1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাশ্মীরিদের বিষণ্ণ ঈদ

১২ আগস্ট ২০১৯

ইন্টারনেটসহ সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার মধ্যে ইসলামের প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা পালন করলো ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরবাসীরা৷ ভারতবিরোধী সভা-সমাবেশের আশঙ্কায় কাশ্মীরিদের জড়ো হওয়ারও কোনো সুযোগ দিচ্ছে না মোদী প্রশাসন৷

https://p.dw.com/p/3NmI4
Indien Kaschmir Opferfest
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Anand

অতীতে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে থাকলেও ঈদ ছিল আনন্দের, উল্লাসের৷ কিন্তু এখন কাশ্মীরিদের চোখে-মুখে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক আর চাপা ক্ষোভ৷ অবরুদ্ধ উপত্যকায় এবার ঈদ এলো বিষণ্ণ চেহারায়৷ ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সোমবার বড় জমায়েতের ভয়ে শ্রীনগরের বেশিরভাগ মসজিদে ঈদের জামাতের অনুমতি দেয়নি সরকার৷

শুক্র ও শনিবার শহরের অনেক এলাকায় বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হলে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছিল সেখানে৷ গতকালও বিভিন্ন দোকানপাটে ভিড় করে মানুষ৷ কিন্তু  বিকালের দিকে আবারো সব দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দেয় পুলিশ৷ ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ আবার ঘরে ফিরে যায়৷

এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, কাশ্মীর উপত্যকায় বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের নামাজ৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বারামুল্যাতে ১০ হাজার এবং বান্দিপোড়ায় পাঁচ হাজার মানুষ ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছে৷ জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তাদের ট্যুইটারে জানিয়েছে, কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের দেয়া বিভিন্ন ছবিতে শ্রীনগরের আশপাশের ছোট মসজিদগুলোতে স্থানীয়দের ঈদের নামাজ পড়তে দেখা গেছে৷

আটক সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকেও কাছাকাছি মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ এদিকে, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেওয়া ‘বিশেষ সুবিধা' বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স৷

সরকারের পক্ষ দাবি করা হয়েছে, বিধিনিষেধের পরও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনের সব ব্যবস্থা করেছে তারা৷ শ্রীনগরে বাড়ি বাড়ি ভ্যানে করে শাকসবজি, ডিম, মুরগীর মাংস এবং এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়৷ আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের স্বার্থে বিশেষ টেলিফোন বুথ বসানো হয়েছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে৷

পরিকল্পনা কমিশনের মুখ্য সচিব রোহিন কানসাল বলেন, ঈদ উপলক্ষে ‘‘আড়াই লক্ষেরও বেশি পশু প্রস্তুত রেখে আটটি স্থানে বাজার বসানো হয়েছে৷ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা ছিল এবং ব্যাংকগুলোতে সবার বেতন-ভাতাদি দিতে প্রয়োজনীয় অর্থও পাঠানো হয়েছিল৷''

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফর

এদিকে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তকে আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমূল্যায়ন হিসেবে চিহ্নিত করে ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে চীন৷ দেশটির সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে তিনদিনের সফরে চীন গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর৷ রোববার তিনি চীনে পৌঁছেছেন৷ বৈঠকের বিষয়ে এখনো্ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷

Subrahmanyam Jaishankar
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করছবি: AFP/Getty Images/S. Loeb

কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভারত ও পাকিস্তান৷ দু্ই দেশেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই ভূ-খণ্ডে৷ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে এ বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে৷ গোটা কাশ্মীরের ৪৫ ভাগ রয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রণে, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ৩৫ ভাগ এবং অবশিষ্ট ২০ ভাগ আছে চীনের দখলে৷

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেছেন, ‘‘চীন-ভারত সীমান্তের পশ্চিমাঞ্চলকে ভারত তার প্রশাসনিক অধিভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে চীন বিরোধিতা করে আসছে৷''

তিনি আরো বলেন, নিজের দেশের আইনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারত চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি আঙুল তুলেছে৷ ভারতের এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটির কোনো বৈধতা নেই৷

পাকিস্তানের প্রতি চীনের সমর্থন

পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশির চীন সফরের পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি আলোচনায় এলো৷ পাক-চীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ঘটনায় পাকিস্তানের সমর্থন পাবে৷ শনিবার ইসলামাবাদও জানিয়েছে, বেইজিংয়ের সমর্থন নিয়ে কাশ্মীর ইস্যুটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে চায় দেশটি৷ এ বিষয়ে চীনের পূর্ণ সমর্থন আছে বলেও জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷

কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘বিশেষ মর্যাদা' প্রত্যাহার করা এবং নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রকে নতুন করে সাজানোকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলছে ভারত৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত কোনো মন্তব্য করে না এবং অন্য দেশের কাছে এটাই প্রত্যাশা করে তারা৷''

পারস্পরিক অবিশ্বাস

১৯৬২ সালে সীমান্ত যুদ্ধের পর থেকেই অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে চীন এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে৷তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার নির্বাসনকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত৷ অন্যদিকে, ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে বরাবরই ভালো সম্পর্ক রেখে চলেছে চীন৷

টিএম/এসিবি (এনডিটিভি, ডিডাব্লিউ)