1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিঠাই খাই, মায়ের আদর খাই না

১৫ জানুয়ারি ২০১৯

পড়াশোনা এবং কর্মক্ষেত্র বাড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় মায়ের হাতের পিঠা শেষ কবে খেয়েছি, মনেও পড়ে না৷ গ্লোবালাইজেশনের যুগে পিঠাও এখন উঠে এসেছে দোকানে৷ কিন্তু পিঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো অনেককিছু কি হারাতে বসেছে?

https://p.dw.com/p/3BRrO
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

ছোটবেলায় অপেক্ষা করে থাকতাম শীতকালের জন্য৷ শীতে বেশি বেশি কাপড় গায়ে জড়ানো যায়, এটা কেন জানি আমার খুব ভালো লাগতো৷ কিন্তু তার চেয়েও বেশি মজার ছিল শীতের পিঠা৷

এখনও মনে আছে, পৌষ সংক্রান্তির অনেক আগে থেকেই শুরু হতো মায়ের পিঠা বানানোর প্রস্তুতি৷ যেসব পিঠায় নারিকেলের প্রয়োজন, সেগুলো তৈরির জন্য নারিকেল কুচি করা, সেই কুচির অর্ধেক চিনি, বাকি অর্ধেক গুড় দিয়ে ভাজা হতো৷

তবে আমার অবশ্য নারিকেলের পিঠা বানানো পর্যন্ত তর সইতে ভালো লাগতো না৷ মা-কে লুকিয়ে নারকেল কুচির এক তৃতীয়াংশ শেষ করে ফেলতাম পিঠা বানানোর আগেই৷ মা নিশ্চয়ই সেটা টের পেতেন, তবে আমি কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে ঘুরে ঘুরে পিঠা হতে কত দেরি সেই তদারকি করতাম

আমার সবচেয়ে পছন্দের পিঠা ছিল পুলি৷ ফলে পুলিটাই বেশি তৈরি হতো৷ সাথে নারিকেলের পাটিসাপটা ও অন্যান্য পিঠাও আমার বেশ পছন্দই ছিল৷ তেলের পিঠা বা মালপোয়া একেবারেই পছন্দ ছিল না বলে সেটা শুধু নিয়মরক্ষা এবং আইটেম বাড়ানোর তাগিদেই বানানো হতো৷

কিন্তু আমার ছোট বোনের জন্মের পর ধীরে ধীরে পালটাতে লাগলো পরিস্থিতি৷ কেন জানি মালপোয়াই সবচেয়ে পছন্দের পিঠা বলে প্রচার শুরু  করলো সে৷ ফলে পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে সব দৃষ্টি ঘুরে গেল তার দিকেই৷ আমাদের বাড়িতে পুলি সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো, শুরু হলো মালপোয়ার রাজত্ব৷

এ নিয়ে মৃদুমন্দ ঝগড়া হলেও তাতে আমাদের মজাটা কিন্তু কমেনি৷

এরপর বড় হতে হতে একসময় উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসা৷ পড়াশোনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ হঠাৎ এক শীতে আবিষ্কার করলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী চত্ত্বরে এক খালা লাকড়ির চুলায় বানিয়ে বিক্রি করছেন ভাপা আর চিতই পিঠা৷ এই পিঠা এত জনপ্রিয় হলো, কয়েক বছরের মাথায় এখন রীতিমতো দোকান খুলে শত রকমের পিঠা বিক্রি হয়৷ পিঠা খেতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে অর্ডার দিতে হয়৷ বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দল বেঁধে পিকনিকের আমেজে ঢাকা থেকেও লোকজন সে পিঠা খেতে যান৷

ঢাকা শহরে এখন কিছু দোকান রয়েছে, যেখানে সারা বছরই নানা রকমের পিঠা বিক্রি হয়৷ ফলে বাঙালির পিঠা না খেতে পারার সে দুঃখ আর এখন নেই৷

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

কিন্তু সবকিছু কর্পোরেট হয়ে গেলে পণ্যের জোগান ও প্রাপ্তি বাড়লেও আবেগ, অনুভূতিগুলো ক্রমশ সরতে থাকে দূরে৷ সংক্রান্তি উপলক্ষে বাড়ি যাওয়া, সবার সাথে শীতের আমেজে আনন্দ ভাগ করে নেয়া, সেটা তো আর দোকানে সরবরাহ সম্ভব না৷

শীতের পিঠা এখনো আমার কাছে, গুড়-নারকেল কুচি চুরি করে খাওয়া, বোনের সঙ্গে মালপোয়া না পুলি, তা নিয়ে ঝগড়া করা, খেতে না চাইলেও জোর করে ‘আরেকটা খা' বলে পাতে তুলে দেয়া মায়ের আদর৷

কিন্তু পুঁজিবাদের যুগে সবই বাজারে পাওয়া যায়৷ ফলে এখন আর কাউকে কষ্ট করে কিছুই ঘরে তৈরি করতে হয় না৷ প্রায় সব পরিবারেই ঘরে তৈরি পিঠার চেয়ে কিনে আনা পিঠার প্রচলন শুরু হয়েছে৷ দিন যেতে থাকলে এ হার আরো বাড়ারই শঙ্কা করছি৷ একসময় হয়তো কোনো বাসায় যে রীতিমতো উৎসব করে পিঠার প্রস্তুতি চলতো, তা-ও জানবে না বাচ্চাকাচ্চারা৷

এখনো পিঠা খাই, পেট ভরেই খাই৷ কিন্তু এখন শুধু পিঠাই খাই, মায়ের আদর খাই না৷

অনুপম দেব কানুনজ্ঞের এই ব্লগপোস্টটি আপনার কেমন লাগলো, জানান মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য