1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এশিয় মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা

১৩ মে ২০১০

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু বাংলাদেশে সম্প্রতি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং লিফলেটে জানানো হচ্ছে গর্ভবতী মায়েরা যদি ধূমপান করেন তাহলে প্রসব নাকি অনেক সহজ হবে৷ কিন্তু আসলেই কি তাই ?

https://p.dw.com/p/NMib
ধূমপানের তীব্র প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশেছবি: AP

‘ধূমপানে বিষপান অতএব সাবধান' - এ কথাটি ছোট বেলা থেকে আমরা শুনে আসছি৷ অথচ ইদানিং ধূমপানের তীব্র প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে৷ অল্পবয়স্ক মেয়ে এবং বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের বিজ্ঞাপন এবং লিফলেটের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে - সহজ প্রসবের জন্য ধূমপান করুন৷

বাংলাদেশের বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ড. সাইফুদ্দিন বেন নূর এ ধরণের অনেক বিজ্ঞাপন দেখেছেন৷ তিনি জানান, এসব বিজ্ঞাপন গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিচ্ছে৷ তিনি আরো বলেন, একটি বিজ্ঞাপনে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, ‘‘একজন গর্ভবতী মহিলা যদি ধূমপান করেন তাহলে তাঁর গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যাবে৷ ফলে প্রসব হবে অতি সহজ, যন্ত্রণাহীন৷''

ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ জানালেন, গর্ভবতী মা যদি ধূমপান করেন তাহলে গর্ভস্থ শিশুর কী ধরণের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে৷ ড. আহমেদ বললেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল৷ ডেলিভারি তো তাড়াতাড়ি হবেই না বরং সিজারিয়ান করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে৷ বাচ্চার ক্ষতির আশংকা আছে৷ এমন কি বাচ্চার ফুসফুসের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে৷

বাংলাদেশে ইদানিং প্রকৃতপক্ষেই এধরণের বিজ্ঞাপন প্রচারপত্রে ছাপানো হচ্ছে৷ এর মূল কারণ হল, বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকে সিগারেটের যে কোন বিজ্ঞাপন প্রচার সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ এই কারণে কোন প্রচার মাধ্যম বা পত্রিকার পাতায় ‘মার্লবোরো ম্যান'কে আর দেখা যাচ্ছে না৷ তাদের দেখা যাচ্ছে দেয়ালে পোস্টার আকারে এবং বিভিন্ন লিফলেটে৷

Frau mit Eis und Zigarette in Italien
মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাছবি: AP

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে৷ বর্তমানে তার হার ২৮ শতাংশ৷ চার কোটিরও বেশি মানুষ নিয়মিত ধূমপান করে৷ ২০০৪ সাল থেকে তা বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ৷ ধূমপানে মহিলারাও এগিয়ে আসছেন৷ শহুরে মহিলাদের একটি অংশের হাতে সিগারেট শোভা পাচ্ছে – দশ বছর আগেও যা দেখা যেত না৷ এ প্রসঙ্গে ড. মহিউদ্দিন আহমেদ আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, ‘‘এটা দুটি কারণে বাড়ছে৷ একটা হল, কোম্পানিগুলোর এ্যাডের প্রবণতা আছে, ওরা যদিও সরাসরি এ্যাড দেয়না কিন্তু বিভিন্ন টিন-এজ গ্রুপের বাচ্চাদের নিয়ে ওরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ এ কারণে এদের মধ্যে ধূমপানের একটা প্রবণতা বাড়ছে৷ আর দ্বিতীয়তঃ কিছু কিছু আধুনিকতার প্রবণতা আছে৷ অনেকে মনে করে, সে যদি সিগারেট খায় তাহলে তাঁকে আধুনিক মনে হবে৷ সেটাও একটা কারণ হতে পারে৷''

একজন মহিলা ধূমপায়ী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে এধরণের পোস্টার তিনি দেখেছেন৷ বিভিন্ন হলে শোভা পাচ্ছে এসব পোস্টার, লিফলেট৷ তিনি নিজেও ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছেন না৷

এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে৷ মেয়েদের ধূমপান থেকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ মাসের ৩১ তারিখে ‘নো টোব্যাকো ডে' অর্থাৎ দিনটিকে ‘তামাক বিহীন দিবস' বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷

আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পরিচালক মেরি আসুন্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সিগারেট হাতে থাকলে যে কোন মেয়েকে অনেক আধুনিকা মনে হতে পারে; আরো মনে হতে পারে, তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতা অনেক বেশি৷ ফিলিপাইন্স, কাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এবং লাওসে মেয়েদের আকৃষ্ট করার জন্য লিপস্টিকের মতো ছোট এবং সরু সিগারেট বাজারে ছাড়া হয়েছে৷ রঙও দেয়া হয়েছে গোলাপি৷ এই রঙ এবং মাপের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে প্রিয় লিপস্টিকের৷ বলা হচ্ছে, প্রিয় দুটো জিনিসই একসঙ্গে ব্যাগে রাখতে৷''

বাংলাদেশে সরকার জানিয়েছে, প্রতি বছর অন্তত ৫৭ হাজার মানুষ ধূমপান সংক্রান্ত নানা ব্যাধি এবং জটিলতায় মারা যায়৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে সবার আগে দায়ী করা হয় সিগেরেটকে৷ কেন ? এ প্রসঙ্গে ড. আহমেদের মত, ফুসফুসে ক্যান্সারের অন্যতম একটি কারণ হল ধূমপান৷ যদি একশ'টি ফুসফুসে ক্যান্সার রোগীকে দেখা হয় তাহলে দেখা যাবে ৭০ জনেরও বেশি চেন স্মোকার৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: সঞ্জীব বর্মন