1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণের পর পিটিয়ে মারার অভিযোগ

১২ জুন ২০১৭

হবিগঞ্জে প্রকাশ্যে সুখিয়া রবিদাস নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ হত্যার আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে৷ শনিবার সকালে শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং বাজারে এ ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/2eWEb
Symbolbild Protest gegen Vergewaltigung
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুতাং বাজারের সেতুর পশ্চিম পাশে সুখিয়া রবিদাস তাঁর ১২ বছর বয়সি একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে বাস করে আসছিলেন৷ সুখিয়াদের বাড়ির জায়গা দখলের জন্য এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাঁদের নির্যাতন করে আসছিল৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে শাইলু মিয়া নামের এক ব্যক্তি সুখিয়ার বাড়ি গেলে তিনি ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷

এ সময় শাইলু ভারী একটি কাঠ দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই সুখিয়া মারা যান৷ এলাকার অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছেন৷ তবে কেউ এগিয়ে আসেননি৷ সুখিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, হত্যার আগে সুখিয়াকে ধর্ষণও করা হয়েছে৷

এদিকে এলাকাবাসীকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যম জানায়, আট বছর আগে সুখিয়ার স্বামী মনি লাল দাসকেও হত্যা করা হয়৷ এরপর সুখিয়ার কাকা অর্জুন রবিদাসকে হত্যা করা হয় ২০১৩ সালে৷ শাইলু মিয়া ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি৷ মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন৷ ওই হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন সুখিয়া রবিদাস৷ তাঁকেও হত্যা করা হলো৷

১০ জুন সুখিয়া রবিদাসকে হত্যার ঘটনাটি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই হয়েছেন প্রতিবাদমুখর৷

হেসেইন আহমেদ তোফায়েল লিখেছেন, ‘‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ নিয়ে আর লিখতে ইচ্ছা করে না৷ কিন্তু ঘটনাটা আমার বাড়ি থেকে ৪/৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে হওয়ায় আর চুপ থাকতে পারলাম না৷ দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোর মধ্যে ২/১ টা ছাড়া ঘটনা টি সেইভাবে কোনো মিডিয়াতে আসেনি৷ এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম অপরাধী স্থানীয় এলাকায় যথেষ্ট ক্ষমতাধর এবং রাজনৈতিকভাবেও যথেষ্ট ক্ষমতাবান হওয়ায় বিষয়টা নিয়ে এলাকাবাসীরা কথা বলতে ভয় পাচ্ছে৷ সবার উচিত প্রতিবাদ করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা৷’’

আনহা এফ খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে অশালীন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কারণে ওই নারীকে হত্যা করেন শাইলু৷ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতাভোগী অংশের জমিখেকোপনা কী নিরিবিলি গ্রোগ্রাসে এগিয়ে চলে৷’’

রিপন কুমার দাস সুখিয়া হত্যার বিচার দাবিতে ১৩ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানার সুতাং বাজারের বিধবা নারী সুখিয়া রবিদাসকে ধর্ষণ ও পিটিয়ে হত্যাকারী নরপিশাচ শাইলু মিয়ার ফাঁসি এবং তার স্বামী মনিলাল রবিদাস ও কাকা অর্জুন রবিদাস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশের সবাই অংশ নিন৷’’

মোহন রবিদাস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘সুখিয়া বাড়ি থেকে দৌড়ে পালানোর পর সড়কে প্রকাশ্যে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে৷ অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছেন, তবে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি৷’’

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নীল সাধু৷ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘স্থানীয় থানার ওসি হত্যাকরীকে বাঁচানোর জন্য উল্টে সুখিয়া রবিদাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, হত্যাকারীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল৷ অর্থাৎ কিনা স্বামী ও চাচার হত্যাকারীর সাথে বাদির অনৈতিক সম্পর্ক! ৭১ টিভি একটি প্রতিবেদন করেছে৷ তারা বলছে, এই হতদরিদ্র, অসহায় পরিবারটির ভিটে জমি দখল করার জন্য তাদের বার বার এখান থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে দিয়েছে৷ কিন্তু তারপরও সুখিয়া রবিদাসের পরিবার ভিটে ছাড়েনি৷ বার বার হত্যাকারী টাকার জোরে পার পেয়ে যায়৷ সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’’

শামসুল আলম ভীষণ দুঃখে লিখেছেন, ‘‘আমরা যখন ক্রিকেটে জয় উদযাপনে ব্যস্ত, তখন একটা অমানবিক মধ্যযুগীয় বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটে যায় হবিগঞ্জে৷ ধর্ষণের পর প্রক্যাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্বামীরা এক বিধবা নারীকে৷ প্রতিবাদ হবে কি? হবে কি আরেকটা আওয়াজ? ওই পাষণ্ড ঠাণ্ডা মাথার খুনির শাস্তি হবে কি? আওয়াজ না তুললে তো এই দেশে কোনো বিচার হয় না৷ অপরাধী বেরিয়ে যায় অন্ধ আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে৷’’

মুকিদ চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘এই হত্যার দায় কী সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে? তীব্র নিন্দা জানাই৷’’

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...