1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একাত্তরের বিজয়ী ফজলুল এখন দিনমজুর!

১৮ মে ২০১১

ফজলুল হক ভূঁইয়া একজন দিনমজুর, কখনো রিকশা চালান তিনি৷ আবার জীবিকার তাগিদে ঠেলাগাড়ি ঠেলতেও দেখা গেছে তাকে৷ বর্তমান সমাজে তাঁর তেমন কোন পরিচয় নেই৷ তাঁর নেই একটি মুঠোফোন, এমনকি একটি হাতঘড়িও৷

https://p.dw.com/p/11Ie2
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে তাই অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন হাতেছবি: Public domain

অথচ ১৯৭১ সালে এই ফজলুল হক ভূঁইয়া ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ৷ তরতাজা যুবক তখন, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে তাই অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন হাতে৷ উদ্দেশ্য দেশ স্বাধীন করা৷ মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ফজলুল ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে৷ একাত্তরের ২৭ মার্চ আখাউড়া ইপিআর ক্যাম্পে বীরত্বের নির্দশন রাখেন তিনি৷ এরপর প্রয়োজন পড়ে সেনা প্রশিক্ষণের, ফজলুল পাড়ি দেন ভারতে৷

আত্মঘাতী দল

ফজলুল জানান, প্রশিক্ষণের সময়টা মোটেই সুখকর ছিল না তাঁর জন্য৷ তিন মাস কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে৷ তখন মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিশেষ ‘আত্মঘাতী দল' এর সদস্যও হন তিনি৷ এই দলের কাজ ছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে আত্মঘাতী হামলা চালাতে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ যাকে বলে বুকে মাইন নিয়ে শত্রুর ট্যাঙ্কের নিচে ঢুকে পড়া কিংবা সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যুদ্ধ অব্যাহত রাখা৷

নৌকমান্ডো ফজলু

একাত্তরে ভারতের পলাশীতে ফজলুল হক নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷ এরপর দেশে ফিরে জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় যুদ্ধটিতে অংশ নেন তিনি৷ নারায়ণগঞ্জের নদী বন্দরে শত্রুসেনার জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে ফজলুলদের উপর৷ ব্যস, বুকের সঙ্গে লীমপেট মাইন বেঁধে পানিতে ঝাঁপ দেন তিনি৷ সেই অভিযানে পাকিস্তানি পাঁচটি জাহাজ উড়িয়ে দিয়েছিলেন তারা৷ তখন একই ধরনের অভিযান চালানো হয় মংলা এবং চট্টগ্রাম নৌ বন্দরেও৷ বিশ্বব্যাপী সাড়া পড়ে গিয়েছিল ফজলুলদের সফলতায়৷

আরো অভিযান

নৌ বাহিনীর সদস্য হিসেবে ফজলুল এরকম আরো সাহসী অভিযানে অংশ নিয়েছেন৷ জামালপুরে ফেরিঘাটে সফল অভিযানের নায়ক ছিলেন তিনি৷ একইভাবে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে এক যৌথ অভিযানে হোসেনপুরে একটি সেতুও ধ্বংস করেন ফজলুল হক৷

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

বর্তমানে ফজলুল হক ভূঁইয়ার বয়স ৬৫ বছরের বেশি৷ লেখাপড়া খুব বেশি করেননি তিনি৷ দিন তারিখও ঠিক মনে রাখতে পারেননা৷ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? ফজলুল জানালেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো হয়নি৷ এটা বড় পীড়া দেয় তাঁকে৷ স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের দম্ভিত পদচারণায় বিব্রত হন তিনি৷

হাড়ভাঙা খাটুনি

ফজলুল হক এর নৌকমান্ডো নম্বর ০১০১৷ একাত্তর সালে দশ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তিনি৷ বর্তমানে বাস করেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কোড্ডা গ্রামে৷ যুদ্ধের পর তেমন কোন ভাল কাজ পাননি ফজলুল৷ তাঁর জীবন কেটেছে ঠেলাগাড়ি ঠেলে, রিকশা চালিয়ে৷ সহায়সম্পত্তি কিছুই নেই তাঁর, সরকারি জমিতে ঘর বেঁধে বসবাস করছেন তিনি৷ খানিকটা হতাশার সুরেই ফজলুল বললেন, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা তিনি পাননা৷ অর্থের অভাবে সন্তানদেরকে লেখাপড়াও করাতে পারেননি৷ জীবনসায়াহ্নে এসেও তাই এখনো হাড়ভাঙা খাটুনি তাঁর নিত্যসঙ্গী৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক