1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের অসহিষ্ণুতা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৬ এপ্রিল ২০১৭

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আর বিধানসভা ভোটে বিজেপির সাফল্যে ভর করে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের লক্ষ্য এবার ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ ধর্মীয় মেরুকরণ ও সর্বগ্রাসী অসহিষ্ণুতা তারই প্রতিফলন, যার শিকার খ্রিষ্টান ও আফ্রিকানরাও৷

https://p.dw.com/p/2bD9d
প্রতীকী ছবি
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh

প্রধানমন্ত্রী মোদী যতই উন্নয়নের কথা বলুন না কেন, আসল লক্ষ্য তাঁর ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ তাই তলে তলে সমানে চলেছে ধর্মীয় মেরুকরণের কাজ৷ উত্তর প্রদেশ বিধানসভার হালের নির্বাচনে বিজেপির বিপুল সাফল্যের পর যোগী আদিত্য নাথকে যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করা হলো, তখনই তা স্পষ্ট বোঝা গেছে যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে৷ হচ্ছেও তাই৷ অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটছে নানাভাবে৷ কেন্দ্রে মোদী আর উত্তর প্রদেশে যোগী – এই দুইয়ের মেলবন্ধনে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে গোটা দেশে৷

গো-রক্ষার নামে কট্টর মনোভাব, গরু পরিবহণকারীদের গণপিটুনি৷ তাতে মারাও গেছে জনা দুই৷ তাঁদের অপরাধ, তাঁরা গরু বিক্রির জন্য লরিতে গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন৷ রাস্তা ঘাটে নজর রাখছে ‘অ্যন্টি-রোমিও স্কোয়াড'৷

তরুণ-তরুণীদের একসঙ্গে বসে গল্প করতে দেখলেই ধরপাকড় করা হয়৷ সব ধর্মের লোকদেরই ‘বন্দে মাতরম' গাইবার জন্য চাপ দেওয়া হয়৷ এমনকি সূর্য নমস্কারের ভঙ্গির সঙ্গে নামাজের মিল খুঁজে অযথা বিতর্ক তোলা হয়৷ উত্তর প্রদেশে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে রাজ্যে ‘হিন্দু যুব বাহিনী' নামে একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে৷ এদের সীমা শালীনতার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে৷ কয়েকদিন আগে উত্তর প্রদেশের মিরাট শহরে এক মুসলিম বাড়িতে জোর করে ঢুকে এক দম্পতিকে হেনস্থা করা হয়৷ যুব বাহিনীর মতে, তাঁরা নাকি দম্পতি নয়. ছেলে বন্ধু-মেয়ে বন্ধু৷ এই ধরনের আরেকটি ঘটনায় যুব বাহিনী একটি ছেলের মাথা মুডিয়ে দেয়৷ তাঁর অপরাধ, তিনি তাঁর বান্ধবিকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন৷

বিজেপিশাসিত গুজরাটে ভোট এ বছরের শেষ নাগাদ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গো-হত্যার শাস্তি বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করতে চাইছেন৷ বিজেপিশাসিত অপর রাজ্য ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী গো-হত্যার অপরাধে ফাঁসিতে ঝোলাবার দাবি জানিয়েছেন৷

উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে খ্রিষ্টান পাদ্রি এবং চার্চগুলিও৷ কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, ছত্তিশগড় রাজ্যের চার্চগুলিতে ভাঙচুর চালানো হয়, আগুণ লাগায় সংঘ পরিবারের সদস্যরা৷ মারধর করে চার্চের পাদ্রী এবং মহিলা নানদের৷ অভিযোগ, খ্রিষ্টানরা জোর করে বা লোভ দেখিয়ে নাকি হিন্দুদের বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকদের খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছিল৷ তাই দেশে মুসলিমদের মতো খ্রিষ্টান জনসংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে৷ ‘ঘর ওয়াপসি'-র নামে আবার হিন্দু ধর্মে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে৷ একটি চার্চে গৈরিক পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে গির্জার পুরুষ ও মহিলা সদস্যদের দৈহিক হেনস্থা করা হয়৷ যদিও চার্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, গৈরিক পতাকা কেউ ছিঁড়ে ফেলেনি, বাতাসে ছিঁড়ে গেছে৷

বাদ যায়নি বিদেশিরাও৷ আফ্রিকানদের ওপর হামলার ঘটনা জাতিবিদ্বেষের নগ্ন নজির৷ সম্প্রতি দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডায় নাইজেরীয় এক পড়ুয়াকে এবং কেনিয়ার একজন তরুণীকে নিগ্রহের ঘটনায় নতুন দিল্লির আফ্রিকান দেশগুলির রাষ্ট্রদূতরা উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার এবং কেন্দ্রের মোদী সরকারকে মূলত দায়ী করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে, গত দু'বছরে রুয়ান্ডা, উগান্ডা ও কংগোসহ অনেক আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের উপর হিংসাত্মক ঘটনার প্রসঙ্গ৷ এমন ঘটনা দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরেও ঘটেছে৷ বছর খানেক আগে দক্ষিণ দিল্লিতে কংগোর মাসুন্ডা অলিভারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই তুলনা চলে আসে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বা অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয়দের খুনের ঘটনায় জাতিবিদ্বেষ বা বর্ণবিদ্বেষের জিগির তুলে দিল্লি যদি সোচ্চার হতে পারে, তাহলে ভারতে এমন ঘটনা কেন ঘটছে, তার সদুত্তর কি মোদী সরকার দিতে পারবে?

মোদী প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, আফ্রিকানদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা মাদক পাচার এবং অন্যান্য অসামাজিক কাজে লিপ্ত৷ বৃহত্তর সুশীল সমাজ অবশ্য মনে করেন, এ সবই হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিরই ফল৷ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে নরমাংস খাওয়ার মতো অভিযোগ তোলা অসহিষ্ণু হিন্দুত্বাবাদী রাজনীতির আগ্রাসন ছাড়া আর কী?

অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি এবং সংঘ পরিবার তাদের সংগঠনগুলিকে আরও শক্তিশালি করতে ময়দানে নেমেছে৷ রাম নবমীর দিনটিকে সামনে রেখে রাজ্যের বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে৷ হাতে রাম দা নিয়ে মিছিলও করছে৷ নিষেধাজ্ঞাতে কাজ না হওয়ায় পাল্টা রণকৌশলে তৃণমূল কংগ্রেসও পালন করছে হনুমান পুজো৷ সব মিলিয়ে বাড়ছে রামের রাজ্যপাট৷ এতে অনেকেই সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোলের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন৷

গত বুধবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এক প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন৷ তাঁরা তাঁকে জানিয়েছেন, উগ্র হিন্দু্বাদীদের দৌরাত্মে গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং আইনের শাসন বিপন্ন৷ ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক হিংসা৷ তৈরি হয়েছে সাধারণ নাগরিদের নিরাপত্তাহীনতার আবহ৷ সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি মনে করেন, সংঘ পরিবারের অঙ্গ হিসেবে বিজেপি সংবিধান সংশোধন করে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চাইছে৷

বন্ধু, ভারত কি সত্যিই একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে? জানান আপনার মতামত, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য