1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইন না মানার চর্চার শেষ কবে?

আসমা মিতা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঢাকায় উল্টোপথের গাড়ি ঠেকাতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ট্রাফিক বিভাগ৷ এর মধ্যেও পরপর দু'দিন নিয়ম ভেঙ্গে ধরা পড়ায় সমালোচনায় পড়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের এক ভারপ্রাপ্ত সচিব৷ এতে তার কিছু না হলেও চালকের শাস্তি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2kqUK
ছবি: Bdnews24.com

উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে সরকারি গাড়ি৷

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আইন না মানার তালিকায় বেশিরভাগ সময়ই এগিয়ে থাকেন দায়িত্বশীলরাই৷ পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, সাংসদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, গণমাধ্যমসহ ব্যক্তিগত গাড়িও উল্টো পথে চলছে৷ সাধারণ মানুষও সুযোগ পেলেই উল্টো পথে যানবাহন চালিয়ে দেয়৷

এই অনিয়মে বাধ সাধতেই এ দফায় প্রথম এগিয়ে আসে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ রোববার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে হঠাৎ করেই এক অভিযান শুরু করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ৷ তাঁর উদ্যোগে পুলিশ সেখানে উল্টো পথে চলা গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকানো শুরু করে৷ মাত্র দুই ঘণ্টার অভিযানে আটক হয় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, সচিব, বিচারক, সরকারি দলের নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকদের গাড়ি৷ দুই ঘন্টায় ট্রাফিক পুলিশ ৫০টি যানবাহন ধরে মামলা ও জরিমানা করে৷ এর মধ্যে ৪০টিই সরকারি গাড়ি৷

Bangladesch Verkehr in Dhaka Geisterfahrer
ছবি: Bdnews24.com

উল্টো পথে গাড়ি চলা রুখতে পরদিন সোমবার থেকে ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা চলার কথা৷ 

উল্টো পথে গাড়ি আটকের ঘটনায় বিশেষভাবে নজরে এসেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানা৷ তিনি একটি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব৷ প্রথমদিন তার গাড়ি আটক করে চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হয়৷ পরদিন আবার একই ঘটনা ঘটান তিনি৷ আবারও উল্টো পথ ধরেন৷ চালকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷

লক্ষণীয় হলো, এই অভিযানে কেবল গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হচ্ছে৷ আড়ালে থেকে যাচ্ছেন মালিক, যিনিও কম দায়ী নন৷ কারণ, এমন ঘটনা অহরহই ঘটে যে, মালিকের প্ররোচনাতেই উল্টো পথে যেতে বাধ্য হন চালক৷

এ বিষয়ে জানতে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করে এই অভিযানের থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘মোটরযান আইনের অধীনে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে৷ সেই আইন অনুযায়ী, চালকের বাইরে অন্য কাউকে শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়৷ ঘটনার সময় মালিক যদি চালকের আসনে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ তবে আইনে না থাকায় মালিক গাড়িতে কেবল বসে থাকলে তার বিরুদ্ধে আর ব্যবস্হা নেয়া যাচ্ছে না৷’’

‘আইন অনুযায়ী, চালকের বাইরে অন্য কাউকে শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়’

এ্ই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি সেই সচিব৷

অভিযানে এ দফায় বৃহস্পতিবার শেষ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানান পুলিশের মোসলেহউদ্দিন আহমেদ৷ কিছুদিন পর আবারও অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

রাজধানীর অসহনীয় যানযটে সময় বাঁচাতেই যে সবাই একাজ করছেন তা পরিস্কার৷কিন্তু এতে করে যে অন্যের জীবনে কী বিপদ নামছে তা ভাবছেন না কেউ৷ বলছি, সড়ক দুর্ঘটনার কথা৷   

চলতি বছর ফায়ার সার্ভিস প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে ঢাকা বিভাগে ৪৭৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩৯ জন৷ ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮৪টিতে৷ দুর্ঘটনায় শিকার ২২৯ জন নিহত হন৷ এরপরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এক লাফে সেই সংখ্যা ১ হাজার ৩৭১ এ পৌঁছায়৷ এতে নিহত হন ৪০১ জন৷ বলে রাখা ভালো, এসব দুর্ঘটনার অনেকগুলো রাজধানীতেও ঘটেছে৷

Asma Khanom
আসমা মিতা, ডয়চে ভেলেছবি: Anupom Deb

এসব দুর্ঘটনার সবই উল্টোপথে গাড়ি চালানোর জন্যই ঘটেছে তা যেমন ঠিক নয়, তেমনি কিছু ঘটনা যে ঘটছেও সেটিও মানতে হবে৷ সুতরাং নিজে বাঁচতে উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে সবাইকে বোকা বানিয়ে আগেভাগে চলে যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়৷শত শত গাড়ি যখন যানজটে আটকে থাকে, নিশ্চল হয়ে যখন ভোগান্তি পোহান সবাই, তখন চোখের সামনে দিয়ে কিছু মানুষের এই উল্টোযাত্রা সাধারণ মানুষের প্রতি এক ধরনের পরিহাসও বটে৷এমনিতেই যে দেশে মানুষ আইন মানতে চায় না, সে দেশে এমন চর্চা যে মানুষকে আইন মানতে আরও নিরুৎসাহিত করে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

অভিযান হলেই সাবধান হতে হবে, আইন মানতে হবে– এমনটি হতে পারে না৷ কারণ, এমন প্রবণতা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাহীনতার লক্ষণ৷ এ প্রবণতা শুধু ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনেরই দৃষ্টান্ত নয়, সাধারণভাবে আইনের শাসন না থাকারও ফলাফল৷