1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উৎসবের মৌসুমে ছোট ব্যবসায়ীদের কষ্ট

পায়েল সামন্ত ভারত
৪ নভেম্বর ২০২১

জ্বালানির দাম দাম অবশেষে কিছুটা কমলেও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখনো স্বস্তিতে নেই৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে৷

https://p.dw.com/p/42a1U
Indien | Coronavirus | Lockdown trifft Einzelhändler hart
ছবি: Payel Samanta/DW

পেঁয়াজ, টমেটো, আলু বা অন্যান্য সবজির দাম দুর্গাপুজোর থেকে অনেকটাই বেড়েছে এই মৌসুমে৷ ভোজ্যতেল বাদ দিলেও শাক সবজির দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারের দর অনেকটাই বেড়েছে৷ মাছ-মাংসের বাজারেও হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না৷ কিন্তু এত দাম কেন? পাইকারদের বক্তব্য, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির জন্য খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ তাছাড়া অতিবৃষ্টির জন্য সবজি অনেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে, ফলে কলকাতার বাজারে চাহিদা থাকলেও জোগান কম৷

জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের যেমন হাঁসফাঁস অবস্থা, তেমনি বাদ নেই ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা৷ রান্নায় ব্যবহৃত ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম এক ধাক্কায় ২৭০ টাকা বেড়েছে৷ দুর্গাপুজো কাটিয়ে কালীপুজো, ভাইফোঁটায় ছোট-বড় খাবারের দোকানের ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন লাভের মুখ দেখবেন৷ কিন্তু তেমনটা সম্ভব হচ্ছে না৷ সব রকমের ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা৷

দমদম গোরাবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষের জিনিসপত্র কেনাকাটার আগ্রহ থাকলেও তাদের হাতে পয়সা এতই কম যে কিনতে পারছে না৷ অনেকের বাড়িতে কারো চাকরি নেই৷ দমদম শহরাঞ্চলেই অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে প্রায়৷ গ্রামাঞ্চলে আরো খারাপ অবস্থা৷ এ রকম কিছু দিন চললে মানুষ আরো সমস্যায় পড়বে৷’’

বিশ্বজিৎ দাস

যদিও রাস্তাঘাটে চোখে পড়ার মতো ভিড় আছে৷ দোকানে দোকানে মানুষ ঘুরছে৷ মাংস বা মাছের বাজারে ক্রেতারা দাম জিজ্ঞাসা করে ফিরে যাচ্ছেন৷ বেদিয়াপাড়া ঝুপড়িতে থাকেন শুক্লা সরদার৷ ২০ বছর ধরে আবাসনে সাফাইকর্মীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি৷ মাছ কিনতে কিনতে বললেন, ‘‘করোনার জ্বালায় সংসারের হাল খুবই খারাপ৷ রোজগারপাতি নেই, তার উপর জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে আমাদের বেঁচে থাকা মুশকিল৷ আগে এক-দেড় কিলো মাছ লাগত৷ এখন ৫০০ গ্রাম মাছ কিনি৷ বেশিরভাগ দিন মাছ খাই না৷’’

গোরাবাজারের মাছ বাজারে ২০ বছরের ব্যবসায়ী তারক দাস৷ তিনি বলেন, ‘‘এত বছর ব্যবসা করছি, এমন অবস্থা কখনো দেখিনি৷ লোকজন খুব কম আসছে৷ পরিবহন খরচ বাড়ায় অন্য জিনিসের মত মাছের দাম বেড়েছে৷ আমাদের ব্যবসা ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে৷’’ সবজি বাজার ঘুরে আগুন দাম চোখে পড়ল৷ সবজি ব্যবসায়ী অনন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এত দাম দিয়ে সবজি মানুষ কিনতে চাইছে না৷ আমরা কী করব? কোলে মার্কেট থেকেই চড়া দামে কিনে আনছি৷ তাই আমাদের কিছু করার নেই৷’’

দোকানে ভিড় কমেছে কোভিডের কারণে, একইসঙ্গে বেড়েছে অনলাইন শপিংয়ের হিড়িক৷ যারা চাকরি হারিয়েছেন, তারা কিছু রোজগারের আশায় স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েছেন৷ এতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে৷ মহিলারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাড়ি-সহ অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবসা করতেন৷ তাতেও ভাটা পড়েছে৷ সবমিলিয়ে

নীলকন্ঠ ধর

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট বিক্রেতারা৷ দীপাবলি বা ধনতেরাসের উৎসবে এ বার তেমন আয়োজন নেই৷ বেশি জিনিসপত্র তুলতে পারেননি বলে জানালেন ব্যবসায়ী নীলকন্ঠ ধর৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় থেকে নানা শৌখিন দ্রব্যের দোকান তাঁর৷ বলেন, ‘‘আগে ধনতেরাসে আমরা ৬০-৭০ হাজার টাকার ব্যবসা করেছি৷ এখন সেটা ২০ হাজার টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ অতিবৃষ্টির সঙ্গে রয়েছে করোনা৷ ব্যবসায়ীদের মত মহাজনরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ এক-দেড় বছর ধরে বিয়েবাড়িতে ৫০ জনের বেশি যাওয়ার অনুমতি নেই৷ কত গিফট  আইটেম বিক্রি হবে তাতে?’’

কোভিড ও লকডাউনের জেরে ব্যবসায় সার্বিক মন্দা৷ এর ফলে অন্য এক সমস্যাও তৈরি হয়েছে৷ ব্যবসায়ী সমিতির অধীন সাড়ে ৪০০ বিক্রেতার কী সমস্যা? বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘পুঁজির সঙ্কট চোখে পড়ার মতো৷ আগে ১ লাখ টাকার পুঁজি পাওয়া গেলে এখন ২০-৩০ হাজারে নেমে গিয়েছে৷ সেই পুঁজি আনতে গেলে হয় ব্যাংক ঋণ, না হলে সুদখোর মহাজনের থেকে নিতে হয়৷ জিনিসপত্র নগদ কেনার ক্ষেত্রে বছর দুয়েক আগে যতটা স্বাবলম্বী ছিলাম, এখন আর নেই৷ যাঁদের পুঁজি আছে, তাঁরাই চালাতে পারছেন৷’’