1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এ গ্রামে নেই মোবাইল ফোন, নেই গাড়ি

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জার্মানির মধ্যে রয়েছেন, অথচ গাড়ি, মোবাইল ফোন নাগালের বাইরে৷ খাদ্য বলতে খেতের শাকসবজি, ফলমূল৷ মাছমাংস নেই৷ এমনই এক আদর্শ গ্রাম পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে টেকসই জীবনযাত্রা অনুসরণ করছে৷

https://p.dw.com/p/35TgE
Deutsche Dörfer Colonia Tovar in Venezuela
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Ismar

বার্লিন থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা দূরে ‘সিবেন লিন্ডেন' নামের একটি গ্রাম রয়েছে৷ ডয়চে ভেলের সাংবাদিক কিয়ো ড্যোরার সেই গ্রাম ঘুরে দেখেছেন৷ সেখানে মানুষ যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রকৃতির মধ্যে বাঁচার চেষ্টা করে৷ কিন্তু এমন আদর্শের নিশ্চয় একটা সীমা রয়েছে৷

সবার আগে নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রাখতে হবে, কারণ গোটা গ্রামে গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ৷ সেখানে যে আদৌ কিছু গাড়ি রয়েছে, সেটাই বিস্ময়ের কারণ৷ কিয়ো ড্যোরার নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি৷ কিন্তু তা সম্ভব নয়৷ তারা স্থায়ী ফোনই তোলেন না৷ বেশিরভাগ গ্রামবাসীর কাছে মোবাইল ফোন নেই৷ আমাকেও এটা বন্ধ করতে হবে৷''

এই ইকো-ভিলেজের জনসংখ্যা প্রায় ১৫০৷ ২০ বছর আগে গ্রামের পত্তন হয়েছিল৷ মিশায়েল ভ্যুর্ফেল প্রায় ১১ বছর আগে হানোফার শহর থেকে এখানে এসেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা আর বিজ্ঞাপন আমার সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ ছিল৷ নিজেকে বড় অসহায় মনে হতো৷ জার্মানির মধ্যে থেকে, সব আইনকানুন মেনেও যে টেকসই পদ্ধতিতে বাঁচা যায় এবং জীবনটা উপভোগ করা যায়, সেটাই আমরা দেখানোর চেষ্টা করছি৷ অন্য জায়গার তুলনায় অনেক কম জ্বালানি ব্যবহার করেও আমরা ভালভাবে বেঁচে আছি৷''

বাড়ির দেওয়াল খড়ের গোলা দিয়ে ঢাকা, ফলে জ্বালানির সাশ্রয় হয়৷ বিদ্যুতের চাহিদার সিংহভাগ গ্রামেই উৎপাদন করা হয়৷ এমনকি সেই বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে পানিও গরম করা হয়৷ এই ইকো-ভিলেজ শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে না, গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় খাদ্যও নিজেরা উৎপাদন করার চেষ্টা করেন৷ অরগ্যানিক বীজ নিয়ে, কীটনাশক ছাড়াই চাষবাস করা হয়৷ খেত ও বাগানের কাজও মূলত হাত চালিয়ে করা হয়৷

নাডিন ফিশার এখানে মালির কাজ করেন৷ আগে তিনি বার্লিনে থাকতেন৷ নাডিন বলেন, ‘‘যন্ত্র ছাড়াই কাজ করা পরিবেশবান্ধব ও যুক্তিপূর্ণ৷ মাটি ও পরিবেশের জন্য তা অনেক ভালো৷ জমিতে পেট্রোল ও দুর্গন্ধ থাকে না৷ বসন্ত ও গ্রীষ্মে ফসল ফলে৷ মানুষ মাটির আরও কাছাকাছি থাকে৷''

কিয়ো ড্যোরার এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, যে প্রায় ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এমন কাজ করা বেশ কঠিন৷ এর জন্য শক্তি চাই৷ তবে দক্ষতার ছাপ চোখে পড়ে না৷ গ্রামবাসীরা প্রায়ই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কাজ করেন বলে মনে হতে পারে৷

পশুপালনের কোনো চিহ্ন চোখে পড়ছে না৷ কিছু গৃহপালিত আলপাকা দেখা যাচ্ছে৷ দৈনিক খাদ্যতালিকায় মাংস থাকে না৷ কারণ তা পরিবেশের জন্য বড্ড ক্ষতিকর৷ তাছাড়া গ্রামে ভিজান বা খাঁটি নিরামিষাশীদেরই আধিপত্য রয়েছে৷ প্রায় ৭০ শতাংশ শাকসবজি বাগানেই চাষ করা হয়৷ সেই অনুপাত বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে৷ কিয়ো ড্যোরার মনে করেন, তিনি সত্যি, বহুকাল এমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাননি৷

অবশিষ্ট খাবার কমপোস্ট করে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ সে সবও সম্পদ বটে৷ গ্রামবাসীরা মাত্রাতিরিক্ত ভোগের প্রবণতা ভালো চোখে দেখেন না৷ কিছু খাদ্যকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করা হয়৷ বাকি সব ছোটখাটো জিনিসপত্র বিলাসের উপকরণ৷ গ্রামের একটি মাত্র দোকানেই সবকিছু কিনতে যায়৷

শহরের সুপারমার্কেট সম্পর্কে আন্দ্রেয়াস শুবার্ট কোনো বিরূপ মন্তব্য করেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘এত রকম পণ্য রাখার মানে হয় না৷ আমি যখন বাইরে কেনাকাটা করতে যাই, তখন বিশাল বৈচিত্র্য ও বিপুল পরিমাণ পণ্য চোখে পড়ে৷ সামনে দাঁড়ালে বুঝতে পারি না, কোনটা কেনা উচিত বা সেই পণ্য আসলে কীরকম৷''

গ্রামের দোকানে পণ্যের দাম যথেষ্ট বেশি৷ অরগ্যানিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত পণ্য সুপারমার্কেটের তুলনায় অবশ্যই বেশি মূল্যবান৷ দোকানের এক কোণে কিন্তু সবকিছু বিনামূল্যে পাওয়া যায়৷ কোনো গ্রামবাসী অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড় রেখে গেলে অন্য কেউ তা নিয়ে যায়৷

বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের মধ্যেই কাজ করে উপার্জন করেন৷ কেউ পৌর দপ্তরে চাকরি করেন, কেউ মিস্ত্রী বা মালির কাজ করেন৷ আয়ের অর্থ গ্রামেই থেকে যায়৷ তবে এমন টেকসই জীবনযাত্রা জার্মানির সব মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে পড়ে না৷ এই কমিউনে যোগ দেবার প্রবেশমূল্য ১২,০০০ ইউরো৷ কারণ ইকো-ভিলেজ গড়ে তোলা বেশ ব্যয়বহুল কাজ৷

তাহলে সিবেন লিন্ডেন কি আদর্শ পরিবেশবান্ধব জগত? বাস্তবে কিন্তু কিছু আপোশ করতেই হয়৷ কিয়ো ড্যোরার বলেন, ‘‘অনেকে গাড়ি চালান, কখনো তাঁরা বিমানযাত্রাও করেন, প্লাস্টিক ব্যবহার করেন৷ তবে সচেতনতা, আরেকটু সচেতন জীবনযাত্রা, সেটাই বা কম কী!''

কিয়ো ড্যোরার/এসবি