1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উটের দুধ বিক্রি করে টিকে আছে রাইকা সম্প্রদায়

৯ জানুয়ারি ২০১৯

রাজস্থানের রাইকা সম্প্রদায়ের শত বছরের উট পালার প্রথা এখন হুমকির মুখে৷ লাভজনক না হওয়ায় উট পালার উপর থেকে আগ্রহ অনেকের কমে যাচ্ছে৷ তবে তাঁদের আশার আলো দেখাচ্ছেন এক জার্মান৷

https://p.dw.com/p/3BDm0
Indien Nomaden mit Kamelen
ছবি: DW/Cornelia Borrmann

 উটের নানামুখী ব্যবহারের মাধ্যমে রাইকাদের জন্য অর্থ আয়ের নানাপথ তৈরি করে দিয়েছেন তিনি৷

রাইকা জনগোষ্ঠী গত কয়েক শতক ধরে রাজস্থানে উট পালন করছে৷ অনেকের বিশ্বাস যে, ঈশ্বর শিব নিজেই এই রাইকা সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন, যাঁদের কাজ হচ্ছে শুধু উট পালন করা৷ তবে সময় বদলেছে৷ রাইকাদের প্রথাগত জীবনযাপন এখন হুমকির মুখে৷  

কৃষিকাজে এখন মেশিন ব্যবহার করে অনেককিছু করা যায়, যা করতে আগে উটের দরকার হতো৷ ফলে উটের প্রয়োজনীয়তা দ্রুত কমছে৷ গত ত্রিশ বছরে রাজস্থানে উটের বংশবৃদ্ধিও নাটকীয়ভাবে কমেছে৷ ভানওয়ারলাল রাইকার উটের পালও ছোট হয়ে গেছে৷ তাঁর বাবার কাছে এর দ্বিগুন উট ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই ঐতিহ্য বংশানুক্রমে চলছে৷ কিন্তু যদি আয় না থাকে, তাহলে আমরা এই ঐতিহ্য কিভাবে ধরে রাখবো? তরুণদের জীবিকার আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতে হচ্ছে৷ আমার সন্তানরা স্কুলে যায়৷ আর সেজন্য আমার প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ হয়৷ যদি আমরা উট পেলে আর জীবিকা নির্বাহ করতে না পারি, তাহলে আমরা টিকে থাকবো কিভাবে?''

ইলসা-ক্যোঁহলার-রোলেফসন একজন জাতিবিদ এবং পশুচিকিত্সক৷ হানোয়ান্ত সিং রাঠোরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, যেটি উট পালকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে৷ রাইকা এবং তাঁদের উটের জন্য এটি একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ৷ তিনি বলেন, ‘‘উট পশুচারণ নানাভাবে গাছ সংরক্ষণে সহায়তা করে৷ অনেক গাছ শুধুমাত্র জাবর কাটা পশুর সহায়তায় অঙ্কুরিত হতে পারে৷ এটা একটা প্রাকৃতিক চক্র: মানুষ, উট, বায়োটপ এবং মানসম্পন্ন খাবার উৎপাদন৷'' 

গত কয়েকশ' বছর ধরে উট প্রজনন রাইকাদের উপার্জনের মূল উৎস৷ নারী উটগুলোকে তাঁরা প্রজননের জন্য রেখে দেন৷ উটের দুধ খুবই স্বাস্থ্যকর৷ উটপালক এবং তাঁদের পরিবারের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান এটি৷ তাঁরা আগে বলতো, উটের দুধ বিক্রি অনেকটা নিজের সন্তান বিক্রির মতো ব্যাপার৷ কিন্তু সেই অবস্থান থেকেও সরে এসেছেন তাঁরা৷

এখন ভানওয়ারলাল রাইকা প্রতিদিন সকালে উটের দুধ পাশের একটি দুধ বিক্রির খামারে নিয়ে যান৷ তিন বছর আগে এলপিপিএস এই খামার চালু করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম৷ উট বিক্রি করে ফেলি৷ কিন্তু তখনই এই সংগঠন উটের দুধ বিক্রি শুরু করে৷ ফলে আমি আবার উটের পাল ফিরিয়ে আনি৷ এখন উটের দুধ বিক্রির মাধ্যমে আমি আমার পরিবারের অন্নসংস্থান করতে পারছি৷ এখন এই সংগঠন যদি কাল থেকে আবার দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমার উটের পাল আবার বিক্রি করে দিতে হবে৷''

 উটের দুধ বিক্রির এই খামারতোলারাম রাইকার ভাগ্যও বদলে দিয়েছে৷ যখন তিনি ছোট ছিলেন, তখন তাঁকে তাঁর পরিবার শহরে পাঠিয়েছিল পয়সা উপার্জন করতে৷ তিনি পনের বছর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং চায়ের দোকানে কাজ করেছেন৷ তোলারাম রাইকা বলেন, ‘‘আমি শহরে অনেক বছর ধরে কাজ করেছি৷ কিন্তু সেখানে এখানকার তুলনায় কম রোজগার করতাম৷ আমি এই খামারে দুই মাস আগে কাজ শুরু করেছি৷ আমি উটের দুধ সম্পর্কে অনেক কিছু জানি৷ আমি এখানে কাজ করতে পেরে অনেক সন্তুষ্ট৷ আমি আশা করছি, খামারটা ভালোভাবে এগিয়ে যাবে৷''

উটের খাদ্য তালিকা বেশ বিস্তৃত৷ ৩৬ রকমের উদ্ভিদ খায় সেগুলো৷ এসব উদ্ভিদের মধ্যে ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদও আছে৷ ফলে সেগুলোর দুধে অনেক রকম স্বাস্থ্যকর উপাদান আছে বলে বিশ্বাস করা হয়৷

তবে এখনো কামেল কারিশমা প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যাপ্ত দুধ বিক্রি করতে পারছেন না৷ খামারটির কর্মক্ষমতার মাত্র একতৃতীয়াংশ এখন অবধি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ফলে এটির আরো ক্রেতা দরকার৷ ড. ইলসা-ক্যোঁহলার-রোলেফস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ছয়টির মতো পরিবার আমাদের উটের দুধ সরবরাহ করছে৷ তবে এ ব্যাপারে অনেকের আগ্রহ আছে৷ আমরা প্রতিদিন রাইকাদের কাছ থেকে আমাদের কাছে দুধ বিক্রির আগ্রহের ব্যাপারে ফোনকল পাই৷ তাঁরা ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ আমরা দেখেছি, যে রাইকারা দুধ বিক্রি করতে পারছেন, তাঁরা তাঁদের উটগুলো পালনে সক্ষম হচ্ছেন৷ ''

অবিক্রিত দুধ দিয়ে সাবান তৈরি করা হয়৷ এটি এমন এক পণ্য যা ভালো বিক্রি হয়৷ আর রাইকাদের জন্য এটা আয়ের আরেক উৎস৷ আসলে নতুন কিছু উৎপাদনে রাইকাদের আগ্রহেরও কমতি নেই৷ তাঁরা উটের লোম দিয়ে কাপড় তৈরি করছেন৷ এমনকি উটের গোবর দিয়ে কাগজও তৈরি হচ্ছে৷

প্রতিবেদন: কর্নেলিয়া বরমান / এআই