1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওমিক্রন ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত পশ্চিমবঙ্গ?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ ডিসেম্বর ২০২১

কোভিডের জোড়া ঢেউয়ের ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি ভারত৷ এরইমধ্যে হাজির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন৷

https://p.dw.com/p/44p7U
Indiens Krankenhäuser aufgrund der COVID-19-Pandemie
ফাইল ছবিছবি: Debarchan Chatterjee/NurPhoto/picture alliance

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারগুলিকে লেখা চিঠিতে এ নিয়ে সতর্কবাণী দিয়েছে৷ তারা বলেছে, নয়া ভ্যারিয়েন্ট তিনগুণ বেশি সংক্রামক৷ তাই চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে৷ কোনো এলাকায় আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি  বিপদসীমায় পৌঁছে গেছে এমনটা ধরে নিতে বলে হয়েছে৷ তাছাড়া অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত হাসপাতালের আইসিইউ বেডের ৪০শতাংশ যদি পূর্ণ হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও বুঝতে হবে পরিস্থিতি বিপজ্জনক৷ 

কেন্দ্রের বিশেষ কমিটি ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে ভারতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে৷ তাই রাজ্যে রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার ওপর জোর কেন্দ্রীয় সরকারের৷

কলকাতাসহ দেশের আটটি মেট্রো শহরে পজিটিভিটি রেট এখন পাঁচ শতাংশের আশেপাশে৷ শুক্রবার কেন্দ্রের দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত ৩৫৮ জনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিনজন৷ এই সংখ্যা নগণ্য হলেও বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন চিকিৎসকরা৷

ওমিক্রন চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে জরুরি জিনোম সিকোয়েন্সিং অর্থাৎ ডিএনএর ক্রমবিন্যাস খতিয়ে দেখা হয়৷ এই পদ্ধতির মাধ্যমে জেনেটিক কোড পরপর সাজিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে কোথাও কোনো গলদ আছে কিনা৷ কিন্তু কলকাতাসহ দেশের বড় শহরগুলিতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার যথেষ্ট পরিকাঠামো আছে কি?

জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় কলকাতার অদূরে নদীয়ার কল্যাণীতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স নামক সংস্থায়৷ কিন্তু সেখানে চারটের মত জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে দিন তিনেক সময় লেগে যাচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে এই বিপুল জনসমষ্টিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে এত সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং কীভাবে সম্ভব হবে?

‘পরিকাঠামো না থাকা খুবই উদ্বেগের’

চিকিৎসক মহলে অবশ্য এ ব্যাপারে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷

চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কল্যাণীর সংস্থায় অত্যাধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে৷ সেখানে বড় সংখ্যায় জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্ভব বলে আমি জানি৷ নতুন ভ্যারিয়েন্ট-এর চরিত্র বুঝতে এই পদ্ধতি জরুরি৷’’

যদিও ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘‘গোড়ায় আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে সমস্যা হচ্ছিল৷ পরিকাঠামো ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে৷ এখন হাজার হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ কিন্তু সেভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং এখনই সম্ভব হবে না৷ যেখানে পরীক্ষা করাই এই রোগ নির্ণয়ের চাবিকাঠি, সেক্ষেত্রে পরিকাঠামো না থাকা খুবই উদ্বেগের৷’’

কীভাবে নয়া ভ্যারিয়েন্টের মোকাবিলা সম্ভব এমন প্রশ্নে চিকিৎসকরা বলছেন, ‘‘আমাদের হাতে চারটে হাতিয়ার রয়েছে৷ মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা ও ভ্যাকসিন দেওয়া৷’’

চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ব্যাপক টিকাকরণের ফলে ভাইরাস আটকাতে আমরা এখন অনেকটাই সক্ষম৷ নতুন ভ্যারিয়েন্টের পরিপ্রেক্ষিতে টিকা কতটা কাজ করবে সেটা পরে বোঝা যাবে৷ তবে বিশ্বজুড়ে টিকাকরণ না হলে অতিমারি রোখা যাবে না৷ সেক্ষেত্রে সব বিমানবন্দর একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে৷’’

তবে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘ভাইরাস নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্রমাগত মিউটেশন চালিয়ে যায়৷ সেটা বিদেশে হবে কিন্তু এদেশে হবে না, এভাবে বলা যায় না৷ তাই বিদেশ থেকে যাতায়াত বন্ধ করে সমস্যা মিটবে না৷’’

নয়া ভ্যারিয়েন্টের বিপদ যখন অপেক্ষারত তখন উৎসবের উদ্দীপনাও তুঙ্গে৷ বড়দিন ও বর্ষবরণে মেতে উঠেছে কলকাতা৷ রাজ্য সরকার বিধির কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করেছে উৎসবের জন্য৷ আর এতে বিপদ দেখছেন চিকিৎসকরা৷ এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব রাজ্যের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন৷

তবে চিকিৎসকরা আশার কথা শোনাচ্ছেন৷ ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘ডেল্টা থেকে তিনগুণ বেশি সংক্রামক ওমিক্রন৷ কিন্তু এর মারণ ক্ষমতা কম৷ তাই কোভিড বিধি মেনে চললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ উৎসবে গা ভাসালে মুশকিল৷ প্রয়োজনে বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজের উপর জোর দিতে হবে৷’‘

বুস্টার ডোজ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে