1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক লক্ষ লোকের মৃত্যুর আশঙ্কা অ্যামেরিকায়

৩০ মার্চ ২০২০

আরও ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে করোনা। দুই সপ্তাহে তছনছ হতে পারে অ্যামেরিকা। ইটালিতে মৃত্যু অব্যাহত।

https://p.dw.com/p/3aB5x
ছবি: Getty Images/T. Katopodis

মাত্র কয়েক দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, ইস্টারের আগে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারবে অ্যামেরিকা। আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। শেষ পর্যন্ত নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসতে হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে। রোববার তিনি জানালেন, ''আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা সংক্রান্ত সামাজিক নিয়মগুলি জারি থাকবে।'' কারণ, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অ্যামেরিকায় ভয়াবহ চেহারা নিতে চলেছে করোনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দুই সপ্তাহে এক থেকে দুই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে অ্যামেরিকায়। আক্রান্ত হবেন অসংখ্য মানুষ। পরিস্থিতি যে সে দিকে যেতে পারে, নিউ ইয়র্কের চেহারা দেখলেই তা স্পষ্ট হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃত্যু হয়েছে ২৩৭ জনের। মোট মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। আর গোটা অ্যামেরিকাতে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৩০০ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ৩০ হাজার। পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যানও ম্লান হয়ে যেতে পারে আগামী দুই সপ্তাহে। ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে অ্যামেরিকা।

পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন জনগণ। বার বার প্রশ্ন উঠছে, কেন সরকার আরও আগে করোনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করল না। কেন যথেষ্ট টেস্টের ব্যবস্থা হল না। হোয়াইট হাউসের অবশ্য বক্তব্য, ''কিছু দিন আগেও টেস্টের যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক দিনে সেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। যথেষ্ট টেস্টের ব্যবস্থা এখন গোটা দেশ জুড়েই আছে।'' ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, করোনার মোকাবিলায় তারা তৈরি।

সত্যি কি তৈরি? তথ্য বলছে, এখনও ষথেষ্ট ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নেই পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিশালী দেশের। শুধু নিউ ইয়র্কের সরকারি হাসপাতালেই এই মুহূর্তে আরও ১০০টি ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। লুসিয়ানোতে ১২ হাজার ভেন্টিলেটরের অর্ডার করা হয়েছিল। মিলেছে মাত্র ১৯২টি। এই পরিস্থিতিতে আগামী দুই সপ্তাহে যদি আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়, তাহলে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বার বার জানাচ্ছে, উদ্বেগের কারণ নেই। পরিস্থিতি সামলানোর মতো ব্যবস্থা তৈরি রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত হাসপাতালে এই মুহূর্তে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হচ্ছে না, তা দ্রুত করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্য দিকে করোনা পরিস্থিতি এতটুকু বদলায়নি ইটালিতে। রোববার সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৭৫৬ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৭৯। এখনও পর্যন্ত ইটালিতেই করোনায় সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অ্যামেরিকার মৃত্যু হার ইটালিকেও টেক্কা দিতে পারে। স্পেনেও অবস্থার বদল হয়নি। ইউরোপে ইটালির পরে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্পেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে এক দিনে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন ৮৩৮ জন। এখনও পর্যন্ত সেখানে মোট ছয় হাজার ৫২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। ইটালি কিংবা স্পেনের মতো না হলেও ফ্রান্সের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। রোববার সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৯২ জনের। মোট মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই হাজার পেরিয়ে গিয়েছে।

এ দিকে করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি এক ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছে। রোববার রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয়েছে জার্মানির হেসে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর মৃতদেহ। পুলিশের সন্দেহ তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সূত্র জানাচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখেই অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তারই জেরে আত্মহত্যা করেছেন।

ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার বাইরে এশিয়াতেও করোনা পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। ভারত, পাকিস্তানে দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। ভারতে বন্ধ ট্রেনের কামরায় হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। তবে এখনও ভিন রাজ্য থেকে নিজেদের গ্রামে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাঁদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। শুধু ভারত নয়, থাইল্যান্ডেও পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে আছেন। তাঁদের অবস্থাও একই রকম।

এ দিকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থাও ভয়াবহ। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, সোমবার পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার জনের।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)