চলতি বছর প্রথমে তার শিকার হয়েছে ফ্রান্স, তারপর ডেনমার্ক৷ সন্ত্রাসবাদীরা এবার কোন দেশে হামলা চালাবে, সেটাই এখন প্রশ্ন৷ হামলা যে চালাবে, তা নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ নেই৷ তবে আশার কথা হলো, এই বিপদ, এই সন্ত্রাস সম্পর্কে ভয় রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নষ্ট করে দেয়নি৷ ইউরোপ নতি স্বীকার করতে, নিজস্ব মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত নয়৷ ইউরোপ মুক্ত, উদারপন্থি সমাজের আদর্শ ও তার বাস্তবিক প্রয়োগ অটুট রাখতে চায়৷ মত প্রকাশের অধিকার যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে চায়৷ সেই সব স্বঘোষিত পয়গম্বরদের রুখতে চায়, যারা এক বদ্ধ ঐশ্বরিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে৷

আমরা সবাই এই সন্ত্রাসের লক্ষ্যবস্তু৷ তবে ইউরোপের ইহুদিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের তাগিদটা বেশি৷ জানুয়ারি মাসে প্যারিসে ইহুদিদের জন্য কোশার খাদ্যের একটি দোকানে তার পরিচয় পাওয়া গেছে৷ তারপর কোপেনহেগেন শহরের ইহুদি উপাসনালয় লক্ষ্যবস্থু হয়েছে৷ অনেক বছর ধরে গোটা ইউরোপ – বিশেষ করে ফ্রান্সে ইহুদি কবরস্থানের পবিত্রতা বার বার অবমাননা করা হয়েছে৷ গত সপ্তাহান্তেও এমনটা ঘটেছে৷ অনেকেই এমন সব ‘ছোট' খবরের শিরোনাম উপেক্ষা করেন বলেই বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে মৃত মানুষের শান্তি বিঘ্নিত করা হচ্ছে৷ আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব – অর্থাৎ মানুষের আবেগে ঘা দেওয়া হচ্ছে৷ ইসলামপন্থি বা দক্ষিণপন্থি – যারাই এমন অপকর্ম করুক না কেন, স্মৃতির অবমাননা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ৷

Jüdischer Friedhof in Schwäbisch Hall Schändung
অতীতে জার্মানিতেও এ’ধরনের ঘটনা ঘটেছেছবি: AP

এ কথা ভুললে চলবে না, যে ইউরোপে শুধু ইহুদি ঐতিহ্য নেই, আজকের ইউরোপেও ইহুদি সত্তা এক বাস্তব৷ তবে ইহুদি ইতিহাস শুধু আলব্যার্ট আইনস্টাইন ও মোসেস মেন্ডেলসসোন-এর মতো ইউরোপীয় মননের প্রতীকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তার সঙ্গে রয়েছে প্রায় হাজার বছরের হিংস্র ইহুদি-বিদ্বেষের কালো অধ্যায়ও৷ ক্রুসেড-এর সময় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে সেটা দেখা গেছে, ১৪৯২ সালে স্পেনে ইহুদি সম্প্রদায়ের ঢালাও বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে৷ তারপর ইউরোপজুড়ে জার্মানির উদ্যোগে হলোকাস্ট-এর কীর্তি কারো অজানা নয়৷

ইউরোপের বিশেষ দায়িত্ব

ইউরোপে ইহুদিদের ইতিহাস আসলে নির্যাতন, বৈষম্য, সামাজিক ঘৃণা ও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস৷ তাই আজকের দিনেও ইহুদিদের ইউরোপ ছেড়ে চলে যাবার প্রবণতা রুখতে ইউরোপীয়দের সামনে এসে দাঁড়াতে হবে, তাদের সুরক্ষা দিতে হবে৷ এখনো প্রায় ২০ লক্ষ ইউরোপীয় ইহুদিদের মধ্যে প্রায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পাকাপাকিভাবে ইসরায়েলে চলে যাচ্ছেন৷ এর বাইরে অনেক ইহুদি সবার অলক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা চলে যাচ্ছেন৷ এটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয় বৈকি৷

Alexander Kudascheff
আলেক্সান্ডার কুডাশেফছবি: DW

ইউরোপ এখনো যুক্তিনির্ভর আচরণ করে চলেছে, এমনকি উগ্র ইসলামপন্থি সন্ত্রাসের ক্ষেত্রেও৷ আইনকানুনে প্রায় কোনো পরিবর্তন করা হচ্ছে না৷ আচমকা উন্মত্ত হয়ে ওঠার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না৷ অদৃশ্য বিপদের আশঙ্কায় সমাজ অবশ হয়ে পড়ছে না৷ অন্তত এখনো পর্যন্ত তাই দেখা যাচ্ছে৷ তবে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ইউরোপ ও ইউরোপের মানুষকে আরও জোরালো সংগ্রাম চালাতে হবে৷ দেশে ও সমাজে ইহুদিদের এই স্বাভাবিক আশ্বাস দিতে হবে যে, ইউরোপ তাদের পাশেই রয়েছে৷ ইহুদি কিন্ডারগার্টেন, স্কুল বা সিনাগগের সামনে পুলিশি পাহারার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা অনেকের গা সওয়া হয়ে গেলেও বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক৷ গাজায় যুদ্ধের মতো ঘটনার সময় ইসরায়েলের সমালোচনার আড়ালে প্রায়ই প্রচ্ছন্ন ইহুদি বিদ্বেষের ছায়া দেখা যায়৷ এমন রাজনৈতিক মনোভাব মেনে নেওয়া কঠিন৷ ইউরোপ ও ইউরোপের সব মানুষকে বেড়ে চলা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আরও জোরালোভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ শুধু বিক্ষোভ সমাবেশে নয়, দৈনন্দিন জীবনে তাদের এটা করতে হবে৷ বাইবেলে লেখা আছে, ‘‘প্রতিবেশীর রক্ত দেখলে নিশ্চুপ থেকো না৷'' নীরব থাকলে চলবে না, উচ্চস্বরে এর বিরুদ্ধে রখে দাঁড়াতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য