1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাকাশ যখন হাতের মুঠোয়

অ্যাশলে বার্ন/জেকে১৬ জুন ২০১৪

চলতি মাসেই চিলি মরুভূমির একটি পাহাড় চূড়ায় শুরু হচ্ছে অতিকায় এক টেলিস্কোপ বসানোর কাজ, যা মহাকাশের দিকে বিজ্ঞানীদের নজর রাখার কাজটি আরো সহজ করে দেবে৷ দেখা যাবে ‘মিল্কিওয়ে’-র বাইরের বিশ্বটাও৷

https://p.dw.com/p/1CIPv
কাজ শেষ হলে টেলিস্কোপটির অবস্থান এমন হবেছবি: ESO/L. Calçada

এই অবজারভেটরি বা মানমন্দিরের নাম দেয়া হয়েছে ইউরোপিয়ান এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ (ই-ইএলটি)৷ এর সাহায্যে পৃথিবীতে বসেই আমাদের সৌরজগতের বাইরের জগৎ দেখার এবং পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন জ্যোতির্বিদরা৷

অতিকায় এই টেলিস্কোপটি নির্মাণ করছে ১৫টি দেশের মিলিত সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি'৷ চিলিতে তাদের বেশ কয়েকটি মানমন্দির থাকলেও এ সংস্থার ৫০ বছরের ইতিহাসে ই-ইএলটি হবে সবচেয়ে বড় ও উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ৷

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সপেরিমেন্টাল ফিলসফির অধ্যাপক গ্যারি গিলমোর এই প্রকল্পের সঙ্গে আছেন একেবারে শুরু থেকে৷ তাঁর ভাষায়, ই-ইএলটি-র পুরো নামের প্রতিটি শব্দই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথমত এটি পুরোপুরি ইউরোপীয় এবং দ্বিতীয়ত এটি সত্যিই অতিকায়৷

‘‘আয়না পর্যন্ত মাপ ধরলে এটি প্রায় ৪০ মিটার দীর্ঘ৷ এ পর্যন্ত যত টেলিস্কোপ বানানো হয়েছে, সেগুলোর যে কোনোটির চেয়ে এটি কয়েকগুন বড়৷ আকৃতিতে প্রায় একটি টেনিস কোর্টের মতো৷ এমনভাবে এর নকশা করা হয়েছে, যাতে রাতের আকাশে উঁচু মানের ছবি পাওয়া সম্ভব হবে৷''

বাইরে থেকে দেখলে ই-ইএলটি-কে আন্দেজ পর্বতমালায় ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির বর্তমান মানমন্দিরের মতোই মনে হবে৷ নতুন এই টেলিস্কোপ বসাতে চিলির সেরো আমাজোনা পাহাড়ের চূড়া বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিতে হবে প্রকৌশলীদের৷ চিলির উত্তরে উপকূলীয় পার্বত্য অঞ্চলের মাঝামাঝি এলাকা হওয়ায় মানমন্দিরের আবহাওয়া হবে শুষ্ক ও ঝকঝকে৷ জ্যোতির্বিদদের কাছে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

গিলমোর বলেন, ‘‘পানি আর বাতাস – দুটোই টেলিস্কোপের বড় শত্রু৷ রাতের আকাশ দেখার সময় এ দুটোই সবচেয় বড় সমস্যা সৃষ্টি করে৷ বাতাসের হাত থেকে রেহাই পেতে আপনাকে যতটা সম্ভব পাহাড়ের উপরে উঠে যেতে হবে৷ আর ওই এলাকাকে হতে হবে যতটা সম্ভব শুষ্ক৷ বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি হলে টেলিস্কোপের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাবে৷''

কিন্তু এ টেলিস্কোপের সবচেয় বড় সমস্যা ওই আকৃতি নিয়েই৷ বিরাট আকৃতির প্রতিটি যন্ত্রপাতি অতি সাবধানতার সঙ্গে পর্বতের চূড়ায় তুলতে হবে৷ গুঁতো লেগে কোথাও টোল পড়লে চলবে না, বেঁকে গেলেও হবে না৷ কাজেই সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো পর্বতের মাথা ছেঁটে ফেলা৷ আর এ জন্য ওই পাহাড় চূড়া থেকে কয়েক লাখ টন পাথর স্রেফ উড়িয়ে দিতে হবে৷ প্রকৌশলীরা এ কাজটি শুরু করবেন ১৯শে জুন৷

ই-ইএলটি-র জন্য এই মানমন্দির গড়ে তুলতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে৷ তৈরি হয়ে গেলে ই-ইএলটি-র কাছে বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি থাকবে – ‘এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা?'

গিলমোর বলেন, ‘‘এই টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা আমাদের প্রতিবেশী সৌরজগতের গ্রহগুলোর ওপর চোখ রাখতে পারব৷ এ রকম কয়েক হাজার গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে আশেপাশের সৌরজগৎগুলোতে৷ আমরা খুঁজতে পারব – এর মধ্যে কোনোটি গ্রীষ্মে আমাদের পৃথিবীর মতো সবুজ হয়ে ওঠে কিনা৷ আমরা এ সব গ্রহের বদলে যাওয়া বুঝতে পারব, আবহাওয়া সম্পর্কে জানতে পারব৷ দূর গ্রহ থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে কেউ হয়ত হাত নাড়বে না৷ কিন্তু কোথাও ঘাস গজালো কিনা, আমরা তা ঠিকই বুঝতে পারব৷''

কেবল এলিয়েন খোঁজা নয়, বিলিয়ন ইউরোর এই প্রকল্পের আরো অনেক কাজ থাকবে, আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর জ্যোতির্বিদরা ই-ইএলটি-র কাছে চাইবেন৷ তবে সেজন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে আরো অনেক দিন৷ চলতি মাসে কাজ শুরু হলেও নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগবে ১০ বছরেরও বেশি৷ আর সেই টেলিস্কোপে চোখ রাখার সুযোগ অধ্যাপক গিলমোর হয়ত পাবেন না৷

‘‘এত বড় একটি প্রকল্পের আইডিয়া পরিপক্ক হতে, সে অনুযায়ী উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করতে, রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করতে, টাকা জোগাড় করতে, যুৎসই নির্মাণ কৌশল নির্ধারণ করতে এবং শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু করতে ৩০-৪০ বছরও লেগে যায়৷ কাজেই যথেষ্ট তরুণ এবং সৌভাগ্যবান না হলে চূড়ান্ত সাফল্য দেখে যাওয়া সম্ভব হয় না৷ আমি নিজের জন্য এটা করছি না৷ এটা অনেকটা ওক গাছের চারা লাগানোর মতো, যার ছায়া হয়ত আপনার নাতি-নাতনিরা পাবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য