1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্চ রক্তচাপ জনিত ঝুঁকি হ্রাসে লবণের উপর নিয়ন্ত্রণ

২৭ এপ্রিল ২০১০

উচ্চ রক্তচাপ জনিত মারাত্মক অসুখ থেকে বাঁচাতে নানা সতর্কবাণী দিয়েও যখন মানুষকে বেশি লবণ খাওয়া থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না, তখনই এই সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছেন মার্কিন নীতি-নির্ধারকরা৷

https://p.dw.com/p/N7P9
মিয়ানমারের এক দল নুন চাষি বাজারে যাচ্ছে লবন নিয়ে (ফাইল ফটো)ছবি: AP

মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল লবণের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য চাপ দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন - এফডিএ'র উপর৷ বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এরকম, খাদ্যে কী পরিমাণ লবণ দেবেন তা নির্ধারণ করে দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ৷ মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন বলছে, মার্কিন জনগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়াজাত করা এবং হোটেলে প্রস্তুত খাবার থেকেই সোডিয়াম পেয়ে থাকে৷ তাই তাদেরকে শুধুমাত্র লবণ কম খাওয়ার কথা বলে কোন কাজ হচ্ছে না৷ এজন্য প্রয়োজন খাদ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এই সংক্রান্ত কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ৷

লবণের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা বলছে, ইতিমধ্যেই লবণের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এফডিএ৷ এমনকি এই বছরের মধ্যেই খাদ্যে লবণ ব্যবহারের মাত্রা নিয়ে একটি আইনি সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে৷ ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন এর প্রধান এবং ওহাইও'র ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটি কলেজ অব মেডিসিন এর অধ্যাপক জেইন হেনেই বলেন, ‘‘বিগত ৪০ বছর ধরেই আমরা উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধিসমূহের সাথে সোডিয়ামের সম্পর্কের বিষয়টি জানি৷ অথচ খাবারে লবণের মাত্রা হ্রাসে এখন পর্যন্ত আমরা কার্যত কোন সাফল্যই পাইনি৷''

Flash-Galerie Diätlügen - Jogger im Park
ছবি: AP

এই প্রেক্ষিতে বৃহত্তর পরিধিতে লবণের মাত্রা কমাতে হলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকেই একটি সীমা বেধে দিতে হবে৷ তবে হুট করে এক লাফেই খাবার-দাবারে লবণ একেবারে কমিয়ে ফেলা যাবে না৷ কারণ তাতে খাবারে স্বাদ না পেলে মানুষ আর সেই খাবার মুখেও তুলবে না কখনো৷ এসব ভেবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে যে, ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে৷

লবণের দৈনিক চাহিদা

বলে রাখা ভালো, প্রতিদিন জৈবিক চাহিদা মেটাতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য দেড় হাজার মিলিগ্রাম লবণ প্রয়োজন৷ কিন্তু অ্যামেরিকার জনগণ গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার চার শ' মিলিগ্রাম তথা প্রায় দেড় চা চামচ পরিমাণ লবণ খায়৷ যা প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি৷ মার্কিন গবেষকদের ভাষ্য মতে, সেখানে ১০ শতাংশ লবণ খাওয়া কমানো হলে, লাখ লাখ মানুষের হৃদরোগ এবং মস্তিষ্কে চোট জনিত প্রাণহানির ঝুঁকি হ্রাস পাবে৷ এতে সরকারের স্বাস্থ্যসেবার খাত থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার অর্থ বাঁচবে৷ সূত্রটি জানিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগ-ব্যাধির পেছনে মার্কিন সরকারের খরচ হয় প্রতি বছর ৭৩ বিলিয়ন ডলার৷

ডা. নাজিব ওয়াদুদের সাক্ষাৎকার

শরীরের উপর লবণের ক্ষতিকর ক্রিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নাজিব ওয়াদুদ বলেন, লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান৷ শরীরে লবণ বেশি হলে পানির পরিমাণও বেড়ে যায়৷ ফলে শরীরের অভ্যন্তরে মোট তরল পদার্থের আয়তনও বেড়ে যায়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়৷ আর রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে হৃদপিণ্ডের আয়তন বেড়ে যায়৷ একইসাথে নানা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়৷

বাংলাদেশের মানুষ লবণের ব্যবহারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করছে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে মোটেও সতর্ক নয়৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদিও এখনও প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খুব বেশি পরিমাণে চালু হয়নি৷ তবুও খাদ্যাভ্যাসের কারণেই এখানকার মানুষ বেশ ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে৷ কারণ লবণ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া, তরি-তরকারিতে বেশি লবণ খাওয়া এমনকি খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যেস রয়েছে৷

লবণের ক্ষতিকর ক্রিয়া থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের মানুষের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত লবণ কম খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে৷ এছাড়া প্রক্রিয়াজাত করা খাবার কম খাওয়া, খাবার তৈরি করার সময় যতটা সম্ভব কম লবণ ব্যবহার এবং এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক