1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করাচিতে মরূদ্যান গড়ার উদ্যোগ

২ জানুয়ারি ২০২০

পরিবেশ দূষণের সমস্যা মেটাতে ঢাকা-কলকাতার মতো শহরে আরও গাছপালার প্রয়োজনের উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা৷ পাকিস্তানের করাচি শহরে এক টেকসই উদ্যোগের আওতায় ‘আর্বান ফরেস্ট' গড়ে তোলা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3VafA
Dürre in Thar Pakistan
ছবি: DW/R. Saeed

উপর থেকে করাচি শহরের দিকে নজর দিলে দুটি বিষয় চোখে পড়তে বাধ্য৷ পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এই শহরে যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে দূষণ এবং অসংখ্য কংক্রিটের বাড়িঘর দেখা যায়৷ প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যার এই শহরে মানুষের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ যথেষ্ট নয়৷ একই সঙ্গে আবাসিক এলাকায় পার্ক ও গাছের জন্য বরাদ্দ জমি কমে চলেছে৷ এনইডি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রো. নোমান আহমদ বলেন, ‘‘পুরানো পাড়াগুলিতে জনসংখ্যা ও শহুরে এলাকা অনুযায়ী পার্ক ও খোলা জায়গা রাখা কার্যত আবশ্যক ছিল৷ যেমন আমাদের পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, মেট্রোপলিটান এলাকার কমপক্ষে দশ শতাংশ জমি পার্ক ও খোলা জায়গার জন্য ধার্য করতে হবে৷ তার মধ্যে প্লেগ্রাউন্ডও রয়েছে৷''

বর্তমানে করাচি শহরে ১,৫৭৮টি ছোটবড় পার্ক রয়েছে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে কমপক্ষে আড়াই হাজার পার্ক থাকা উচিত৷ প্রোফেসর নোমানের মতে, বেশিরভাগ পার্কই হয় জবরদখল হয়ে গেছে অথবা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, ‘‘পুরানো পাড়ার পার্কগুলি জবরদখল করা হচ্ছে অথবা সেখানে নির্মাণের কাজ চলছে৷ নতুন এলাকায় নির্দিষ্ট অনুপাত রাখার কথা কেউ ভাবছে না৷ ফলে শহরে পার্ক ও খোলা জায়গার সংখ্যা কমে গেছে৷''

২০১৫ সালে প্রবল তাপপ্রবাহের কারণে করাচিতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ শহরাঞ্চলে গাছের অভাব এমন অস্বাভাবিক উত্তাপের অন্যতম কারণ৷ প্রায় দুই বছর পর শাহজাদ কুরেশি নামের এক বাসিন্দা ক্লিফটন এলাকায় ‘আর্বান ফরেস্ট' গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন৷ জাপানি বিশেষজ্ঞ আকিরা মিয়াওয়াকি-র পদ্ধতি অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ কম জায়গায় অনেক গাছ লাগিয়ে শহরের মধ্যেই ঘন জঙ্গল গড়ে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ শাহজাদ বলেন, ‘‘এই প্রণালীর সাফল্য হলো, এক বছর চার মাস পর সেখানে জঙ্গল দেখা যায়৷ আমরা স্থানীয় উদ্ভিদ, স্থানীয় জৈব বস্তু ব্যবহার করি৷ নির্দিষ্ট বিন্যাসে গাছ লাগাই৷ ফলে দ্রুত জঙ্গল হয়ে উঠবে৷''

শহরে ‘মরুদ্যান’

শাহজাদ কুরেশির মতে, অক্সিজেন উৎপাদন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেবার কাজে জঙ্গলের রূপে গাছের কার্যকারিতা প্রায় ৩০ গুণ বেড়ে যায়৷ প্রায় ৫০ রকমের স্থানীয় উদ্ভিদের কারণে আর্বান ফরেস্টে জীববৈচিত্র্য বেশ সমৃদ্ধ৷ শাহজাদ কুরেশি বলেন, ‘‘এই অশ্বত্থ আমাদের স্থানীয় গাছ৷ বিশাল আকার ধারণ করে, অনক হলুদ ফুল ধরে৷ ফুল ফুটলে মৌমাছি আসে৷ সেগুলি নেকটার নিয়ে গাছেই মৌচাক তৈরি করে৷ এই গাছের পাতা অনেকটা পান পাতার মতো৷ পোকারা পাতা খাচ্ছে বলে আমরা খুশি৷ একটি সমীক্ষা অনুযায়ী একটি গাছ মাটির উপরে ও নীচে আড়াই হাজারেরও বেশি প্রজাতির মদত করে৷''

শাহজাদ তাজা ও অরগ্যানিক শাকসবজির চাষ করে জঙ্গলকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো রাসায়নিক বা সার ব্যবহার করি না৷ আমরা বেগুন, লাউ, শসাসহ প্রায় ২৫ রকম শাকসবজি উৎপাদন করি৷ আমরা আশেপাশের মানুষের কাছে বিনামূল্যে সেগুলি বিতরণ করি৷ পাড়ার পার্কে শাকসবজি উৎপাদনে উৎসাহ দিতেই আমরা সেটা করি৷ নিজেদের বাসায়ও এমনটা করা যায়৷ তখন সবাই খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের আরও কাছে এসে পড়বে৷''

আর্বান ফরেস্টে পানি জমা রাখার জন্য একটি হ্রদও সৃষ্টি করা হয়েছে৷ করাচি শহরে পানির মারাত্মক অভাব রয়েছে৷ তাই গাছে পানি দিতে শাহজাদ এক টেকসই পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন৷ ওয়েটল্যান্ড ট্রিটমেন্ট চ্যানেল থেকে নিকাশি পানি কয়েক ধরনের গাছের শিকড়ের মধ্য দিয়ে চালিত হয়৷ এভাবে পানি পরিশোধন করা হয়৷ শাহজাদ কুরেশি জানান, ‘‘শুরু থেকেই আমরা নিকাশি পানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ এটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ, যা আমরা অপচয় করি৷ আমরা তা পুনর্ব্যবহার করে গাছে পানি দেবার উপযুক্ত করে তুলি৷ তবে পানীয় জল হিসেবে অবশ্যই নয়৷''

‘আর্বান ফরেস্ট' পদ্ধতি করাচি শহরে সবুজ এলাকার অভাব মেটাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে৷

ইরফান আফতব/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য