1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখন বৈরী চারিদিকের আবহাওয়া

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০

বিশ্বের কোথাও ঝড়, আবার কোথাও প্রচন্ড বৃষ্টি৷ বন্যার প্রতিধ্বনি হচ্ছে কোথাও, অথচ ঠিক তার পাশের দেশটিতে হয়তো হচ্ছে ভূমিধ্বসের ঘটনা৷ অন্যদিকে, মস্কোতে যখন বইছে লু হাওয়া, তখন ওয়াশিংটনে শীত৷

https://p.dw.com/p/PEMj
রাশিয়ার বনে আগুনছবি: AP

এমন কথা ভেবেছেন কখনও ? ভাবুন আর না ভাবুন, এটাই হচ্ছে৷ আমাদের সুন্দর এই ধরিত্রী বদলে যাচ্ছে৷ কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? কেন এই সবুজ পৃথিবী মাতা হঠাৎ ক্ষেপে গেছে? উত্তরটা জানা খুব প্রয়োজন৷

মস্কোর দিকে দৃষ্টি রাখুন

জেনেভাতে রয়েছে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা৷ এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির রায়াবিনিন৷ বাড়ি রাশিয়ায়৷ কথা হচ্ছিলো তাঁর সঙ্গে৷ তিনি জানালেন, ‘‘মস্কোর দিকে তাকান৷ সেখানে কি দেখতে পাচ্ছেন৷ এবার সেখানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২২ ডিগ্রি বেশি ছিল তাপমাত্রা৷ লু হাওয়া বয়ে গেছে সবখানে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগ এখন কাজ করছে, কেন এই পরিবর্তন? কেন ঘটছে এমন ঘটনা? কেবল এই সময়ে এ কথা বলতে পারি যে, এই পরিবর্তনের বিষয়ে আমরা যা পাচ্ছি, তার অনেকটাই অনুমান নির্ভর, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক৷''

জেট স্টিম বায়ুর গতিপথ থমকে গিয়েছিল

তবে ব্রিটিশ আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞানীরা কিন্তু অনেকখানি এগিয়ে গেছেন৷ তাঁরা যে গবেষণা চালিয়েছেন, তাতে তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন, পূর্ব-ইউরোপ এবং এশিয়ার বায়ু সঞ্চালন বিশেষ করে জেট স্টিম বায়ুর অবাধ প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়েছে৷ এখন প্রশ্ন আসতে পারে জেট স্টিম বায়ু কি? এটি বায়ু প্রবাহের গতি৷ বছরের মৌসুমি বায়ু পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আসে - এই জেট স্টিমের কল্যাণে৷ এই প্রবাহের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে৷ সাধারণত এই প্রবাহ পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়৷ কিন্তু এবারে সেই বায়ুপ্রবাহের গতিপথ অজ্ঞাত এক কারণে রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু বায়ুর ধর্ম হচ্ছে এক জায়গায় বসে না থাকা৷ তাই এবার সেই রুদ্ধ পথকে পাশে ফেলে দিয়ে জেট স্টিম ছুটেছিল দক্ষিণে৷

ফলে এই বাতাস হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাসকে সরিয়ে দিচ্ছিলো৷ গরম মৌসুমি বায়ুকে চাপ দেয়ায় তার দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সরে যাচ্ছিলো, আর এর ফলে বিভিন্ন স্থানে হলকা মেঘ, বিদ্যুৎ মেঘ আবার কোথাও বা বজ্রসহ বৃষ্টি৷ এই অবস্থা যে কেবল দক্ষিণ এশিয়ার জন্য প্রযোজ্য, তাই নয়৷ অবস্থাটা এতটাই খারাপ যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন এলাকাতেও বৃষ্টিবাদলের নিয়ম নীতিও বদলে গেছে৷

এল নিনো আর লা নিনা, ছেলে আর মেয়ে

আর এ জন্য নাকি দায়ী এল নিনো আর লা নিনা৷ স্প্যানিশ ভাষায় ছেলে আর মেয়ে৷ অথচ ভয়ানক দুটো বৈরী পরিবেশকে বোঝাতে এই শব্দ দুটো ব্যবহৃত হয়৷ এল নিনোর সঙ্গে অনাবৃষ্টি, খরা এবং লা নিনার সঙ্গে ঝরা অর্থাৎ ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা-সাইক্লোনের সম্পর্কযুক্ত৷ যা-ই হোক এল নিনো-লা নিনার বিষয়ে আমার এই কথাগুলো বলার অর্থ হলো, এর উৎপত্তিস্থল প্রশান্ত মহাসাগরের নির্দিষ্ট জায়গা হলেও এর বিশ্বব্যাপী প্রভাব সবাই স্বীকার করে নিয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অধিকাংশ তীব্র খরার বছরগুলো ছিল এল নিনোর বছর৷ আর একইভাবে অতিবৃষ্টি এবং অস্বাভাবিক বন্যার বছরগুলো ছিল লা নিনার৷

তীব্র হবে মৌসুমি বায়ু!

যেমনটা বলছেন, জার্মানির প্রতিষ্ঠান পোস্টডাম ক্লাইমেট ইমপেক্ট রিসার্চ-এর গবেষক আন্দ্রেস লিভারমান৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আমরা ভাবছি প্রথমেই মৌসুমি জলবায়ু তীব্র হতে শুরু করবে৷ আমাদের মডেলগুলো তাই বলছে৷ যখন থেকে আপনি দেখতে পাবেন তীব্র বৃষ্টিপাত আবার কখনো বৃষ্টিহীন দীর্ঘ সময়, কখনোবা ভূমিধ্বস...তখন বুঝতে পারবেন সমস্যা শুরু হয়ে গেছে৷''

লিভারমানের কথার সত্যতা পাওয়া গেল সাম্প্রতিক পাকিস্তানের বন্যা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ চীনের ভূমিধ্বসের ঘটনাগুলো দেখে৷ তবে এ নিয়ে এখনো স্পষ্ট করে কোন বক্তব্য রাখছেন না বিজ্ঞানীরা৷ তারা খুব শিগগিরই একটি বৈঠকে বসছেন এবং জানাবেন বিস্তারিত৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ