1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কম সময়ে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রির জন্য জার্মানি

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০

কারও স্বপ্ন থাকে ডাক্তার হওয়ার৷ কারও বা ডক্টরেট পাওয়ার৷ কিন্তু দুটোতেই সময় লাগে অনেক৷ তবে যদি কম সময়ে ডক্টর হওয়া যায় মন্দ কি? তবে সে ক্ষেত্রে ইউরোপ ও অ্যামেরিকার পিএইচডিতে অনেক ফারাক৷

https://p.dw.com/p/PKEN
ছবি: DFG

সেদিন ইন্টারনেটে একটা বিষয় নিয়ে অনেকের মন্তব্য দেখছিলাম৷ কেউ বলছে অ্যামেরিকায় পিএইচডি করতে অনেক সময় লাগে৷ সেই তুলনায় ইউরোপে সময় লাগে কম৷ কেউ বলছে অ্যামেরিকার পিএইচডির মান ভাল৷ কেউ বলছে ইউরোপের৷ যারা মন্তব্য করেছেন তাদের পরিচয় দেখে মনে হলো, যে যেখান থেকে পিএইচডি করেছেন তার পক্ষেই বলার চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু বিষয়টা আসলে সেরকম নয়৷

মোঃ আবু নাসের৷ বাংলাদেশের ছেলে৷ পিএইচডি করছেন অ্যামেরিকার সাদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি কার্বনডেলেতে৷ বিষয় রাজনৈতিক যোগাযোগ৷ অ্যামেরিকা ও ইউরোপের পিএইচডির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘অ্যামেরিকার পিএইচডি প্রোগ্রামটা এরকম যে, যখন কেউ পিএইচডি করতে যায়, তখন ধরে নেয়া হয়, গবেষণা কীভাবে করতে হয় তিনি সেটা শিখবেন৷ অন্যদিকে ইউরোপে আশা করা হয়, যিনি পিএইচডি করছেন তিনি গবেষণা করে মৌলিক কিছু বের করবেন, অর্থাৎ এমন কিছু তৈরি করবেন, যা জ্ঞানের একটি নতুন দিগন্ত তৈরি করবে৷''

আবু নাসের আরও বললেন, অ্যামেরিকায় ধরে নেয়া হয় একজন পিএইচডি প্রার্থী পিএইচডি অবস্থায় যে গবেষণা পদ্ধতি শিখলেন, কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সেটা কাজে লাগাবেন এবং তখন তিনি মৌলিক কিছু বের করবেন৷

এরপর দ্বিতীয় যে পার্থক্যের কথা আবু নাসের বললেন, সেটা হলো অ্যামেরিকায় পিএইচডি করতে সময় বেশি লাগে৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ‘‘অ্যামেরিকায় গবেষণা শুরুর আগে একজনকে বেশ কিছু কোর্স করতে হয়৷ তারপর সেগুলোর ওপর পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই কেবল গবেষণা শুরু করা যায়৷ কিন্তু ইউরোপে পিএইচডিতে ভর্তির পরপরই গবেষণার কাজ শুরু করা যায়৷''

Inder am Goethe-Institut Neu Delhi
ছবি: picture-alliance/dpa

সাধারণত কী ধরণের কোর্স করতে হয় এ ব্যাপারে আবু নাসের বললেন, যে যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করবেন, তাকে সে বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থিওরি বা তত্ত্ব এবং গবেষণা পদ্ধতির ওপর কোর্স করতে হয়৷ আর এই কারণে অ্যামেরিকায় চার বছরের কমে পিএইচডি শেষ করা সম্ভব হয় না বলে জানালেন তিনি - যেখানে ইউরোপে তিন বছরেই সেটা সম্ভব৷ আর বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সময় আরও বেশি লাগে বলে জানালেন আবু নাসের৷

এবার বাংলাদেশের আরেক ছেলে মারুফ মল্লিকের কথা৷ তিনি জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন৷ তিন বছরেই তিনি ডক্টর হতে পারবেন বলে আশা করছেন৷ গবেষণা শুরুর আগে তাঁকে কোনো কোর্স করতে হবে না বলেও জানালেন তিনি৷ পিএইচডির সুযোগ পেতে মারুফ প্রথমে একজন অধ্যাপক পছন্দ করে তাঁর কাছে গবেষণা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন৷ পরে কয়েকবার কথাও বলেছেন ঐ অধ্যাপকের সঙ্গে৷ মূলত গবেষণা প্রস্তাবটি অধ্যাপকের পছন্দ হওয়ায় মারুফ সুযোগ পেয়ে যান পিএইচডির৷

দুই বছরেই পিএইচডি!

তিন নয়, মাত্র দুই বছরেও পিএইচডি করা সম্ভব জার্মানিতে৷ এই পদ্ধতিকে বলে আরটিজি, মানে হলো রিসার্চ ট্রেইনিং গ্রুপ৷ জার্মান রিসার্চ ফাউন্ডেশন ডিএফজি এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে যাকে বলে গ্রাজুয়েট স্কুল বা কলেজ৷ বিষয়টা এরকম - কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করবে একদল শিক্ষার্থী৷ এবং সফলভাবে গবেষণা শেষে সবাইকে দেয়া হবে ডক্টরেট ডিগ্রি৷ এভাবে পিএইচডি শেষ হতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে তিন বছর৷ এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে ডিএফজির ওয়েবাসইটে৷

এবার পিএইচডির জন্য অর্থ জোগাড়ের ব্যাপারে আসা যাক৷ এ ব্যাপারে আবু নাসের বললেন, অ্যামেরিকায় যারা পিএইচডি করতে আসেন তাঁদের ৯০ শতাংশের বেশিই অ্যাসিস্টেন্টশিপ নিয়ে আসেন৷ অ্যাসিস্টেন্টশিপ মানে হলো কাজের সুযোগ৷ অর্থাৎ পিএইচডি প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজের সুযোগ পান৷ এসময় তাঁদের অনার্সের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয় বা কোনো অধ্যাপকের গবেষণায় সহায়তা করতে হয়৷ এর বিনিময়ে পিএইচডি প্রার্থীকে তাঁর পিএইচডির জন্য কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না৷ বরং কাজের জন্য তিনি কিছু অর্থ পান, যা দিয়ে থাকা-খাওয়ার কাজটি হয়ে যায়৷ আর মারুফ মল্লিক বললেন, জার্মানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা পিএইডি প্রার্থীদের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী