1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক আলিঙ্গনে শত বিতর্ক

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২৫ আগস্ট ২০১৮

ইমরান খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং পাঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিং সিধু৷ পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থামার কোনো লক্ষণই নেই৷

https://p.dw.com/p/33i6U
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়ে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বর্তমানে পাঞ্জাবের কংগ্রেস মন্ত্রী নভজ্যোত সিং সিধু পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বাজওয়াকে জড়িয়ে ধরায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভারতে৷ বিহারের মজফফরপুরের এক আইনজীবী তো সিধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে আদালতে মামলাও করেছেন৷ পাঞ্জাবের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিং বলেছেন, পাক সেনাপ্রধানকে আলিঙ্গনের আগে সিধুর মনে রাখা উচিত ছিল, প্রতিদিন কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা নিহত হচ্ছেন৷ বিজেপি, আকালি দল, শিবসেনা, এমনকি কংগ্রেসও আলিঙ্গন ইস্যুতে সিধুকে একহাত নিয়েছে৷ অন্যদিকে আম আদমি পার্টি মনে করে, আলিঙ্গন করে সিধু কোনো ভুল কাজ করেননি৷

‘সৌজন্যের খাতিরেই হোক কিংবা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াবশতই হোক, এটা হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়’

সিধু নিজে কী বলছেন? তিনি বলছেন, ‘‘এটাকে অন্যভাবে দেখার কোনো অর্থ হয় না৷ ইমরান খান আমার ক্রিকেট জীবনের বন্ধু৷ তাঁর আমন্ত্রণেই আমি সেখানে যাই৷ পাকিস্তানের মানুষ আমাকে যেভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তাতে আমি আপ্লুত৷ আমার আসন ছিল প্রথম সারিতে৷ পাশেই পাক সেনা প্রধানের আসন৷ আমাকে দেখে সামনে এসে উনি দু-একটা কথা বলার পর একটা সুসংবাদ দেন৷ গুরু নানকের ৫৫০-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৌরবযাত্রায় শিখ তীর্থযাত্রীরা যাতে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে ভারতের ডেরা বাবা নানক থেকে পাকিস্তানের কর্তারপুর সাহিব পর্যন্ত রাস্তা খুলে দেবার কথা চিন্তা করছে পাকিস্তান৷  কর্তারপুর সাহিবে গুরু নানক দেব দেহ রেখেছিলেন৷ তাই ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের কাছে সেটা অতি পবিত্র স্থান৷ দুদেশের সীমান্ত সংলগ্ন দুটি জায়গার দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার৷ এটা শোনার পর শিখ হিসেব আমি পাক সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে ধরি৷ এটা আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়৷'' সিধু আরো বলেন, ‘‘এমন ঘটনা আগেও হয়েছে৷ ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী আচমকা লাহোরে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বাসভবনে চলে যান এবং তাঁর সঙ্গে আলিঙ্গনও করেন৷ এ নিয়ে তখন তো কোনো সমালোচনা হয়নি!'' ভারতে বিতর্ক শুরু হলেও ইমরান খান অবশ্য সিধুকে দু'দেশের শান্তির দূত বলে অভিহিত করেছেন৷

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক অনিন্দ্য জ্যোতি মজুমদারও ডয়চে ভেলেকে একই কথা বলেন৷ তাঁর মতে, ‘‘যাকে ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোম্যাসি বলে এটা তা নয়৷ এর পেছনে মোদী সরকারের বড় রকমের কোনো কৌশল আছে বলেও মনে হয় না৷ যেটা মনে হয়, ইমরানের সঙ্গে সিধুর যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে, খেলার দিক থেকে যে একটা সম্পর্ক রয়েছে, তার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ ইসলামাবাদে গিয়ে সৌজন্যের খাতিরেই হোক কিংবা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াবশতই হোক, এটা হয়েছে৷ এর বেশি কিছু নয়৷ তাহলে ইমরান খানকে না করে পাক সেনা প্রধানকে আলিঙ্গন করলেন কেন ? সেটা পরিস্থিতিবশত হয়েছে৷ সেনা প্রধানকে আলিঙ্গন করাটা উচিত কি অনুচিত সে প্রশ্ন আলাদা৷ সিধুকে যদি ট্যাক-টু ডিপ্লোম্যাসির দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হতো তাহলে এই নিয়ে দেশে এত হৈচৈ হতো না৷ ইমরান নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁকে সদর্থক বার্তা দেওয়াটাই দস্তুর৷ ক্রিকেট ব্যাট উপহার দেওয়াটা হয়ত তার নিদর্শন৷ তাই বলে কাশ্মীরে ঈদের দিনে জঙ্গি হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে দুটোকে মেলানো যায় না৷''

ভারতের কূটনৈতিক মহল অবশ্য ব্যাপারটা অন্যভাবে দেখছেন৷ পরোক্ষভাবে এটা পাকিস্তানের দিকে মোদী সরকারের শান্তির বার্তা বলে মনে করছেন তাঁরা৷ কারণ, সিধু পাকিস্তানে গিয়েছিলেন মোদী সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের অনুমতি নিয়েই৷ যদিও আপাতদৃষ্টিতে এটা ছিল সিধুর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত৷ তা সত্বেও মনে করা হচ্ছে, এটা ছিল মোদী সরকারের কূটনৈতিক কৌশল৷ আগামী বছর ভারতে নির্বাচনী বাতাবরণে একটা অনুকূল ছাপ পড়বে৷ প্রতিবেশী পাকিস্তানের নতুন সরকারের সঙ্গে বিরোধ মেটাবার একটা রাজনৈতিক সদিচ্ছা ভারতের আছে, বিশ্বদরবারে সেটা পৌঁছোবে৷ পাশাপাশি ইসলামাবাদে সিধুকে পাঠিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জল মাপার কাজটাও করতে চেয়েছে মোদী সরকার৷ ইমরানের জয়ের পর থেকেই একের পর এক বার্তা পাঠিয়ে টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ শান্তি ও উন্নয়ন নিয়ে উভয় নেতার মধ্যে কথা বিনিময় হয়৷ শুধু তাই নয়, ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনার ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের সই করা একটি ক্রিকেট ব্যাট উপহার দেন৷ ইমরান খানের নব নিযুক্ত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দু দেশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ শুরু করা এবং তার মাধ্যমে দু দেশের মধ্যে নতুন সেতুবন্ধনের কথা বলেছেন৷ এইসব ছোট ছোট কূটনৈতিক সৌজন্যের মধ্য দিয়ে এক ইতিবাচক আবহ গড়ে তুলতে চেয়েছেন মোদী৷  

পাকিস্তানের তরফ থেকেও অনুরূপ সদর্থক সাড়া পেয়েছেন৷ নির্বাচনী জয়ের পর ইমরান খানের মন্তব্য– ভারত যদি এক পা এগোয়, তাহলে পাকিস্তান দু'পা এগোবে৷ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পাকিস্তানের তত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে এসেছিল এক প্রতিনিধিদল৷ এই ধরনের পারস্পরিক আদানপ্রদান এবং কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়াকে কূটনৈতিক পরিভাষায় বলা হয়, ‘ট্র্যাক-টু ডিপ্লোম্যাসি'৷ নভেম্বরে ইসলামাবাদে প্রস্তাবিত সার্ক সম্মেলনে মোদীকে আমন্ত্রণ জানাতে পাক সরকার কোনো বিশেষ দূতকে দিল্লি পাঠাতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চড়াই- উতরাই চিরদিনই ছিল এবং থাকবে৷

এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷